ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বরিশালের ৭৩ ইউনিয়নে জমজমাট প্রচার

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ১৯ মার্চ ২০১৬

বরিশালের ৭৩ ইউনিয়নে জমজমাট প্রচার

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ মেট্রোপলিটন সিটির সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ধানের শীষ প্রতীক থাকলেও অধিকাংশ ইউনিয়নে বিএনপি দলীয় প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের দেখা মিলছে না। হাতেগোনা ৩/৪টি ইউনিয়নে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রার্থীরা তাদের ব্যক্তিগত ইমেজ ও এলাকায় নিজস্ব প্রভাবের কারণে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। জেলার অন্য নয়টি উপজেলার ৬৩ ইউনিয়নে দাপটের সঙ্গে মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। সূত্র মতে, মেট্রোপলিটন সিটির ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০টি ইউনিয়ন সদর উপজেলার তিন থানার অন্তর্ভুক্ত। বাকি ৩টি ইউনিয়ন বাবুগঞ্জ উপজেলার। এসব ইউনিয়নের মধ্যে কয়েকটি সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখা গেছে নৌকা মার্কার প্রার্থীদের একক আধিপত্য। সদর উপজেলার যে কয়েকটি ইউনিয়নে বিএনপি প্রার্থীদের মাঠে পাওয়া গেছে তার মধ্যে একজন হলেন কোতোয়ালি থানাধীন ৫নং চরমোনাই ইউনিয়নের বিএনপি দলীয় প্রার্থী সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম রাঢ়ী। ইতিপূর্বে অসংখ্যবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার ব্যক্তিগত ইমেজকে কাজে লাগিয়ে তিনি ধানের শীষের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। ওই ইউনিয়নে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের হাতপাখা প্রতীক নিয়ে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মুফতি ইসাহাক মোঃ আবুল খায়ের। স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বিগত দিনে ওই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী না দেয়ায় খুব সহজেই আবুল খায়ের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এবার নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন নূরুল ইসলাম মাস্টার। যে কারণে ত্রিমুখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সদর উপজেলার বাকি ইউনিয়নগুলোর মধ্যে রায়পাশা-কড়াপুরে শক্ত অবস্থান ধানের শীষের। সেখানেও বিএনপি নেতাকর্মীদের দেখা মিলছে না। জামায়াতে ইসলামী থেকে বিএনপিতে যোগদানকারী কয়েকবার নির্বাচিত চেয়ারম্যান নূরুল আমিন তার ব্যক্তিগত ইমেজ ও নিজস্ব কর্মী সমর্থক নিয়ে ধানের শীষের প্রচারে রয়েছেন। সদর উপজেলার অন্য ইউনিয়নগুলোতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের মনোভাব যেন তারা বিজয়ী হয়ে গেছেন। তাদের ক্ষমতার দাপটে ধানের শীষের প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। দলের পক্ষ থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও মহানগর বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার ছাড়া এখনও কোন নেতাকে মাঠে গণসংযোগ করতে দেখা যায়নি। ফলে আওয়ামী লীগের একক আধিপত্যের মাঝেই মহানগর আ’লীগের পক্ষ থেকে তৈরি করা একাধিক টিম শায়েস্তাবাদ, চরবাড়িয়া, চন্দ্রমোহন, টুঙ্গীবাড়িয়া, চরকাউয়া, চাঁনপুরা, কাশিপুর ও জাগুয়া ইউনিয়ন চষে বেড়াচ্ছে। তাদের দাপটে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা যেন আগে ভাগেই পরাজয় মেনে নিয়ে লাপাত্তা হয়ে গেছেন। বাবুগঞ্জ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের চিত্র অবশ্য ভিন্ন। মাধবপাশা, চাঁদপাশা ও রহমতপুরে আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে মহাজোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির হাতুড়ি প্রতীকের প্রার্থীরা। তবে সেখানেও আ’লীগ দলীয় প্রার্থীদের মধ্যে ‘বিজয়ী’ মনোভাব দেখা যাচ্ছে। ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীদের সঙ্গেও নৌকার প্রার্থীরা মারমুখো আচরণ করছেন। ওই তিনটি ইউনিয়নে আ’লীগ নেতাকর্মীরা বলে বেড়াচ্ছেন, ওয়ার্কার্স পার্টির শীর্ষ নেতারাও ভোট কেন্দ্রে এসে ভোট দিতে পারবেন না। নৌকার হুমকি-ধমকি ও দাপটের মুখেই ১৩টি ইউনিয়নের অর্ধেক এলাকায় ধানের শীষ ও হাতুড়ি প্রতীক নিয়ে লড়ে যাচ্ছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। তবে ভোটারদের মাঝে রয়েছে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে নানা শঙ্কা। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ ও হামলা এবং হুমকি-ধমকির কারণে তাদের মাঝে এক অজানা শঙ্কা কাজ করছে। বিগত উপজেলা পরিষদ ও সদ্য সমাপ্ত পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের অভিজ্ঞতা বেশ তিক্ত। কিন্তু এই তিক্ত অভিজ্ঞতাকেই নিজেদের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। নৌকার প্রার্থীরা ধরেই নিয়েছেন তারা বিজয়ী হচ্ছেন। এ কারণেই তারা প্রতিদ্বন্দ্বীদের মেনে নিতে পারছেন না বলে মনে করছেন সাধারণ ভোটাররা।
×