ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মঙ্গলে যাবে মানুষ ॥ মার্স ওয়ান

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ১৯ মার্চ ২০১৬

মঙ্গলে যাবে মানুষ ॥ মার্স ওয়ান

মঙ্গলে কেবল পা রাখাই নয়, স্থায়ী বসতি স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে নেদারল্যান্ডসের একটি অলাভজনক সংস্থা। প্রকল্পটির নাম দেয়া হয়েছে মার্স ওয়ান, সংস্থাটির নামও মার্স ওয়ান। মঙ্গলযাত্রায় একমুখী টিকেট এটি। বর্তমান প্রযুক্তিতে মঙ্গল থেকে রকেট উৎক্ষেপণের সুযোগ নেই। তাই যারা যাবেন তাদের সেখানেই থেকে যেতে হবে। পৃথিবীতে যেন মৃত্যু ঘটবে তাদের। হয়ত পথিকৃতের ভূমিকার কারণে একদিন মঙ্গলের বুকে তাদের ভাস্কর্য তৈরি হবে। মার্কিন জ্যোতির্বিদ কার্ল সাগান স্বপ্ন দেখেছিলেন মঙ্গলে একদিন মানুষ উপনিবেশ বা স্থায়ী বসতি স্থাপন করবে। তার সে স্বপ্ন যেন পূরণ হতে চলেছে ‘মার্স ওয়ান’ প্রকল্পের মাধ্যমে। মঙ্গলে একমুখী যাত্রা এবং টেলিভিশন রিয়েলিটি শো’র ধারণাটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১০ সালে একটি মহাকাশ ম্যাগাজিনের মাধ্যমে। ২০১২ সালে ‘মার্স ওয়ান’ তাদের পরিকল্পনা প্রকাশ করে। শুরুতে পরিকল্পনা ছিল ২০২৩ সালে মঙ্গলে মানববসতি স্থাপন করা হবে। পরে সেটা পিছিয়ে ২০২৫ করা হয়েছে। ২০২৪ সালে দু’জন পুরুষ ও দু’জন নারী নিয়ে চারজনের দলটি পৃথিবী ছেড়ে যাবে আর পৌঁছবে ২০২৫ সালে। শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ আর পদার্থবিজ্ঞানীরা রয়েছেন এ প্রকল্পের নেতৃত্বে, যাদের মধ্যে সাবেক নাসা কর্মীও রয়েছেন। পরিকল্পনা প্রণয়নে দীর্ঘ এক দশক সময় নিয়েছেন তারা। এখন পর্যন্ত যে প্রযুক্তি মানুষের হাতে রয়েছে তা ব্যবহার করেই যে মঙ্গলে বসতি স্থাপন করা যায় সেটা বোঝানোটাও সহজ কাজ ছিল না। আর্থিক দিকটি ছিল আরেক চ্যালেঞ্জ। মঙ্গলের বৈশিষ্ট্য পৃথিবীর নিকটতম গ্রহ মঙ্গলের ব্যাস পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় অর্ধেক, ঘনত্বও কম। মঙ্গলের আয়তন পৃথিবীর ১৫%, ঘনত্ব ১১% এবং আকর্ষণ বল ৩৮%। আয়রন অক্সাইডের আধিক্যের কারণে এর পৃষ্ঠের বর্ণ অনেকটা লালচে। আকর্ষণ বল কম হওয়ার কারণে বায়ুম-ল অত্যন্ত পাতলা, নেই বললেই চলে। মঙ্গলে পৃথিবীর মতো চৌম্বকক্ষেত্র নেই। সূর্য এবং অন্যান্য উৎস থেকে আসা মহাজাগতিক রশ্মি বা কসমিক রে সরাসরি মঙ্গল পৃষ্ঠে আঘাত করে। সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে মঙ্গলের লাগে ৬৮৭ দিন। আর পৃথিবীর ২৪ ঘণ্টা ৩৯ মিনিটে মঙ্গলের একদিন। অভিযাত্রীদের প্রশিক্ষণ ২০১৫ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত চলবে প্রশিক্ষণ। মঙ্গলের মতো প্রতিকূল পরিবেশে দীর্ঘ সময় টিকে থাকা, তারা যেখানে থাকবেন সেখানকার যন্ত্রপাতি ও চলাফেরার বাহন বা রোভার মেরামত করা, মঙ্গলে নিজেদের খাবার উৎপাদন করা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে প্রশিক্ষণসূচীতে। ধীরে ধীরে কঠিনতর পরিস্থিতে নেয়া হবে তাদের। চারজনের দলে দুইজনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে যাতে তারা সব ধরনের যন্ত্রপাতি মেরামত এবং কারিগরি সমস্যার সমাধান করতে পারেন। দুইজনকে বেশ বিস্তৃতভাবে ডাক্তারিবিদ্যার প্রশিক্ষণ দেয়া হবে যাতে তারা সাধারণ বা গুরুতর ক্ষেত্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার পাশাপাশি তাদের সঙ্গে থাকা চিকিৎসা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারেন। একজনের প্রশিক্ষণ থাকবে মঙ্গলের ভূতত্ত্বের ওপর। এছাড়া একজনের প্রশিক্ষণ থাকবে এক্সোবায়োলজি’র ওপর, যাতে তিনি পৃথিবীর বাইরে জীবনের অনুসন্ধানের পাশাপাশি জীবদেহের ওপর পৃথিবীর বাইরের পরিবেশের প্রভাব নিয়ে গবেষণায় ভূমিকা রাখতে পারেন। এছাড়া সবাইকেই ফিজিওথেরাপি, মনোবিজ্ঞান এবং ইলেকট্রনিক্সের ওপর প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। রেজা নওফল হায়দার
×