ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কিউবার জনগণের কথা শুনতে এসেছি ॥ ওবামা

নতুন যুগের সূচনা

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ২২ মার্চ ২০১৬

নতুন যুগের সূচনা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা রবিবার ঐতিহাসিক সফরে কিউবা পৌঁছেছেন। ১৯২৮ সালের পর এই প্রথম কোন ক্ষমতাসীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট কিউবা গেলেন। এর মধ্য দিয়ে কমিউনিস্ট শাসিত দ্বীপ রাষ্ট্রটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের এক নতুন যুগের সূচনা হলো। হাভানা পৌঁছে ওবামা বলেছেন, তিনি কিউবার জনগণের কথা শুনতে এসেছেন। অন্যদিকে ওবামার সঙ্গে সর্বোচ্চ সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করার জন্য কিউবা সরকারের পক্ষ থেকে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান হয়েছে। নিউইয়র্ক টাইমস। ওবামাকে বহনকারী এয়ারফোর্স ওয়ান প্লেনটি রবিবার কিউবার হোসে মার্তি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়ে স্পর্শ করার সঙ্গে সঙ্গে কিউবা মার্কিন সম্পর্ক এক নতুন যুগে প্রবেশ করে। বিমানবন্দরে উপস্থিত কিউবানদের ক্ষুদ্র একটি গ্রুপ হর্ষধ্বনি দিয়ে ওবামাকে স্বাগত জানায়। এর আগে ১৯২৮ সালে প্রেসিডেন্ট কেলভিন কুলিজ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ যুগের রণতরী ইউএসএস টেক্সাসে করে এসেছিলেন। ওই সফরে তৎকালীন কিউবার প্রেসিডেন্ট জেনারেল জেরারদো মাচাদো মোরালেসের সঙ্গে কুলিজের বৈঠক হয়েছিল। মার্কিন দূতাবাসে ভাষণ দেয়ার সময় ওবামা বলেন, ‘এখানে আসতে পেরে আমার খুবই ভাল লাগছে। ১৯২৮ সালে প্রেসিডেন্ট কুলিজ কিউবা এসেছিলেন রণতরী নিয়ে। সেই সময় তাঁর আসতে সময় লেগেছিল তিন দিন। আর আমি এসেছি মাত্র তিন ঘণ্টায়। এই প্রথমবারের মতো আমার বিমান এয়ারফোর্স ওয়ান কিউবার মাটি স্পর্শ করেছে।’ তিনি সফরকে দেখছেন অতীতকে পেছনে ফেলে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দৃষ্টান্ত তৈরির সুযোগ হিসেবে। দূতাবাস উদ্বোধনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ওবামা পায়ে হেঁটে পুরনো শহর দেখতে বের হন। এ সময় প্রায় দুই ঘণ্টা রাস্তার আশপাশের সাধারণ মানুষের সঙ্গে তিনি কথা বলেন। বৃষ্টি থাকায় ছাতা মাথায় দিয়ে তিনি ঘুরতে বের হন। ওবামার সঙ্গেও ভাল ব্যবহার করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে জনগণকে অনুরোধ করা হয়। ১৯৫৯ সালে কিউবায় বিপ্লবের মাধ্যমে মার্কিনপন্থী ফালজেন্সিও বাতিস্তা সরকারকে উৎখাত এবং দেশটির সোভিয়েত ব্লকে যোগ দেয়ার পর কিউবা-যুক্তরাষ্ট্র বৈরিতা যুগের শুরু হয়। কিউবার ওপর এখনও যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা বলবত রয়েছে। এসব নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি প্রত্যাহারের জন্য কংগ্রেসের অনুমোদন প্রয়োজন। কংগ্রেসে সংখ্যাগরিষ্ঠ রিপাবলিকান এ বিষয়ে মোটেই আগ্রহী নয়। তারপরও ওবামা প্রশাসন কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে উদ্যোগ থেকে পিছিয়ে আসেনি। দুদেশের নাগরিকদের পারস্পরিক ভ্রমণ সহজতর করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে ওবামা প্রশাসন। গত বছর হাভানায় মার্কিন দূতাবাস খোলার মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার উদ্যোগ নিয়েছিল ওবামা প্রশাসন। এরপর এই সফরের মধ্য দিয়ে শীতল যুদ্ধ যুগের দুই বৈরী দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন আরও একধাপ এগিয়ে গেল। তিন দিনের এই সফরে কিউবার প্রেসিডেন্ট ও কমিউনিস্ট নেতা রাউল ক্যাস্ত্রোর সঙ্গে বৈঠক করবেন ওবামা। তবে কিউবা বিপ্লবের অবিসম্বাদী নেতা ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে তিনি দেখা করবেন না। এ ছাড়া হাভানা শহরটি ঘুরে দেখার আগ্রহও প্রকাশ করেছেন ওবামা। কিউবার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা বাণিজ্য ও রাজনীতি প্রাধান্য পাবে। ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা এবং তাদের দুই মেয়ে সাশা ও মালিয়াও ওবামার সফরসঙ্গীদের মধ্যে রয়েছেন। ওবামার ঐতিহাসিক কিউবা সফরের দিনটিতে দেখা গেছে রাজনৈতিক ভিন্ন মতাবলম্বীদের টার্গেট করে কর্তৃপক্ষের ধরপাকড় অব্যাহত রয়েছে। ভিন্ন মতাবলম্বী গ্রুপ হোয়াইট লেডিসের কয়েকজন সদস্য এদিন গ্রেফতার হয়েছেন। মঙ্গলবার গ্রুপটির নেতা বার্তা সোলারসহ অন্যদের সঙ্গে ওবামার বৈঠকের কথা রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক বিরোধীদের আটক ও ধরপাকড় মনে করিয়ে দিচ্ছে যে মানবাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোতে ক্যাস্ট্রো সরকারের এখনও অনেক কিছু করা বাকি রয়েছে। এছাড়া আরও অন্যান্য ইস্যু রয়েছে যেমন গুয়ানতামো নৌঘাঁটি। ১৯৩৪ সালের লিজ চুক্তি অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্র ঘাঁটিটি ব্যবহার করছে। কিন্তু হাভানার দাবি চুক্তির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।
×