ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শেষ মুহূর্তে হুড়াহুড়ি করে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে সর্বনাশ ॥ ভারত এক রানে জয়ী

মুশফিক-মাহমুদুল্লাহর ভুলে হার বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৪ মার্চ ২০১৬

মুশফিক-মাহমুদুল্লাহর ভুলে হার বাংলাদেশের

মিথুন আশরাফ, ব্যাঙ্গালুরু থেকে ॥ কান্নাই শুধু বেঁচে থাকল। সবাই অবাক হয়ে রইল। এটা কিভাবে হলো! নিশ্চিত জেতা ম্যাচটি হেরে গেল বাংলাদেশ! সেই সঙ্গে টি২০ বিশ্বকাপ থেকেও বিদায় ঘটল। আর ভারত ১ রানে জিতে সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল করে নিল। জেতার সহজ সুযোগ ছিল। তা অর্জন করা গেল না। ১ রান নিলেই টাই হতো ম্যাচটি। সেটিই নিতে পারল না বাংলাদেশ। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে পুরো জাতি যেন শুধু অপলক চোখে তাকিয়ে থাকল। ভারত ক্রিকেটাররা উল্লাস করতে থাকল। আর বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা নিশ্চুপ সেই উল্লাস দেখতে থাকল। ব্যাঙ্গালুরুকে ‘আইটি’ সিটি বলা হয়। এক ক্লিকে সব হাজির হয়ে যায়! কী চাই, শুধু ইন্টারনেটে গিয়ে কিনে নিলেই বাসায় সব হাজির হয়ে যায়। কোথাও যাওয়ার গাড়ি থেকে শুরু করে খাবার, আসবাবপত্র, এমনকি যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও বাসায় পৌঁছে দেয়া হয়। সেই সিটিকে আবার বলা হয়, ‘গার্ডেন অব ইন্ডিয়া’ও। চারদিকে শুধু সবুজ গাছ আর গাছ। বাগান আর বাগান। সেই বাগানের সিটিতে টি২০ বিশ্বকাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচ খেলল বাংলাদেশ। তাসকিন আহমেদের বোলিং এ্যাকশন অবৈধ ঘোষণা করে আইসিসি। তাতে বাংলাদেশের সাজানো বাগান আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে। সেই বাগানে পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়ার পর এবার ভারতও হানা দিল। তছনছ করে দিল জয়ের স্বপ্ন। আগে ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়ে তা কাজে লাগানোর চেষ্টা করে ভারত। তবে শুরু থেকেই চাপে থাকে। শেষে গিয়ে সেই চাপ উতরায়। একদিকে বাংলাদেশ বোলাররা ঐক্যবদ্ধ নৈপুণ্য দেখান। আল আমিন ও মুস্তাফিজুর রহমান নেন ২ উইকেট। আরেকদিকে ভারত ব্যাটসম্যানরাও সমান তালেই এগিয়ে যান। সুরেশ রায়নার ৩০, বিরাট কোহলির ২৪, শেখর ধাওয়ানের ২৩ রানে ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৪৬ রান করে ফেলে ভারত। জবাবে ১ বলে জিততে ২ রান লাগে। সেটি নিতে পারেনি বাংলাদেশ। ২ উইকেট করে নেয়া অশ্বিন, জাদেজা, পান্ডের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৪৫ রান করে হারে বাংলাদেশ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের দ্বিগুণ আসন বিশিষ্ট ব্যাঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে দর্শকের ঢল দেখা গেল। শুধুই ভারতের জার্সি পরা দর্শক আর পতাকার ওড়াউড়ি। আওয়াজও আসল বার বার, ‘ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া’। সেই আওয়াজের মাঝে ‘বাংলাদেশ’ নামটি একটি বারের জন্যও শোনা গেল