ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট

সংঘর্ষের জেরে ৬ বছর বন্ধ দুই হোস্টেল

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ১৯ মার্চ ২০১৬

 সংঘর্ষের জেরে ৬ বছর বন্ধ দুই হোস্টেল

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ ছয় বছর আগে সংঘর্ষে একজন ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যায় রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট। এর কিছুদিন পর আবার সবকিছু ঠিকঠাক খুললেও এখনও বন্ধই রয়েছে ইনস্টিটিউটের দুটি বড় হোস্টেল। দুই বছর আগে হোস্টেল দুটি খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও এখনও বন্ধ রয়েছে হোস্টেল দুটি। এদিকে টানা ছয় বছর ধরে হোস্টেল দুটি বন্ধ থাকায় এখন বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে গেছে। ছেলেদের দুটি হোস্টেল এখন ভূতুড়ে পরিবেশ। ভবনের গায়ে লতাপাতা ও আগাছা জন্মেছে। বাসা বেঁধেছে পোকামাকড়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি খুলে পড়াশোনার পরিবেশ স্বাভাবিক হলেও দীর্ঘ ৬ বছর ধরে বন্ধই রয়েছে ইনস্টিটিউটের হোস্টেল দুটি। ফলে অবকাঠামো থাকার পরেও আবাসন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নগরীর বাইরে থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। এতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে তাদের। রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইনস্টিটিউটের ছাত্রদের জন্য দুটি ও ছাত্রীদের জন্য একটি ছাত্রাবাস রয়েছে। ছাত্রদের জন্য দুইতলা শহীদ মোনায়েম ও শাহ নেয়ামতুল্লাহ (র) ছাত্রাবাসে প্রায় ২১০ জন শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থার সুযোগ রয়েছে। অপরটি ছাত্রীদের একটি তিনতলা আক্তারুন্নেসা ছাত্রাবাসে ৮৮ জন ছাত্রীর থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এগুলো এখন ছাত্রশূন্য দুটি হোস্টেল। সরেজমিন রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে গিয়ে দেখা যায়, ইনস্টিটিউটের শহীদ মোনায়েম ও শাহ নেয়ামতুল্লাহ (র) হোস্টেলের ভবন জরাজীর্ণ হয়ে আছে। ভবনগুলোর সামনে রাস্তায় আগাছা জন্মেছে। শহীদ মোনায়েম ও শাহ নেয়ামতুল্লাহ (র) ছাত্রাবাসে সংঘর্ষের চিহ্ন এখনও রয়েছে, হোস্টেল দুইটির অধিকাংশ কক্ষের জানালার কাঁচ ভাঙ্গা। দুটি ছাত্রাবাসে প্রবেশের রাস্তা আগাছায় মিলে গেছে। কোনটি ছাত্রাবাসে প্রবেশের রাস্তা তা বোঝার উপায় নেই। দেখেই বোঝা যাচ্ছে, ছাত্রাবাস দুটি বন্ধের পর থেকেই অযতেœ-অবহেলায় পড়ে আছে। এখন সেগুলো একেবারে ব্যবহারের অনুপযোগী। জরাজীর্ণ ভবনগুলোর আশপাশে মানুষজনের আনাগোনা নেই। তবে সন্ধ্যায় সেখানে আনাগোনা বাড়ে মাদকাসক্তদের। রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি দুই দল ছাত্রদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় একজনের প্রাণহানির পর ছাত্রাবাসগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। এভাবে দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় হোস্টেলগুলো এখন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ২০১৪ সালে শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে ছাত্রাবাসাগুলো খুলে দিতে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু সংস্কারের অজুহাতে সেগুলো আর খুলে দেয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় ছাত্রাবাসাগুলো এখন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এখন সংস্কার ছাড়া সেগুলো খুলে দিয়ে কোন লাভ নেই। ছাত্রাবাসগুলো সংস্কারের জন্য সম্প্রতি রাজশাহী শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ পেলে ছাত্রাবাসগুলো সংস্কার করে শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হবে। রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলী আকবর জানান, তিনি হোস্টেলগুলো খুলে দেয়ার কথা চিন্তা করেছেন। তবে তার আগে সেগুলো বসবাসের উপযোগী করা দরকার। সংস্কারের আগে সেগুলো বসবাসের উপযোগী হবে না। কবে নাগাদ সংস্কার করা হবে হোস্টেলগুলোÑ এ বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ৭ জানুয়ারি রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সংঘর্ষে ছাত্রলীগের হামলায় নিহত হন ছাত্রমৈত্রীর রেজাওয়ানুল চৌধুরী সানি। এ ঘটনায় ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ওই দিন বিকেল পাঁচটার মধ্যে শিক্ষার্থীদের আবাসিক ছাত্রাবাস ত্যাগের নিদের্শ দেয়া হয়। এর কিছুদিন পর এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি খুলে দেয়া হলেও টানা ছয় বছর ধরে বন্ধই রয়েছে ইনস্টিটিউটের হোস্টেলগুলো।
×