ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ শতাংশ শিক্ষক প্রথম গ্রেডে যাবেন

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৫ মার্চ ২০১৬

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ শতাংশ শিক্ষক প্রথম গ্রেডে যাবেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দাবির মুখে ২৫ শতাংশ অধ্যাপককে প্রথম গ্রেডে যাওয়ার সুযোগ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রিসভা কমিটি। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ‘বেতন বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। এদিকে নতুন স্কেলে বেতন পাওয়া নিয়ে সংশয় কাটল সারাদেশের এমপিওভুক্ত পাঁচ লাখ বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীর। চলতি মাসের বেতনই নতুন স্কেল অনুযায়ী পাচ্ছেন। নতুন স্কেল অনুযায়ী এমপিও দেয়ার বিষয়ে সরকারী আদেশ জারি হচ্ছে যে কোন সময়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবি নিয়ে মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের এখান থেকে এটা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে, সেখান থেকে অনুমোদন হওয়ার পর অন্যান্য প্রক্রিয়া শেষে এটা কার্যকর হবে। অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, প্রচলিত নিয়ম অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ অধ্যাপক পদে পদোন্নতি বা পদায়ন পাবেন। অধ্যাপক পদে চার বছর কোয়ালিফায়িং চাকরির মেয়াদ এবং স্বীকৃত জার্নালে গবেষণাধর্মী নতুন দুটি আর্টিকেল প্রকাশের শর্তে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে দ্বিতীয় গ্রেডপ্রাপ্ত হবেন। দ্বিতীয় গ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপকগণ মোট কোয়ালিফায়িং চাকরির মেয়াদ ন্যূনতম ২০ বছর এবং দ্বিতীয় গ্রেডের সীমায় পৌঁছানোর দুই বছর পর জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে প্রথম গ্রেডপ্রাপ্ত হবেন। তবে এই সংখ্যা মোট অধ্যাপকের শতকরা ২৫ ভাগের বেশি হবে না। পরে অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, এই মুহূর্তে মাত্র ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কিছু কিছু নীতিমালা (পদোন্নতিতে) অনুসরণ করে। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এসবের কিছুই অনুসরণ করে না। কিন্তু এই যে নীতিমালাটা হলো, এটা ৩৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রযোজ্য হবে। এর জন্য কোন আইন করার প্রয়োজন হলে সেটাও আমরা যথাযথভাবে করে ফেলব। এটা দেশের পুরো পদ্ধতিটাকে ইউনিফর্ম করা এবং মান নিশ্চিতে গুরুত্ব দেয়া, সেটা যাতে শক্তভাবে প্রতিপালিত হয়, সেদিকে নজর দেয়া হয়েছে। এদিকে কমিটির সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের ভবিষ্যতের চাওয়া হিসাবে গবেষণা ফান্ড, বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি এবং সুপার গ্রেডে যেতে সরকারের কাছে পদক্ষেপ চেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন। অর্থমন্ত্রী ও অর্থ সচিবের ব্রিফিংয়ের পর ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার জন্য কোন ফান্ডই নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০০ কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে মাত্র ৫০ লাখ টাকা গবেষণার জন্য। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা ও গবেষণা একসঙ্গে যায়। সেই জায়গায় অর্থমন্ত্রীর কাছে আমাদের অনুরোধ থাকবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণার জন্য যাতে ফান্ড পায়। কোন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন শিক্ষকের স্কলারশিপ নেই। তাদের আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিযোগিতা করে স্কলারশিপ পেতে হয়। গবেষণায় আমাদের উচ্চশিক্ষার জায়গা যদি শূন্য হয়ে যায়, তাহলে আমাদের উচ্চশিক্ষায় বন্ধ্যত্ব সৃষ্টি হবে। আমাদের তরুণ ব্রিলিয়ান্ট এই শিক্ষকরা যাতে বাইরে যেতে পারে, পড়াশোনা করতে পারে, সেজন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থা করা। সুপার গ্রেডের বিষয়টা আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে উপস্থাপন করব। আমরা এখানে আপনাদের সহযোগিতা চাই। ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, আমাদের সুপার গ্রেডের বিষয়টা আমরা বলেছি। এই বিষয়ক নিয়ম-নীতির বিষয় উল্লেখ করে অল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বরাবর একটা দরখাস্ত করব। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে আমাদের এই বিষয়টা সুরাহা করবে। এই বিষয়টিও রেজুলেশনে যোগ করার অনুরোধ করেন তিনি। মাকসুদ কামালের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিবেচনা করবেন না, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এটা সরকারের সিদ্ধান্ত হবে। মাকসুদ কামাল বলেন, আরেকটা বিষয় আপনাদের সুবিধার জন্য বলি, সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পদোন্নতির একটা ইউনিফর্ম নীতিমালা করে দেয়ার জন্য। আমরা চাই, মান নিশ্চিত হোক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের নিয়ম-কানুন শক্ত আছে, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহীতেও আছে। যাতে অধ্যাপকদেরও কোন গাফিলতি না থাকে। তিনি আরও বলেন, আমাদের আজকের যে অর্জন, এটা একটা মূল