ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মন্ত্রীর নির্দেশে শ্যালা নদীতে নৌযান চলাচল বন্ধ ॥ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন

প্রকাশিত: ২৩:০৭, ২১ মার্চ ২০১৬

মন্ত্রীর নির্দেশে শ্যালা নদীতে নৌযান চলাচল বন্ধ ॥ পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ সুন্দবনের শ্যালা নদীতে বাণিজ্যিক নৌযান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের নির্দেশে সোমবার সকাল থেকে নৌযান চলাচল সাময়িক বন্ধ ঘোষনা করা হয়। এদিকে, সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে কয়লা বোঝাই লাইটার জাহাজডুবির ঘটনায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা করেছে বন বিভাগ। বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ’র খুলনার উপপরিচালক(সংরক্ষণ ও পরিচালন বিভাগ) আর্শাফুজ্জামান জানান, নৌ পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান সুন্দবনের শ্যালা নদীতে সকল প্রকার বাণিজ্যিক নৌযান চলাচল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। এ নির্দেশের পর সোমবার সকাল থেকে বিআইডব্লিউটিএ কতৃপক্ষ শ্যলা নদীতে বানিজ্যিক নৌচলাচল সাময়িক বন্ধ করেছে। এ সিদ্ধান্ত কার্যকরে কোস্টগার্ড, প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো হয়েছে। এখন থেকে শ্যালা নদীর পরিবর্তে মংলা-ঘষিয়াখালী নৌপথটি ব্যবহৃত হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এদিকে, সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে কয়লা বোঝাই লাইটার জাহাজডুবির ঘটনায় ৫ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা করেছে বন বিভাগ। রাতে শরণখোলা থানায় কোস্টারের মালিকের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণের এ মামলা করেন ধান সাগর স্টেশন কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ। মামলায় নৌযানটির মালিক ও মাস্টারসহ ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এরা হলেন- কোস্টার সি হর্স-১ এর মালিক মনিরা কবির, কয়লা আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের হালিশহরের সমতা শিপিং ট্রেডার্সের মালিক আজিজুর রহমান, ব্যবস্থাপক জামাল হোসেন, কোস্টারের মাস্টার সিরাজুল ইসলাম মোল্লা, চালক ইসমাইল ফরাজী এবং সুকানি সাইদুল ইসলাম। অপরদিকে, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে কয়লাবোঝাই কোস্টার জাহাজডুবির ঘটনা তদন্তে বন বিভাগের পর এবার বাগেরহাট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পৃথক একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোমিনুল রশিদকে প্রধান করে তিন সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়। আগামী ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে জাহাজডুবির কারণ ও কোস্টারে থাকা কয়লায় সুন্দরবনের জলজপ্রাণী ও পরিবেশের কি ক্ষতি হতে পারে তা নিরুপণ করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ কমিটিতে বিআইডব্লিউটিএ ও বন বিভাগের একজন করে প্রতিনিধি রয়েছেন। এরআগে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) কামাল উদ্দিন আহমেদকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তবে শ্যালা নদীর কলাভোলা এলাকায় ১ হাজার ২৩০ মেট্রিক টন কয়লা নিয়ে লাইটার জাহাজডুবির দু’দিন পরেও উদ্ধারকাজ শুরু হয়নি। কবে নাগাদ শুরু হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কর্মকর্তারা। এতে করে লাইটার জাহাজে থাকা জ্বালানি তেল ধীরে ধীরে জোয়ার-ভাটার পানিতে ছড়িয়ে পড়ছে। ডলফিন প্রজাতির অভয়াশ্রম ও মাছের প্রজনন ক্ষেত্র বলে পরিচিত শ্যালা নদীতে প্রাণবৈচিত্রের ক্ষতির আশংকা করছেন পরিবেশবিদরা। বিআইডব্লিউটিএর খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক জানান, বিআইডব্লিউটিএর নৌপথের অতিরিক্ত পরিচালক মো. জহিরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। দুর্ঘটনাকবলিত জাহাজটি প্রায় ৩০ ফুট পানির নিচে আছে। খুলনা ও বরিশালে যে উদ্ধারযান রয়েছে (নির্ভীক) তা দিয়ে ডুবন্ত কোস্টারটি উদ্ধার করা সম্ভব নয়। এজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কয়লা নিয়ে যশোরের নওয়াপাড়ায় যাওয়ার পথে শনিবার বিকালে সি হর্স-১ নামের নৌযানটির তলা ফেটে গেলে সেটি সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের শ্যালা নদীতে ডুবে যায়। কোস্টার ডুবির পর রবিবার রাতেই জাহাজের মাস্টার সিরাজুল ইসলাম শরণখোলা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। প্রসঙ্গত: এর আগে ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর এই নদীতে ওটি সাউদার্ন স্টার-৭ নামে একটি ওয়েল ট্যাংকার ডুবে যায়। পরে এই নৌপথটি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছিল। তবে মংলা বন্দরের বিকল্প নৌপথ মংলা-ঘষিয়াখালী বন্ধ থাকায় কিছুদিনের মাথায় শ্যালা নৌপথটি পুনরায় চালু করে বিআইডব্লিটিএ। এরপর থেকে সুন্দরবনের এই নৌপথটিতে যান চলাচল বন্ধ করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশবাদী সংগঠন দাবি জানিয়ে আসছে।
×