ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইউপি নির্বাচন শুরু

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ২২ মার্চ ২০১৬

ইউপি নির্বাচন শুরু

প্রথম দফায় ৭৫২টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন হতে যাচ্ছে আজ। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জমে উঠেছে তৃণমূলের রাজনীতি। পৌর মেয়র প্রার্থীর মতো এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হচ্ছে দলীয় প্রতীকে। আজ প্রথম দফার নির্বাচন অনুষ্ঠানের সকল প্রস্তুতি শেষ। রবিবার মধ্যরাত থেকে শেষ হয়েছে প্রচার কাজ। ভোট কেন্দ্রগুলো সেজেছে নির্বাচনী আমেজে। নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হয়েছে ভোট কেন্দ্রগুলো। সকাল থেকেই ভোটগ্রহণ শুরু হবে। প্রথমবারের মতো দলীয় পরিচয়ে হতে যাওয়া এই স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে জনগণের বাড়তি আগ্রহ ও উদ্দীপনা রয়েছে ব্যাপক। বলা চলে দলীয় আবর্তে স্থানীয় সরকারের প্রাথমিক স্তরে এই নির্বাচন ইসির জন্য এক মহাপরীক্ষা। সবাই আশা করে ভোটাররা নির্বিঘেœ কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবেন তাদের পছন্দের প্রার্থীকে। এর ব্যত্যয় হলে নির্বাচন ব্যবস্থাটিই ভেঙ্গে পড়তে পারে। নির্বাচনে অনাকাক্সিক্ষত অভিযোগ হলো তৃণমূল পর্যায়ে মনোনয়ন-বাণিজ্য। অবশ্য অতীতেও এই মনোনয়ন-বাণিজ্য ছিল, তবে তা ছিল ওপরের স্তরে। দলীয় প্রতীকে হওয়ায় এবার ইউনিয়ন পর্যায়েও তার বিস্তার ঘটেছে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মনোনয়ন-বাণিজ্যের কারণেই রাজনীতিতে ব্যবসায়ীদের প্রাধান্য বেড়েছে। এতে প্রকৃত রাজনীতিবিদরা হচ্ছেন কোণঠাসা, রাজনীতি হচ্ছে কলুষিত। টাকা দিয়ে ভোট কেনাবেচার সংস্কৃতি আমাদের দেশে বহুদিন থেকেই চলে আসছে। তবে এবার এর বিস্তৃতি কত দূর গিয়ে ঠেকে তা দেখার বিষয়। অতীতেও স্থানীয় নির্বাচনে হানাহানি ও সহিংসতা ছিল। নির্বাচন বর্জন ও প্রতিহত করার ক্ষেত্র ছাড়া এসব সহিংসতা সাধারণত ঘটেছে নির্বাচনের দিনে এবং জয়-পরাজয়ের উত্তাপে। তবে ২০০৮ থেকে দেশে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, তাতে ভোট কেন্দ্রগুলোতে উল্লেখযোগ্য সহিংসতা বা প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। এবারকার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখাই হবে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এরই মধ্যে নির্বাচন-পূর্ব সংঘাত-সহিংসতার কারণে সারাদেশে প্রাণহানি ঘটেছে এবং পাঁচ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছে। উদ্বেগের বিষয় হলো, এসব ঘটনায় নির্বাচন কমিশন যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারেনি। স্থানীয় সরকারের প্রাথমিক স্তর হলো ইউনিয়ন পরিষদ। দেশে ৪ হাজার ২৭৫টি ইউনিয়ন রয়েছে। এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নিবন্ধিত প্রায় সকল দল প্রার্থী দিয়েছে। রয়েছে নির্দলীয় পরিচয়ের প্রার্থীও। কোন কোন স্থানে স্বতন্ত্র প্রার্থী পরিচয়ে বড় দলের বিদ্রোহী প্রার্থীরাও অংশ নিচ্ছে। যেহেতু দলীয় প্রতীক তাই সাধারণ মানুষের মধ্যে ওই নির্বাচনে জাতীয় নির্বাচনের মতো ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়। অতীতে স্থানীয় সরকারের এই স্তরে নির্দলীয়ভাবে নির্বাচন হলেও পরোক্ষভাবে প্রতিটি দলই প্রার্থী মনোনয়ন দিত। এবার দলীয় প্রতীকে হওয়ায় ভিন্নমাত্রা যোগ হয়েছে। স্থানীয় নির্বাচনে বরাবরই মুক্ত-গণতন্ত্র কাজে করে। এ সময় মানুষের মধ্যে এক ধরনের সৌহার্দ্য-প্রীতির সম্পর্ক বিরাজ করে। তারপরও যেহেতু প্রথমবারের মতো এই স্তরে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন তাই নানা শঙ্কাও কাজ করে। দেখতে হবে দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীকে নির্বাচন যেন সংঘাত বা জোরজবরদস্তির পর্যায়ে না পৌঁছে। গ্রাম পর্যায়ে মানুষের মধ্যে যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি রয়েছে তা যেন দলীয় বিদ্বেষে আক্রান্ত না হয়। সেটা হলে হবে খুবই দুঃখজনক। স্থানীয় নির্বাচনের মধ্য দিয়ে অনেক অদলীয় সৎ ও সমাজহিতৈষী ব্যক্তি নির্বাচিত হয় এবং স্থানীয় উন্নয়নে সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। দলীয় মনোনয়নের কারণে সেই পথ যেন ব্যাহত না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা দরকার। প্রতিটি দলেরই উদ্দেশ্য যখন মানুষের কল্যাণ, তখন মানুষকে তার অধিকার আদায়ের প্রশ্নে উৎসবমুখর ভোটগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। গণতন্ত্রমনা মানুষ মনে করে গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় এই নির্বাচন দৃষ্টান্ত হিসেবে কাজ করবে। এই নির্বাচন গণতান্ত্রিক ও অহিংসভাবে অনুষ্ঠিত হবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।
×