না। স্বাগতিক দল ভারত। তাদের দর্শক থাকবেই। স্টেডিয়ামে তাদের প্রাধান্যও থাকবে। তাই বলে এমন অবস্থা হবে! বাংলাদেশের যে গুটিকয়েক দর্শক ছিল, সমর্থক ছিল, এমন পরিস্থিতিতে কী আর তাদের গর্জন শোনা যাওয়ার উপায় আছে? প্রশ্নই ওঠে না। ‘ইন্ডিয়া, ইন্ডিয়া’ গর্জনের সুরে যেন ভারত ব্যাটসম্যানরাও আগ্রাসী হয়ে উঠলেন। গর্জন না থাকলেও বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরাও বরাবরের মতো উত্তাপ ছড়ালেন। জয়ের বন্দরেও পৌঁছে যাচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ ওভারে টানা দুই বলে যে মুশফিক ও মাহমুদুল্লাহ আউট হয়ে যান, সেখানেই সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়। এর পরও আশা থাকে। কিন্তু সেই আশা শুভাগত হোম ও মুস্তাফিজুর রহমান পূরণ করতে পারেননি। তামিম খেলায় বাংলাদেশের একাদশে একটি পরিবর্তন আনা হয়েছে। সাকলায়েন সজিবকে বসিয়ে রাখা হয়েছে। নাসির হোসেনকেতো এদিনও খেলানো হয়নি। সেই সঙ্গে ব্যাটিং অর্ডারেও এসেছে পরিবর্তন। ব্যর্থতার বোঝা ঘাড়ে থাকা সৌম্য সরকারকে ওপেনিং থেকে সরিয়ে মোহাম্মদ মিঠুনকে তামিমের সঙ্গী করা হয়। আগের ম্যাচে যে মিঠুন ২৩ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে সেই ঝলক আর দেখা গেল না। ১ রান করে দলের ১১ রানের সময় আউট হয়ে গেলেন। তাতেও চিন্তা বেশি ঘিরে ধরেনি। তামিম যে ব্যাটিংয়ে থাকেন। বাংলাদেশ ইনিংসের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই আশিষ নেহরার সঙ্গে গায়ে ঘেষা লেগে মাথায় ব্যথা পেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তামিম। তখন আবার চিন্তা ঘিরে ধরে। যদি আর ব্যাটিং করতে না পারেন তামিম। তবে একটু সময় নিয়ে ঠিকই সেরে ওঠেন বাংলাদেশ ওপেনার। যখন প্রথম ওভারের শেষ বলে ‘নতুন জীবন’ পান, ভারত বোলারদের বারোটা বাজিয়ে ছাড়েন। মিঠুনের আউটের পর সাব্বির ব্যাট হাতে নেমে অশ্বিনের একটি বলে যে ছক্কা হাঁকান, সেখানেই যেন দলের ব্যাটসম্যানদের মানসিকতা চাঙ্গা হয়ে ওঠে। তৃতীয় ওভারে অশ্বিনের করা চতুর্থ বলে আরেকবার ‘নতুন জীবন’ পান তামিম। তামিমের ক্যাচটি ধরতে পারেননি বুমরাহ। তখন তামিমের স্কোরবোর্ডে ১৫ রান থাকে। সেই যে তামিম ধুমধারাক্কা ব্যাটিং শুরু করেন। ষষ্ঠ ওভারে বুমরাহর করা ওভারে চারটি চার হাঁকান। পাওয়ার প্লেতে ৪৫ রান করে বাংলাদেশ। যা ভারতের চেয়ে ৩ রান বেশি। যেভাবে খেলতে থাকে বাংলাদেশ, তাতে ভারতের ব্যাটিংয়ের চেয়েও এগিয়ে থাকে। কিন্তু অষ্টম ওভারে গিয়েই ঘটে অঘটন। এগিয়ে গিয়ে জাদেজার বলে বাউন্ডারি মারার চেষ্টা করেন তামিম। কিন্তু সফল হননি। ধোনি স্ট্যাম্পিং করে দেন তামিমকে (৩৫)। তবে সাব্বির ঠিকই মারমুখী ব্যাটিংই করতে থাকেন। নবম ওভারে পান্ডের দুটি বলে বাউন্ডারি হাঁকান সাব্বির। পরের ওভারেই ঘটে আরেকটি বিপত্তি। এত সুন্দর খেলতে থাকা সাব্বির ভুল করে আউট হয়ে যান। রায়নার বলটি ছিল ওয়াইড। সাব্বির শট করতে গিয়ে ঘুরে যান। এক পা ক্রিজ থেকে উঠে যায়। আরেক পা উঠে যখন মাটি স্পর্শ করবে এর আগেই স্ট্যাম্পিং করে দেন ধোনি। অসাধারণভাবে সাব্বিরকে (২৬) স্ট্যাম্পিং করে