ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীর সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাত

শিক্ষক, প্রকৌশলী, আইটি কর্মী, ডাক্তার ও নির্মাণ শ্রমিক নিতে চায় কুয়েত

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ২২ মার্চ ২০১৬

শিক্ষক, প্রকৌশলী, আইটি কর্মী, ডাক্তার ও নির্মাণ শ্রমিক নিতে চায় কুয়েত

ফিরোজ মান্না ॥ কুয়েত বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনবল নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। সম্প্রতি দেশটির রাষ্ট্রদূত আদেল মোহাম্মদ এএইচ হেমায়েত প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করে এমন প্রস্তাব দেন। রাষ্ট্রদূত বলেন, তার দেশে শিক্ষক, আইটি প্রফেশনাল, প্রকৌশলী, ডাক্তার ও নির্মাণকর্মীর প্রয়োজন রয়েছে। এ দক্ষ জনবল নিতে কোন বাধা নেই। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী রাষ্ট্রদূতের প্রস্তাব গ্রহণ করে দক্ষ জনবলের পাশাপাশি আধা দক্ষ কর্মী নিতেও অনুরোধ জানান। বর্তমানে কুয়েতে দুই লাখের বেশি বাংলাদেশী কর্মী কর্মরত রয়েছেন। সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশী কর্মীদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগে ২০০৭ সাল থেকে কুয়েত কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেয়। ২০১৪ সালে দেশটির কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে আলোচনা শুরু করে। সাক্ষাতকালে বাংলাদেশ থেকে কুয়েতে কর্মী প্রেরণের বিষয়ে রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সার্বিক আলোচনায় ২০১৪ সালের কর্মী প্রেরণ বিষয়ক কারিগরি সহযোগিতা চুক্তির বিষয়টি উঠে আসে। রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাতের শুরুতেই দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা স্মরণ করতে গিয়ে মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, ১৯৭৩ সালে কুয়েত বাংলাদেশকে স্বাধীনতার স্বীকৃতি দিয়েছে। কুয়েত বাংলাদেশের কর্মী নিয়োগে একটি উল্লেখযোগ্য দেশ। বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নেয়ার প্রস্তাবে মন্ত্রী রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানান। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে কুয়েত কর্মী নিয়োগ বন্ধ করার পর বেশ কয়েক দফা প্রতিনিধিদল উভয় দেশ সফর করেছে। বার বার আলোচনায় আশ্বাস পাওয়া গেলেও শেষ পর্যন্ত কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। দীর্ঘ সময় বাজারটি বন্ধ রয়েছে। ২০১৪ সালে যৌথ কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি আধা দক্ষ ও দক্ষ কর্মী, গৃহকর্মী নেয়া, কর্মীদের কাজের পরিবেশ, বেতন ও বীমা, জনশক্তি বিষয়ে যৌথ কমিটি গঠন, কর্মীদের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া এবং জনশক্তি রফতানির বিষয়ে কাজ করবে। কমিটি গঠন পর্যন্তই শেষ, এর পর আর কোন কাজ হয়নি। কমিটির একটি বৈঠকও করতে পারেনি। তারপরও বাজারটি ধরতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জোর লবিং চালিয়েছে। কুয়েতে কর্মীদের বেতন-ভাতা অনেক বেশি। আর এই বাজারটি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। বন্ধ বাজারটিকে চালু করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জানা গেছে, একই বছর কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাসে দেশটির একটি কোম্পানি ৫৯৩ জন কর্মী নিযোগের চাহিদাপত্র পাঠিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তারা ওই কর্মীও নেয়নি। ১৯৭৬ সালে কুয়েতে প্রথমবার বাংলাদেশ থেকে কর্মী যাওয়ার সুযোগ পায়। তখন থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত দেশটিতে চার লাখ ৮০ হাজার বাংলাদেশী কর্মী চাকরি নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশী কর্মীদের বিরুদ্ধে কিছু অনিয়মের অভিযোগে ২০০৭ সাল থেকে অনেকটা কৌশলেই বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ রাখে দেশটি। বেশ কয়েক দফা বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল কুয়েত গিয়ে সরকারের সঙ্গে বৈঠক করেও কোন ফল হয়নি। তবে এবার আশা করা যাচ্ছে, কারণ কুয়েত সরকারের পক্ষ থেকে কর্মী নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এবার বাজারটি খোলার সম্ভবনা রয়েছে। কুয়েতের রাষ্ট্রদূত প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসিকে বলেন, বাংলাদেশের কর্মীরা কজে দক্ষতার প্রমাণ রেখে যাচ্ছে। তার দেশ বাংলাদেশী কর্মী নেয়ার ওপর সব সময় গুরুত্ব দিয়ে আসছে। ২০১৪ সালে জনশক্তি নিয়োগের বিষয়ে যে চুক্তি হয়েছিল ওই চুক্তির আলোকে বাংলাদেশ থেকে দক্ষ কর্মী নিয়োগের জন্য তার সরকারের প্রতি আহ্বান জানাবেন। তবে এই সময় কুয়েতে শিক্ষক, আইটি প্রফেশনাল, প্রকৌশলী, ডাক্তারের প্রয়োজন রয়েছে। কুয়েতে এই পেশার লোকজন যেতে পারবেন। নির্মাণকর্মী নিয়োগের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। আশা করা যাচ্ছে দুই দেশের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে নির্মাণকর্মী নিয়োগও সম্ভব হবে।
×