ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-জর্দান মুখোমুখি আজ

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ২৪ মার্চ ২০১৬

বাংলাদেশ-জর্দান মুখোমুখি আজ

রুমেল খান ॥ যুদ্ধে জেতার জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা, সদিচ্ছা, প্রয়োজনীয় রসদ, নিয়মিত অনুশীলন, দৃঢ় মনোবল, অমিত শক্তি ... কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য, এর কোনটাই নেই বাংলাদেশ দলের। হ্যাঁ, বলা হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের কথা। ২০১৮ ফিফা (রাশিয়া) বিশ্বকাপ ফুটবলের বাছাইপর্বের এ্যাওয়ে ম্যাচ (এশিয়া জোন, গ্রুপ ‘বি’) খেলতে এখন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ জর্দানের আম্মানে। আজ বৃহস্পতিবার স্বাগতিক জর্দানের বিপক্ষে ম্যাচ তাদের। ‘হোম’ ম্যাচে (৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫) জর্দানের কাছে ০-৪ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ। জর্দানের মুখোমুখি হওয়ার আগে গত ১৮ মার্চ আরব আমিরাতের সঙ্গে একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। স্বাগতিক দলের কাছে ১-৬ গোলে বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশ। বুধবার আম্মানের পোলো ফিল্ডে বাংলাদেশ দল বিকেলে শেষবারের মতো অনুশীলনে ঘাম ঝরায়। গ্রুপ ‘বি’ তে বাংলাদেশ দল এ পর্যন্ত খেলেছে ৭ ম্যাচ। ৬ ম্যাচেই হেরেছে। ড্র করেছে ১ ম্যাচে। ১ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচ দলের মধ্যে তলানিতে আছে তারা। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের ওপরে আছে তাজিকিস্তান (৫ পয়েন্ট), কিরগিজস্তান (১১ পয়েন্ট), জর্দান (১৩ পয়েন্ট) এবং অস্ট্রেলিয়া (১৫ পয়েন্ট)। এটাই হবে বাংলাদেশের শেষ গ্রুপ ম্যাচ। এই গ্রুপ ম্যাচের রেজাল্ট গণ্য হবে ২০১৯ এশিয়ান কাপ ফুটবলের বাছাইপর্বের ম্যাচ হিসেবেও। ইতোমধ্যেই এশিয়ান কাপের মূলপর্বে নাম লেখাতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। জর্দানের ফিফা র‌্যাঙ্কিং ৮২ আর বাংলাদেশের ১৭৭। জর্দান হচ্ছে সেই দল, যাদের দলে একাধিক ভাল ফুটবলার আছে। পেশাদার দল। গুড ফুটবল আইডিয়া আছে তাদের। দুই বছর আগে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্লে অফে দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারা উরুগুয়ের কাছে হেরে যায়। প্রতিপক্ষ শক্তির বিচারে অনেক এগিয়ে। তারপরও আজকের ম্যাচে ভাল ফলের প্রত্যাশা বাংলাদেশের। তবে সেটা জেতার নয়, সম্মানজনক হার বা ন্যূনতম ড্রয়ের! জাতীয় ফুটবল দলের অফিসিয়াল নিকনেম যে ১৯৭২ সাল থেকেই বেঙ্গল টাইগার্স, এটা বোধ করি দেশের অধিকাংশ ফুটবলপ্রেমীই জানেন না। তাদেরই বা দোষ কি? ফুটবল দল যদি ক্রমাগত জিতত বা সাফল্য পেত, তখন অবশ্যম্ভাবী উচ্চারিত হতো শব্দ দুটি। তখন তারা নিশ্চয়ই সেটা জানতেন। কিন্তু তা হয়নি। বরং জাতীয় ক্রিকেট দল আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটু জিততে শুরু করার পর থেকেই ফুটবল দলের নিকনেমের শেষে শব্দটি (টাইগার) ধার করে অহরহ ব্যবহৃত হতে হতে শব্দটি এখন ভালমতোই প্রতিষ্ঠিত! এই মাসের শুরুর দিকে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল থেকে এক বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলাম এবং উইঙ্গার জাহিদ হোসেন। ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ হন ডিফেন্ডার ইয়াসিন খান ও ফরোয়ার্ড সোহেল রানা। এছাড়া সতর্ক করা হয় গোলরক্ষক শহীদুল আলম সোহেল, ডিফেন্ডার ইয়ামিন মুন্না এবং আতিকুর রহমান মিশুকে। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ এবং বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে খারাপ পারফর্মেন্স, ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, মিথ্যাচার এবং শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্যই এই শাস্তি দেয়া হয় তাদের। শাস্তিপ্রাপ্ত চার এবং সতর্কিত বাকি তিন ... মোট সাত ফুটবলারই এখন জাতীয় দলের বাইরে। জাতীয় দল আগেই দুর্বল ছিল। তাদের না থাকাতে এখন আরও দুর্বলতর হলো! ফুটবলপ্রেমীদের অভিমত, গত তিন বছর ধরেই জাতীয় দলের খেলার মান ক্রমশ নিম্নগামী হচ্ছে। কাজেই এই দল নিয়ে কিছু হবে না। কোন আশা করে লাভ নেই। তাদের এমন ভাবনার পেছনে যুক্তিসঙ্গত কারণ আছে বৈকী! যে দলে খেলোয়াড়দের মধ্যে গ্রুপিং-কোন্দল, শৃঙ্খলা মেনে চলতে অনীহা, নৈতিক স্খলন, বিভিন্ন ক্লাব কর্তাদের কথায় পা বাঁচিয়ে খেলার প্রবণতা, দেশপ্রেম ও দায়বদ্ধতা, ফুটবলীয় স্কিল এবং সর্বোপরি মানসম্পন্ন কোচের চরম অভাব; সেই দলের উন্নতি কিভাবে হবে? তাছাড়া আরেকটি বড় সমস্যা হলোÑ পাইপলাইনে পর্যাপ্ত ও দক্ষ ফুটবলারের চরম সঙ্কট। এ কারণেই বিগত কয়েক বছর ধরে প্রত্যাশিত সাফল্য পাচ্ছে না জাতীয় ফুটবল দল। অথচ বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন প্রথম মেয়াদে দায়িত্ব নেয়ার পর সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। নতুন করে জেগে উঠেছিল দেশের ফুটবল। কিন্তু বর্তমানে ফুটবল অঙ্গনের প্রায় সবদিকেই আসছে নেতিবাচক খবর। সামনেই নির্বাচন। বাফুফের সবাই এখন দেশের ফুটবলের চেয়ে বরং বেশি ব্যস্ত নির্বাচন নিয়েই! অবশ্য নির্বাচন নিয়ে তাদের এই ব্যস্ততা দোষণীয় নয়। তবে দেশের ফুটবলের এই যে চরম অধোগতি, এর জন্য কি দায় এড়াতে পারেন তারা? সমস্যা যেমন আছে, তেমনি আছে এর সমাধানও আছে। দেশের ফুটবলের অবক্ষয় রোধে করণীয় সম্পর্কে ফুটবলপ্রেমীদের প্রেসক্রিপশনÑ ভাল ও দক্ষ কোচদের নিয়োগ করতে হবে বিভিন্ন বয়সভিত্তিক ফুটবল দলে, স্কুল-জেলা-পাইওনিয়ার ফুটবল আয়োজিত করতে হবে নিয়মিতভাবে, বিলুপ্ত হওয়া টুর্নামেন্টগুলো চালু করতে হবে, জাতীয় দলকে ঢেলে সাজাতে হবে, নিতে হবে নবীন-লড়াকু-প্রতিশ্রুতিশীল ফুটবলার, জাতীয় দলকে খেলাতে হবে প্রচুর ম্যাচ, পাইপলাইনে থাকতে হবে দক্ষ-পর্যাপ্ত ফুটবলার, মুলোৎপাটন করতে হবে পাতানো খেলার, ক্লাব ও জাতীয় দলে কড়া নিয়ম-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হবে, উন্নতি ঘটাতে হবে রেফারিংয়ের। এসব কিছুর যেদিন যথাযথভাবে সমন্বয় ঘটবে, সেদিন থেকেই উন্নতি হবে দেশের ফুটবলের। এখন দেখার বিষয়, আজ বাংলাদেশ কেমন খেলে জর্দানের সঙ্গে।
×