দিয়ে বাংলাদেশকে বিপদেও ফেলে দেন ভারত অধিনায়ক। এর পরও আশা থাকে। সাকিব, মাহমুদুল্লাহ, মুশফিক যে থাকেন। চমক দেখিয়ে দেন মাশরাফি। ব্যাট হাতে নেমে যান। নেমেই রায়নার একটি বলে ছক্কা হাঁকান। ১০ ওভারে বাংলাদেশ স্কোরবোর্ডে ৭৭ রান যোগ করে। তখন মনে হচ্ছিল, জেতা তো যেতেই পারে। ৬০ বলে জিততে যে ৭০ রানের দরকার থাকে। টি২০তে খুব সম্ভব, যদি একজন ব্যাটসম্যান দাঁড়িয়ে যান। এরই মধ্যে ৮ রানে থাকা সাকিবের ক্যাচ ফেলে দেন অশ্বিন। মনে হয়, সাকিবই তাহলে নায়ক হতে চলেছেন। পান্ডেকে ছক্কা মেরে সেই আভাসও দেন। জাদেজার বলও গ্যালারিতে পাঠান সাকিব। এর আগেই ৮৭ রানের সময় মাশরাফি (৬) আউট হয়ে যান। ব্যাট হাতে নেমেই যে ছক্কা হাঁকান, সেটিই পুঁজি হয়ে থাকে মাশরাফির। সাকিবের ক্যাচ যে অশ্বিন মিস করেন, তা নিজেই পুষিয়ে দেন। সাকিবকে (২২) আউট করে দেন। প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন সাকিব। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের ধূলিসাত স্বপ্নও সঙ্গে করে যেন নিয়ে যান। ১৫ ওভারের প্রথম বলে গিয়ে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে ১০০ রান জমা হয়। তখন জিততে আর লাগে ৪৭ রান। বল হাতে থাকে ৩৫টি। ব্যাট হাতে নামেন সৌম্য। তার সঙ্গে থাকেন মাহমুদুল্লাহ। এ দুজনের ওপরই তখন ভরসা করা হয়। মাহমুদুল্লাহ বোঝেন, এমন সময়ে শট খেলার বিকল্প নেই। তাই সৌম্যকেই সব সময় এগিয়ে দেন। সৌম্যও জাদেজার বলে ছক্কা হাঁকিয়ে রানকে এগিয়ে দেন। ২৪ বলে জিততে শেষে ৩৪ রান লাগে। যখন ১১৯ রানে থাকে বাংলাদেশ, এমন সময়ে ১৫ রানে থাকা সৌম্য ক্যাচ আউট হওয়া থেকে বেচে যান। মনে হলো, এটি ভাল লক্ষণই। ১৮ বলে জিততে তখন ২৭ রান লাগে। যা করার ১৮তম ওভারেই করতে হবে। কিন্তু নেহরার হাতে বল তুলে দেন ধোনি। তাতে নেহরা বাজিমাত করেন। সৌম্যকে (২১) আউট করে দেন এবং ওভারটিতে ১০ রান দেন। এ ওভারের শেষ বলে যে কাভার দিয়ে দুর্দান্ত বাউন্ডারি হাঁকান মাহমুদুল্লাহ, তাতে ১২ বলে জিততে ১৭ রান বাকি থাকে বাংলাদেশের। ১৯তম ওভারে মাহমুদুল্লাহ-মুশফিক মিলে দুর্দান্ত সব শট খেলেন, অনেক ঝুঁকি নিয়ে রান নেয়ার পরও ৬ বলে ৬ রানের বেশি হয়নি। শেষ ওভারে জিততে ১১ রান লাগে। পান্ডে আসেন বোলিংয়ে। প্রথম বলে ১ রান হয়। লাগে আর ১০ রান। হাতে আছে ৫ বল। এমন সময় সে কী উত্তেজনা। কী হয়, কী হয়; সবার দৃষ্টি সেদিকে। ভারত ক্রিকেটাররা যেন কাঁপতে শুরু করে দেয়। বার বার শুধু আলোচনা করেন। দ্বিতীয় বলেই এক্সট্রা কাভার দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দেন মুশফিক। যার গায়ে এখন ব্যর্থতার লোগো লেগে গেছে। তিনিই কিনা এমন দুর্দান্ত ব্যাটিং করে দিলেন। তখন ৪ বলে জিততে ৬ রান লাগে। আবারও বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দিলেন মুশফিক। ৩ বলে জিততে তখন ২ রান লাগে। বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে আউট হয়ে যান মুশফিক (১১)। তখন ২ বলে জিততে লাগে ২ রান। মাহমুদুল্লাহও (১৮) একইভাবে আউট হয়ে গেলেন! কী সুন্দর জেতার সম্ভাবনা। তার যেন অপমৃত্যু ঘটার আশঙ্কা তৈরি হয়ে যায়। ১ বলে জিততে তখন ২ রান লাগে। শুভাগত হোম থাকেন ব্যাটিংয়ে। হ্যাটট্রিক করার সুযোগও থাকে পান্ডের। এক রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে যান মুস্তাফিজুর রহমান। সেখানে জয়ের অপমৃত্যু সত্যিই ঘটে যায়। মাহমুদুল্লাহ ও মুশফিক জয়ের এত কাছে এনে দিয়েও যে টানা দুই বলে দুজন আউট হয়ে যান, সেখানেই ম্যাচও হার হয়ে যায়। তাদের যেন লক্ষ্যই ছিল একটা। বাংলাদেশের ‘কাটার মাস্টার’ মুস্তাফিজুর রহমানকে নিয়ে যেহেতু একটা ভীতি আছে, সেই ভীতি মুহূর্তেই দূর করে দিতে হবে। এ জন্য কী করতে হবে? এলোমেলো ব্যাটিং করতে হবে। সেই ব্যাটিংয়ে মুস্তাফিজের বলগুলোকে ছাত্তু বানিয়ে বাউন্ডারির পর বাউন্ডারি হাঁকাতে পারলেই হলো। অন্য বোলাররাও তাতে ভীত হয়ে উঠবে। ভারতের নিয়ন্ত্রণে শুরুতেই চলে যাবে ম্যাচ। সে রকম পরিকল্পনায় এগিয়েও গেছে ভারত। বলতে গেলে সাফল্যও পেয়েছে। পাওয়ার প্লেতেই ৪২ রান স্কোরবোর্ডে জমা করে ফেলে ভারত। এর মধ্যে ষষ্ঠ ওভারের শেষ বলে একটি উইকেটেরও পতন ঘটে। রোহিত শর্মাকে (১৮) আউট করে দেন মুস্তাফিজ। তবে এর আগে একই ওভারের দ্বিতীয় ও চতুর্থ বলে ছক্কা হাঁকান রোহিত। মনে হচ্ছিল, মুস্তাফিজের বারোটা বেজে যাবে। শেষ পর্যন্ত রোহিতকে আউট করলেন মুস্তাফিজই। তবে এর আগে রোহিত যখন ৮ রানে, তখনই তাকে আউট করার সুযোগ মিলেছিল। বল হাতে তুলে নিয়ে নিজের প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই ‘রিটার্ন ক্যাচ’ নিতে পারতেন সাকিব। তার স্পিন ঘূর্ণিতে বোকা বনে যান রোহিত। ব্যাটে লেগে হাতের একেবারে কাছে পরা বলটি ধরতে পারেননি সাকিব। তবে খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি। নিজের দ্বিতীয় ওভারের ষষ্ঠ বলেই শেখর ধাওয়ানকে (২৩) এলবিডব্লিউ করে সাজঘরে ফেরান। ৪৫ রানেই ২ উইকেট হারিয়ে ভারতও বিপদ সঙ্কেতের আভাস পায়। এখান থেকেই যেন শুরু হয়ে যায় ভারতের ব্যাটিং তা-ব। বিরাট কোহলি ও সুরেশ রায়না মিলে এগিয়ে যেতে থাকেন। যখন ৬০ রান হয়, এমন সময়ে ১১ রানে থাকা কোহলিকে আউট করেই দিয়েছিলেন আল আমিন। কিন্তু ব্যালেন্স হারিয়ে ফেলে ‘রিটার্ন ক্যাচটি’ এক হাতে ধরার চেষ্টা করেও পারেননি। যদি এমন সময়ে কোহলি আউট হয়ে যেতেন, ভারত ছন্নছাড়াই হয়ে পড়ত। কিন্তু তা তো হলোই না। উল্টো প্রায় ৬ বছর আগে ৩৩ ম্যাচ আগে অর্ধশতক করা রায়না বিধ্বংসী হয়ে উঠলেন। ১১তম ওভারে আল আমিনের করা চতুর্থ বলে স্কয়ার লেগ ও পঞ্চম বলে মিড উইকেট দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে দিলেন। ৬ ওভারের পর থেকে পরের চার ওভারে মাত্র ১৭ রান যোগ করে ভারত ব্যাটসম্যানরা। ১০ ওভারে ভারতের স্কোরবোর্ডে ৫৯ রান থাকে। কী চাপেই না থাকে ভারত, তা স্কোরবোর্ড দেখলেই পরিষ্কার হয়ে যায়। কিন্তু ১১ ওভারেই হু হু করে রান বেড়ে যায়। ৭৩ রান হয়ে যায়। ১৩ ওভারে গিয়ে ৮৪ রান হয় ভারতের। ১৪ ওভারে গিয়ে কী মারমুখী খেলাই না শুরু করেন কোহলি ও রায়না। এক ওভারেই ১৭ রান হয়ে যায়। রায়না বাউন্ডারি হাঁকান। কোহলি ছক্কা হাঁকান। তবে ২৪ রান করে আউটও হয়ে যান। এরপর হার্দিক পান্ডে ব্যাট হাতে নেমেই ছক্কা