ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অত্যাবশ্যক হলেও বিশুদ্ধ পানির যোগান কমছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৩ মার্চ ২০১৬

অত্যাবশ্যক হলেও বিশুদ্ধ পানির যোগান কমছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মানুষের সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবন ধারণের জন্য বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার একান্ত আবশ্যক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশুদ্ধ পানির অভাবেই মানবদেহে প্রায় ৭০ ভাগ রোগের জন্ম হয়। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায়, নদীর পানিতে দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ও বিষাক্ত ভারি ধাতব পদার্থের উপস্থিতির কারণে বিশুদ্ধ পানি যোগান দিন দিন সীমিত হয়ে পড়ছে। দূষিত পানির অভাবে ছড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ। দূষিত পানি ব্যবহারের ফলে হেপাটাইটিসসহ টাইফয়েড, ডায়ারিয়া, কলেরা, আমাশয় জন্ডিসের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়তে পারে। জটিলরোগসহ মারণব্যাধি ক্যান্সারেও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এর অভাবে। তাদের মতে, বিশুদ্ধ পানির নিশ্চিয়তা না পেলে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকিতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঢাকা শহরের প্রায় দেড় কোটি লোকের বসবাস। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় ঢাকাতে প্রতিনিয়ত মানুষের চাপ বেড়েই চলেছে। ফলে অন্যান্য চাহিদার পাশাপাশি এ বিশাল জনসংখ্যার জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ঢাকা ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা শহরের পানি চাহিদা মেটাতে ৮৬ ভাগ পানি ভূগর্ভস্থ থেকে তোলা হচ্ছে। নদীর পানি এত পরিমাণ দূষিত হয়ে পড়ছে যে এই পানি বিশুদ্ধ করে সাপ্লাই করা তাদের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। এ ছাড়াও সম্প্রতি গবেষণায় নদীর পানিতে ভারি ধাতব পদার্থের উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে। ফলে শোধন করে পানি বিশুদ্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে ক্রমাগত। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর অস্বাভাবিকভাবে নিচে নেমে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে এভাবে ভূগর্ভ পানির ওপর চাপ বৃদ্ধি পেলে আগামীতে ভূগর্ভস্থ পানিতে দূষণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ ছাড়াও পানি বেশি মাত্রায় নিচে নেমে গেলে আগামীতে চাহিদার প্রয়োজনীয় পানিও সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীবাসীর পানি চাহিদা রয়েছে ২২০ থেকে ২৩০ লিটার। ঢাকা ওয়াসা এই পানি সরবরাহ করছে। তবে ওয়াসার এ পানিতে মাত্রারিক্ত দুর্গন্ধ ও ময়লা আবর্জনা থাকার অভিযোগ রাজধানীবাসীর দীর্ঘদিনের। তারা অভিযোগ করছেন দীর্ঘ সময় ধরে ফুটিয়ে এসব পানি দুর্গন্ধমুক্ত করে পানযোগ্য করা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ওয়াসার সরবরাহকৃত পানির ১৪ ভাগ আসছে সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার থেকে শোধন করে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। আর পানি ঢাকার বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা থেকে এনে শোধন করা হচ্ছে। তবে নদীর দুটির দূষণ পরিস্থিতি এতই অবনতি হয়েছে যে তা শোধন করেও পানযোগ্য করা যাচ্ছে না। পরিবেশ সংগঠন পবার সাম্প্রতিক এক জরিপে উল্লেখ করা হয়েছে, চার নদীর পানিতে দূষণের কারণে অক্সিজেনের মাত্রা শূন্যের কোঠায় চলে গেছে। সংগঠনের নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান বলেন, বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু ও তুরাগ নদীর পানি দূষণ একটি মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। নদীর দূষিত পানি ব্যবহারের অনপুযোগী হওয়ায় পানির প্রয়োজন মেটাতে আমরা নির্বিচারে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করছি। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর প্রতি বছর ১০ ফুট করে নিচে নেমে যাচ্ছে। অন্য দিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে লবণাক্ত পানি উজানে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী দূষণমুক্ত ও পানিপ্রবাহ বৃদ্ধি করা না হলে এবং বর্তমান অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ২০ বছরের মধ্যে পানির অভাবে ঢাকা বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে এখনই সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন উল্লেখ করেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার এক গবেষণা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে ঢাকা শহরের পানির স্তর এখন সাগারের চেয়ে ১৭০ ফুট এবং রাজশাহীতে ১৮ থেকে ২৯ ফুট নিচে চলে গেছে। ফলে সাগরের লোনা পানি দক্ষিণাঞ্চল পার হয়ে এখন ঢাকা মহানগরীসহ দেশের মধ্যাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের দিকে আসছে। অপরিকল্পিতভাবে পানি উত্তোলনের ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার ফলে ঢাকার পানিতে লবণাক্ততা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ভূগর্ভস্তরের পানির ওপর বিভিন্ন জরিপে দেখানো হয়েছে যে, প্রতি বছর যে পরিমাণ পানি ভূগর্ভস্থ থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে, সে পরিমাণ পানি ভূগর্ভে রিচার্জ হচ্ছে না পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাতের অভাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ২০ বছর বা ৫০ বছর পর যখনই ঢাকার ফাঁকা ভূঅভ্যন্তর লবণ পানিতে পূর্ণ হবে, তখন শুধু পানীয় জল (মিঠা পানির) অভাবে এই শহর জনশূন্য হয়ে পড়বে। দেশের পানি সমস্যা সমাধানে সরকারকে এখনই বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানান তারা।
×