ধারার শিক্ষকদের জন্য আজীবনের জন্য হয়ে গেল। এতদিন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একেকটাতে একেক নিয়ম ছিল, এই বিষয়ে ধারাবাহিকতারও অভাব ছিল, আজকের এই সভার মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা গ্রেড-১ এ যাওয়ার জন্য আজীবনের একটা নিয়ম করে দিয়েছেন। এদিকে অবশেষে নতুন স্কেলে বেতন পাওয়া নিয়ে সংশয় কাটল সারাদেশের এমপিওভুক্ত পাঁচ লাখ বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীর। চলতি মাসের বেতনই নতুন স্কেল অনুযায়ী পাচ্ছেন। নতুন স্কেল অনুযায়ী এমপিও দেয়ার সরকারী আদেশ জারি হচ্ছে যে কোন সময়। অর্থ বিভাগ বেতন-ভাতা চূড়ান্ত করার পর বৃহস্পতিবার বৈঠক করে এ বিষয়ে সকল প্রক্রিয়া শেষ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী মাসে অর্থাৎ এপ্রিলে শিক্ষক-কর্মচারীরা মার্চের যে বেতন তুলবেন সেখানেই বর্ধিত টাকা পাবেন তারা। বকেয়া বেতন পাবেন আগামী দু’মাসেই। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন বলেছেন, বুধবারই একটি সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছি আমরা। সে হিসাবে চলতি মাসের বেতনটাই নতুন স্কেলে হবে। আদেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় জিও জারি করবে। সেটা দু-একদিনের মধ্যেই হয়ে যাবে। এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ সিদ্ধান্তের ফলে নতুন বেতন স্কেলের দাবিতে সারাদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলন কর্মসূচী বাতিল হচ্ছে বলে জানিয়েছে শিক্ষক সংগঠনগুলো। শিক্ষক নেতারা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণায় অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, আমলাদের ভেতরে থাকা একটি মহল সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এতদিন বিষয়টি নিয়ে খেলেছে। এই চক্র থেকে সাবধান থাকার জন্যও সরকারকে সতর্ক করেছেন শিক্ষক নেতারা। এর আগে বুধবারই এক সভায় বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের বিষয়ে ইতিবাচক কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যমান এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ প্রতি মাসে রাষ্ট্রের ব্যয় হয় ৬০০ কোটির কিছু বেশি টাকা। নতুন স্কেলে বেতন দেয়া হলে প্রতি মাসে আরও প্রায় ৪০০ কোটি টাকা লাগবে। নতুন স্কেল পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন হলে এমপিওভুক্ত কলেজের একজন প্রভাষকের মূল বেতন হবে ২২ হাজার টাকা (নবম গ্রেড)। বর্তমানে তারা ১১ হাজার টাকা পাচ্ছেন। সহকারী অধ্যাপকরা পাবেন ৩৫ হাজার ৫০০ টাকা (ষষ্ঠ গ্রেড)। এখন পাচ্ছেন ১৮ হাজার ৫০০ টাকা। অধ্যক্ষদের হবে প্রায় ৫০ হাজার টাকা। এখন পাচ্ছেন ২৫ হাজার ৭৫০ টাকা। আর বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের মূল বেতন হবে দশম গ্রেডে ১৬ হাজার টাকা। এখন পাচ্ছেন আট হাজার টাকা। জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষকের বেতন হবে ২২ হাজার টাকা (নবম গ্রেড)। এখন পান ১১ হাজার টাকা। জানুয়ারি মাস থেকে সব সরকারী কর্মচারী নতুন স্কেলে বেতন পেলেও অর্থ সঙ্কটের কারণে এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের নতুন পে স্কেলে বর্ধিত বেতন দিতে পারেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। চলতি মাসেও তারা গেল মাসের বেতন তুলেছেন আগের (সপ্তম) বেতন স্কেলে। গত ২০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী তারা নতুন জাতীয় বেতন স্কেলের অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে তাদের বেতন-ভাতা চূড়ান্ত না করায় এ বাবদ বর্ধিত কোন টাকা ছাড় হচ্ছিল না। গত ৬ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বিভাগে পাঠানো প্রস্তাবে বলা হয়, সারাদেশের এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের নতুন পে স্কেলে বকেয়া বর্ধিত বেতন দিতে অতিরিক্ত দুই হাজার ৪৬৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা প্রয়োজন। এর মধ্যে বেসরকারী স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার বেতন-ভাতা বাবদ দুই হাজার ৩৮৩ কোটি ২২ লাখ ৮২ হাজার ৯০০ টাকা এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য ৮৫ কোটি ৯৪ লাখ ৪৪ হাজার ১৯৪ টাকা বরাদ্দের প্রয়োজন। এ প্রস্তাব পর্যালোচনা করে অর্থ বিভাগ থেকে বর্ধিত বেতন-ভাতা ছাড়ের সম্মতি দেয়া হয়েছে। নতুন বেতন স্কেলে বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের ৪৩ দশমিক ৮১ ভাগ বেতন বেড়েছে। ফলে এ খাতে সরকারের ব্যয় বেড়েছে বছরে পাঁচ হাজার ৩৫৫ কোটি ২৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৫০ টাকা। এমপিওভুক্ত বেসরকারী শিক্ষক-কর্মচারীরা মূল বেতনের শতভাগ সরকার থেকে পেয়ে থাকেন। তবে এমপিওভুক্তি খাতে অর্থের অপচয় রোধে গত জুলাইয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে একটি যুগোপযোগী ও কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করতে বলা হয়েছে। এদিকে প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটি বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহাল করা, সরকারী প্রথম শ্রেণীর চাকরিতে যোগদানের ক্ষেত্রে ক্যাডার, নন-ক্যাডার বৈষম্যের সিদ্ধান্ত বাতিলসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে কয়েক মাস ধরে আন্দোলন করছে।
×