হাঁকান। ভারতের স্কোরবোর্ডে শত রানও হয়ে যায়। হাতে ৬ ওভার থাকে। এমন সময় তো রানের গতি বাড়াতে ব্যাটসম্যানরা ধুন্ধুমার ব্যাটিং শুরু করবেনই। তা করতে গিয়েই কোহলি আউট হন। দুর্দান্ত বল করতে থাকা সাকিবকেও দুটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দেন পান্ডে। কোহলি আউটের পর যুবরাজকে না নামিয়ে পান্ডেকে ব্যাট হাতে দিয়ে যে উচিত কাজই করেছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি, তার প্রমাণও মেলে। তবে ১৬তম ওভারেই আল আমিনের বোলিং তা-ব দেখা যায়। যখন ১৫ ওভারে ১১২ রান করে চাপে পড়ে থাকে ভারত, এমন সময়ে প্রথম ও দ্বিতীয় বলে রায়না (৩০) ও সৌম্য সরকারের দুর্দান্ত ক্যাচ ধরায় পান্ডেকে (১৫) আউট করে দিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগান আল আমিন। কিন্তু হ্যাটট্রিক আর করতে পারেন না। তবে ভারতের বারোটা বাজিয়ে দেন। ১৭ রানের মধ্যে তিন উইকেট হারিয়ে ভারতও বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে যায়। ১১৭ রান যখন থাকে, এমন সময় যুবরাজ সিংকে (৩) সাজঘরে ফেরান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। প্রথম ওভার করতে এসেই উইকেট শিকার করেন। ভারত যেন ‘মহাবিপদে’ পড়ে যায়। এমন মুহূর্তে মুস্তাফিজের হাতে বল তুলে দেন মাশরাফি। যদি কোনভাবে ভারতকে আরও চেপে ধরা যায়। মুস্তাফিজ তা করলেনও। ১৮তম ওভারে মুস্তাফিজের করা পঞ্চম বলে ১ রান নিয়ে টি২০ ক্যারিয়ারে ১০০০ হাজার রান পূরণ করেন ধোনি। তবে মুস্তাফিজ কিন্তু ওভারটিতে মাত্র ৫ রান দেন। তখন ভারত সমর্থকদের মনে যেন ভারত ক্রিকেটে ২৩ মার্চের করুণ দুটি দিনের কথাই উঁকিঝুঁকি দেয়। এই দিনে ২০০৩ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে যে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে শিরোপা হাতছাড়া হয়েছিল ভারতের। আর একই দিনে ২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে যে বাংলাদেশের কাছে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় ঘটেছিল ভারতের। মুস্তাফিজ এতটাই ভাল বল করেন যে জয়ের স্বপ্ন যেন দেখা হয়ে যায়। সেই স্বপ্নে পরের ওভারেই আঘাত আসে। আল আমিন বল করতে এসে ১ ওভারেই ১৪ রান দিয়ে দেন! রবীন্দ্র জাদেজা টানা দুই বলে দুটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দেন। ভারতের স্কোরবোর্ডে ১৩৭ রান যোগ হয়ে যায়। শেষ ওভারটি করতে আসেন মুস্তাফিজ। প্রথম বলেই জাদেজাকে (১২) বোল্ড করে দেন। এই ওভারে একটিই মাত্র বাউন্ডারি হাঁকাতে পারেন রবীচন্দ্রন অশ্বিন। তবে উইকেটও নেন মুস্তাফিজ। রান দেন ৯। তাতে করে ১৪৬ রান হয়ে যায় ভারতের। ১৫ ওভারে ১১২ রান করে ভারত। সেখানে পরের ৫ ওভারে ৩৪ রান যোগ করে। তাতেই এগিয়ে যায় ধোনির দল। শুরুর চাপ শেষে গিয়ে সামাল দেয়। তাতেও জয় মিল ছিল না। ভাগ্য যেন তাদের সহায় হয়ে যায় এদিন। তাই জয় মিলে। আর বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা যেন ২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে হেরে যে কেঁদেছিল, সে রকম একটি দিনের দেখাই পায়। জয়ের অপমৃত্যুই যে ঘটল।
×