ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ছাত্রছাত্রী ছাড়াও হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণ

মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্র রুখতে হবে ॥ সোহ্্রাওয়ার্দীতে জাতীয় পতাকা উৎসবে আহ্বান

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৪ মার্চ ২০১৬

মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্র রুখতে হবে ॥ সোহ্্রাওয়ার্দীতে জাতীয় পতাকা উৎসবে আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত জাতীয় পতাকার মর্যাদা সমুন্নত রাখার শপথে বুধবার দেশজুড়ে পালিত হলো জাতীয় পতাকা উৎসব ২০১৬। পতাকা উৎসবের মূল অনুষ্ঠান হয় রাজধানীর সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে। রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণী-পেশার হাজারও মানুষ এতে অংশ নেয়। বাংলাদেশ পুলিশের সহযোগিতায় জাতীয় পতাকা উৎসব উদ্যাপন কমিটি দ্বিতীয়বারের মতো এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যৌথ আয়োজনে উৎসবে শপথবাক্য পাঠ করান আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি অধ্যাপক মাহফুজা খানম। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী দেশী-বিদেশী অপশক্তি এখনও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র রুখতে এবং একাত্তরের পরাজিত শক্তিকে চিরতরে বিনাশ করতে নতুন প্রজন্মকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ১৯৭১ এর ২৩ মার্চ মুক্তিকামী বাঙালীরা পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে উত্তোলন করে বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত লাল-সবুজ পতাকা। তরুণ প্রজন্মের দায়িত্ব থাকবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে লাল-সবুজের পতাকাকে সমুন্নত রাখা। দেশবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকা। এ জন্য দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তাঁরা। স্বাধীনতা আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন ১৯৭১-এর ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় প্রথমবারের মতো স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। ২৩ মার্চ ছিল পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবস। পরে একাত্তরের সেই দিনেও ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও ছাত্রলীগের ডাকে সারাদেশে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করা হয়। ঐতিহাসিক এই দিনটির স্মরণে বুধবার সকাল থেকে সোহরওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হতে থাকেন শিশু-কিশোর, শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ। প্রত্যেকের হাতে জাতীয় পতাকা, কেউবা পতাকা বেঁধেছেন মাথায়, লাল-সবুজে এঁকেছেন মুখম-লে, পরনেও লাল-সবুজ। আর মুখে বাংলাদেশের নামে সেøাগান। সকালে শিখা চিরন্তনের সামনে শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে উৎসবের সূচনা হয়। এরপর সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় জাতীয় পতাকা মিছিল। মিছিলের উদ্বোধন করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এ সময় প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার, পুলিশ মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক, বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস, পতাকা উৎসব উদ্যাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক, ডিএমপি কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়া উপস্থিত ছিলেন। পতাকা মিছিলে বেসরকারী ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের বহন করা ৮০ ফিট বাই ৪৮ ফিট মাপের বিশাল জাতীয় পতাকা সবার নজর কাড়ে। শিখা চিরন্তন থেকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে দিয়ে মৎস্য ভবন মোড় ঘুরে পুনরায় সোহ্রাওয়ার্দী পৌঁছে পতাকা মিছিল শেষ হয়। এরপর আলোচনা পর্বে অংশ নিয়ে প্রধান অতিথি মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার বলেন, কোমলমতি শিশুদের সামনে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য আজকের এই উৎসব। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করে নতুন ধারা সৃষ্টির নানা অপচেষ্টা হয়েছিল, তার বিপরীতে আমরা নতুন কিছু আনছি না, সঠিক ইতিহাস তুলে ধরারই চেষ্টা করছি। মন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কারও একার নয়। সারাদেশ থেকে আজ দাবি উঠেছে বাংলাদেশের সরকারী দল কিংবা বিরোধী দলে যারাই থাকুক, তাদের সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের দল হতে হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে পঠন-পাঠন ও মননে মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে সেজন্য তিনি শিক্ষকদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টির নানা ইতিহাস ধারণ করে আছে এই সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান। কিন্তু এখানে শিশুপার্ক করে নতুন প্রজন্মের কাছ থেকে সেই ইতিহাস মুছে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। এটা তাদের জন্য বুমেরাং হয়েছে। আমরা এখানে ৭ মার্চের ভাষণ, পাকিস্তানীদের আত্মসমর্পণের স্থানসহ মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনার স্থান তুলে ধরার কাজ করছি। এখানে শিশুপার্কও থাকবে, পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ধারণ করা সবকিছুই থাকবে। অনুষ্ঠানে সোনালি মানচিত্র খচিত পতাকা তৈরির ইতিহাস তুলে ধরেন এই পতাকার নকশাকার শিব নারায়ণ দাস। তিনি বলেন, অত্যাচার, নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার ঐকান্তিক ইচ্ছা থেকে উৎসারিত এই পতাকার ইতিহাস। পতাকা তৈরির আগেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে পাকিস্তানী ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য জাতি সংগ্রাম মুখর হয়ে উঠেছিল। পতাকার প্রাথমিক নকশায় মানচিত্র থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশ বললে এই বাংলা এবং পশ্চিমবাংলার বাংলাভাষী অঞ্চল বোঝাত। এ কারণে বিভ্রান্তি দূর করতে পতাকায় মানচিত্র দেয়া হয়েছিল। তখন এই সিদ্ধান্তও ছিল দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পতাকা থেকে মানচিত্র সরিয়ে নেয়া হবে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন উদ্যাপন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক। আলোচনা সভার একপর্যায়ে টেলিভিশন অনুষ্ঠান সিসিমপুরের পাপেট চরিত্র টুকটুকি, হালুম ও ইকরির পরিবেশনা শিশুদের মাঝে বাড়তি আনন্দ যোগ করে। দিনব্যাপী উৎসবে বিকেলের আয়োজনে ‘পতাকার জন্য গান’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। এতে মুক্তিযুদ্ধের সময় জনপ্রিয় হওয়া গানসহ বিভিন্ন দেশাত্মবোধক গান গেয়ে শোনান শিল্পীরা।
×