ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, এখন পর্যন্ত ৪৭ লাখ হেক্টরে রোপণ সম্পন্ন;###;সার, কীটনাশক ও সেচের কোন সঙ্কট নেই

টার্গেট ২ কোটি টন ॥ বোরো মৌসুমে সবুজে ছেয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলী জমি

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৪ মার্চ ২০১৬

টার্গেট ২ কোটি টন ॥ বোরো মৌসুমে সবুজে ছেয়ে গেছে বিস্তীর্ণ ফসলী জমি

এমদাদুল হক তুহিন ॥ যতদূর চোখ যায়Ñসবুজ আর সবুজ। মনোমুগ্ধকর সবুজের এই অবতারণা চলতি বোরো মৌসুমকে কেন্দ্র করে। ফসলি মাঠে চলছে শেষ সময়ের সার ও কীটনাশক প্রয়োগ। কোন কোন মাঠে আগাছা পরিষ্কারের কাজও চলছে সমান তালে। রয়েছে পর্যাপ্ত পানিও। জানা গেছে, ইতোমধ্যে ধানের গোছাগুলো বেশ পোক্ত হয়েছে। দেড় মাসের মাথায় কোথাও কোথাও বের হতে শুরু করেছে বোরো। সারাদেশে সার ও কীটনাশকের সঙ্কট না থাকায় পোক্ত হচ্ছে বোরোর গোছা আর পর্যাপ্ত পানির সুযোগে মাঠগুলো হয়ে উঠছে চোখ ধাঁধানো সবুজ। উপযুক্ত পরিচর্যা ও প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণের সহজলভ্যতায় পুরোদমে এগিয়ে চলা চলতি বোরো মৌসুমে ফসলি মাঠ যেন এখন একটু বেশিই সবুজ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, সারাদেশে চলতি (২০১৫-’১৬) বোরো মৌসুমে ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এখন পর্যন্ত ৪৭ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। শতাংশিক হিসাবে আবাদের অগ্রগতি ৯৭ শতাংশ। এ বছর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২ কোটি মেট্রিক টন। অন্যদিকে, গত মৌসুমে ৪৭ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবাদ হয়েছিল ৪৮ লাখ ৩৭ হাজার হেক্টরে। শতাংশিক হিসাবে গত বছর আবাদের হার ছিল ১০১ দশমিক ১৯ শতাংশ। চলতি বোরো মৌসুমে সবুজে ছেয়ে গেছে বিস্তীর্ণ মাঠ। জানা গেছে, প্রতিটি এলাকায় ইতোমধ্যে বেশ পোক্ত হয়েছে ধানের গোছা। ফসলি জমিতে চলছে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ। কোন কোন জমিতে চলছে আগাছা পরিষ্কারের কাজ। এছাড়া প্রতিটি মাঠেই পর্যাপ্ত পানি সরবরাহের দিকেও কৃষকের মনোযোগ বেশ। ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় কৃষিকাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত মোঃ মোস্তফা। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, ‘বোরোর আবাদ শুরু হয়েছে প্রায় দেড় মাস হলো। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের কারণে সেচ ব্যবস্থা বেশ ভাল। জমিতে পানির সঙ্কট নেই। এলাকার সবার জমিতেই কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়েছে। পোকামাকড়ের তেমন কোন আক্রমণ নেই। ইতোমধ্যে ধানের গোছাগুলোও বেশ পোক্ত হয়েছে। ধান বের হবে হবে।’ বিরূপ প্রাকৃতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে চলতি মৌসুমে ফলন আশানুরূপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি। একই অবস্থা নরসিংদীতেও। ওই জেলার মনোহরদী উপজেলার চন্দপুর গ্রামের কৃষক মোঃ শহীদুল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন, ‘পানি, সার ও কীটনাশক নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা হয়নি, সব কিছুই পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ফলনকাজ ইতিবাচক।’ ধানের গোছাগুলো বেশ পোক্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, কোন কোন জমিতে বোরো ধান ইতোমধ্যে বের হতে শুরু করেছে। অনুরূপ অবস্থার কথা জানান কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার হরশী গ্রামের কৃষক হিমেল। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদে সার-কীটনাশক ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহের কারণে পানি নিয়ে কোন সঙ্কট দেখা না দেয়ায় পুরো দমে এগিয়ে চলছে বোরোর পরিচর্যা। জানা গেছে, খাল-বিল, নদ-নদী কিংবা ডিপ টিউবওয়েলের পানির সাহায্যে বোরো ধানের আবাদ সম্পন্ন হয়ে থাকে। বিদ্যুতের ঘাটতি না থাকায় কোন রকম সমস্যা ছাড়াই চলছে সেচ কাজ, পুরোদমে এগিয়ে চলছে বোরো মৌসুমের আবাদ। বিদ্যুতের সঙ্কট না থাকার পরও কোথাও কোথাও অব্যবস্থাপনার কারণে সেচকাজে বিঘœ হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাদের অভিযোগ, শুধু অব্যবস্থাপনার কারণে অঞ্চলভেদে বিদ্যুতের সঙ্কটের কারণে সেচ ব্যবস্থা কিছুটা বিঘœ হচ্ছে। তবে সার নিয়ে কোন অভিযোগ নেই। কয়েক কৃষক জানান, সঠিক পন্থায় সারের বিলি-বণ্টনের কারণে আগের সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে। বোরো মৌসুমের সময় কৃষিঋণের দিকেও সরকারের অধিক মনোনিবেশ দাবি করেন তারা। দক্ষিণাঞ্চলে বাড়ছে হাইব্রিড চাষ ॥ ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয়ে ধারাবাহিক অব্যাহত লোকসানের মুখে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকরা চলতি মৌসুমে হাইব্রিড বোরো আবাদে ঝুঁকছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বরিশাল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চলতি বোরো মৌসুমে বরিশাল বিভাগে ২৬ হাজার ৪৫৯ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড জাতের বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এই লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার হেক্টর। তবে এ বছর ৬ হাজার ৪৫৯ হেক্টর পরিমাণ বেশি জমিতে হাইব্রিড আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়। জানা গেছে, ইতোমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার প্রায় পুরোটাই অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। কৃষিবিদদের মতে, সাধারণ বোরো ও হাইব্রিড বোরো চাষাবাদের পদ্ধতি প্রায় একই। কেবল উপযুক্ত সময়ে রোপণ ও নিয়ম মেনে নিখুঁত পরিচর্যা করতে পারলে হাইব্রিড বোরোতে চারগুণ বেশি উৎপাদন করা সম্ভব। ফলে বিভাগজুড়েই বৃদ্ধি পেয়েছে এ জাতের বোরো আবাদের পরিমাণ। বরিশাল বিভাগে আবাদ হওয়া হাইব্রিডের মধ্যে রয়েছে হীরা, এসএলএইচ, এসিআই, ময়না, সাথী, ফলন, টিয়া, অবতাম, গোল্ড, সোনার বাংলা, আলোড়ন নামের জাতের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি জাত। সামগ্রিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবদুহু জনকণ্ঠকে বলেন, চলতি মৌসুমে গত বছরের বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অধিদফতর এখন পর্যন্ত পুরোপুরি সফল। অগ্রগতি ৯৭ শতাংশ হলেও প্রকৃত আবাদের হার শতক ছাড়িয়ে যাবে, মাঠপর্যায় থেকে কোন নেতিবাচক খবর পাওয়া যায়নি। সার-কীটনাশক ও সেচ ব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাবের কারণে এ বছরও বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
×