ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘বন্ধু রহো রহো সাথে’- ওয়াহিদুল হক ও কাইয়ুম চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৯ মার্চ ২০১৬

‘বন্ধু রহো রহো সাথে’- ওয়াহিদুল হক ও কাইয়ুম চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ‘আজ আমরা দেশের বরেণ্য যে দুইজন ব্যক্তিত্বের কথা বলব, তাঁরা হলেন চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ও সঙ্গীতজ্ঞ ওয়াহিদুল হক। কাইয়ুম চৌধুরী ছিলেন কণ্ঠশীলনের সভাপতি আর ওয়াহিদুল হক ছিলেন অধ্যক্ষ। শুধু চিত্রকলায়ই পারদর্শী ছিলেন না কাইয়ুম, লিখতেনও ভাল। ওয়াহিদুল হকের একটি বিশেষ লক্ষণীয় বিষয় ছিল যে, ‘উনি বড় বড় কিছু পরিকল্পনা করতেন কিন্তু তাঁর অধিকাংশই আমাদেরই শেষ করতে হতো’ ওয়াহিদুল হক ও কাইয়ুম চৌধুরীর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি ‘বন্ধু রহো রহো সাথে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বৈঠকী আড্ডা সঞ্চালনার শুরুতে এ কথা বলেন কণ্ঠশীলনের সভাপতি সন্জীদা খাতুন। আলাপচারিতায় আরও ছিলেন এমিরেটাস অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান, চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার ও নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। গত ৯ মার্চ ছিল কাইয়ুম চৌধুরী ও ১৬ মার্চ ছিল ওয়াহিদুল হকের জন্মদিন। এ দুজনই ছিলেন কণ্ঠশীলনের প্রাণপুরুষ। তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে শুক্রবার বিকেলে এ আয়োজন করে সংগঠনটি। আনিসুজ্জামান বলেন, কাইয়ুমকে আমি চিনি ১৯৫০ সাল থেকে। এটা ভোলার মতো নয়, যে জীবনের শেষ মুহূর্তে আমি তাঁর সঙ্গে ছিলাম। সেদিন অনেক গল্পও করেছিলাম। ও আমার একটি প্রতিকৃতি এঁকেছিল, যদিও সেটি আমি এখনও হাতে পায়নি। কাইয়ুমের সব কাজে বাঙালী সত্তার প্রকাশ পায়। সে বাংলার মানুষ ও প্রকৃতিকে ধরে রেখেছে তার চিত্রকর্মে। গান ও চলচ্চিত্রের প্রতি ছিল তার প্রচ- আগ্রহ। সংস্কৃতির সর্বক্ষেত্রের প্রতি তার ঝোঁক ছিল। তিনি শুধু চিত্রশিল্পী নন, তার সবচেয়ে দিক হলো একজন সংস্কৃতিবিদ। ওয়াহিদুল হককে আমি প্রথম জানি সাংবাদিক হিসেবে। খাঁটি বাঙালী হওয়ার সাধনায় ব্যাপৃত ছিলেন প্রথম যৌবন থেকেই। বাংলা নববর্ষ উদ্যাপনের প্রাতিষ্ঠানিককরণ এবং ছায়ানটের প্রতিষ্ঠা তাকে আমাদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের একেবারে সামনের সারিতে নিয়ে এলো। তিনি কখনও আমাদের স্মৃতি থেকে হারিয়ে যাবেন না। তবু আনুষ্ঠানিকভাবে তাকে স্মরণ করার প্রয়োজন আছে। তিনি আমাদের অনেক দিয়েছেন, আজ তার অবর্তমানে তাকেও আমাদের কিছু দেয়ার আছে। সেটা তাকে পৌঁছে দিতে হবে। মুস্তাফা মনোয়ার বলেন, দুইজনের কাজের মধ্যে নান্দনিকতা। দুজনেরই ছিল নতুনের প্রতি আগ্রহ। এছাড়া মানুষকে প্রশংসা করারও প্রবণতা ছিল উভয়েরই এবং পরবর্তীতে খুঁত ধরিয়ে দেয়াও ছিল তাদের কাজ। তারা চর্চা করেছেন, মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছেন। রামেন্দু মজুমদার বলেন, এ দুই কীর্তিমান মানুষ কখনও প্রচারের আলোয় ছিলেন না। সত্যিকারের মানুষ গড়া ও বাঙালী হয়ে ওঠার কাজে তারা আত্মনিয়োগ করেছিলেন। আজকে সবাই যেমন নিজেদের প্রচার করতে ভালবাসেন, তারা ছিলেন এর ব্যতিক্রম। আড্ডার শুরুর আগে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘বন্ধু রহো রহো সাথে’ গানটি পরিবেশন করেন শিল্পী ইফফাত আরা দেওয়ান। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন কণ্ঠশীলনের সাধারণ সম্পাদক ফওজিয়া মান্নান। এরপর চট্টগ্রামের ফুলকি সোনারতরীর ছেলেমেয়েরা পরিবেশন করেন রবীন্দ্রনাথের ‘জুতা আবিষ্কার’। পরে রবীন্দ্রনাথের ‘দুঃসময়’ কবিতা আবৃত্তি করেন সৈয়দ হাসান ইমাম। এরপর নালন্দার শিশুশিল্পীদের জসীমউদ্্দীনের ‘নকশী কাঁথার মাঠ’। এরপর দলীয় প্রযোজনা নিয়ে মঞ্চে আসে আবৃত্তি সংগঠন কথা ও রাজশাহী আবৃত্তি পরিষদ। পরে ছিল ইভা ম-লের নির্দেশনায় কণ্ঠশীলন প্রযোজনা ‘আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম’। ব্রতচারী পরিবেশনা অনুষ্ঠানকে করে তোলে বৈচিত্র্যময়। একক আবৃত্তিতে আরও অংশ নেন আশরাফুল আলম, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, মাহিদুল ইসলাম মাহী প্রমুখ। উৎসবের শেষ প্রযোজনা ছিল কণ্ঠশীলনের ‘কর্ণকুন্তী সংবাদ’। পরিবেশন করেন শামীমা নাজনীন ও জহিরুল হক। অনুষ্ঠানের শুরুতে মিলনায়তন আঙিনায় ছিল শিশুদের চিত্রাঙ্কন উৎসব। এখানে কাউকে সেরা নির্বাচন করা হয়নি। সবাই মনের খুশিতে নিজে?দের মতো করে এঁকেছে। শিশুদের এই উৎ?সবে অংশ নেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। ‘বাংলা সিনে এ্যাওয়ার্ড ২০১৫’ প্রদানের প্রথম আসর বসছে নিউইয়র্কে ॥ ‘বাংলা সিনে এ্যাওয়ার্ড ২০১৫’ প্রদানের প্রথম আসর বসছে আমেরিকার নিউইয়র্কের কোল্ডেন সেন্টারে আগামী ১৭ এপ্রিল। দেশীয় চলচ্চিত্রকে বিদেশের মাটিতে তুলে ধরতে এ বর্ণাঢ্য আয়োজন করছে বিএনএস লজিস্টিক বাংলাদেশ। জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে শুক্রবার সকালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে এ ঘোষণা দেন অনুষ্ঠানের আয়োজক বিএনএস লজিস্টিক বাংলাদেশের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সালাহউদ্দিন আহমেদ শিমুল। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক কাজী হায়াৎ, ভারসেন্টাইন মিডিয়া গ্রুপের প্রোপ্রাইটর আদনান ও পরিচালক মহিউদ্দিন ফারুক, গ্লোবাল বিজনেস কমিউনিকেশনের ডাইরেক্টর মনির, বিএনএস লজিস্টিকের সদস্য আজগর হোসেন বাবু প্রমুখ। সালাহউদ্দিন আহমেদ শিমুল বলেন, প্রযুক্তিনির্ভর এই যুগে বাংলা সিনেমা একদিন বিশ্ব দরবারে নিজ স্থান দখল করে নেবে। শিল্পী এবং কলাকুশলীদের মধ্যে সেই বিশ্বাস ও প্রেরণা যোগাতে আমাদের এই আয়োজন। তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি বাংলা সিনেমার বিশ্বায়নের মধ্য দিয়ে একে নতুন বাজার সৃষ্টির সুযোগ করে দেয়া যায়। এই প্রচেষ্টা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার একটি ধাপ হিসেবেও বিবেচনা করা যেতে পারে। চলচ্চিত্র নির্মাতা কাজী হায়াৎ বলেন, আমাদের বিশ্বাস বহির্বিশ্বে এ ধরনের এ্যাওয়ার্ড প্রদানের আয়োজন বাংলাদেশের তথা ঢালিউডের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের প্রসার ও উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই এ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের জুরি বোর্ডের নেতৃত্বে থাকছেন জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র পরিচালক মহিউদ্দিন ফারুক। ইতোমধ্যে ২০১৪-১৫ সালে বাংলাদেশে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোর মধ্য থেকে প্রাথমিকভাবে ১৮টি সিনেমা থেকে ২৫টি বিভাগে বিজয়ী নির্বাচন করা হয়েছে। শিশু একাডেমিতে বইমেলা শুরু ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৭তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির আয়োজনে শুক্রবার থেকে শুরু হলো বইমেলা। একাডেমি চত্বরে এদিন সকালে ৯ দিনব্যাপী মেলার উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ওসমান গনি ও অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখ্ত। আয়োজক প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মোশাররফ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বইমেলা উদ্যাপন কমিটির সদস্য সচিব রোজিনা আক্তার। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার জন্য শিশুদের মেধা বিকাশের কাজের গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ বঙ্গবন্ধু বিশ্বাস করতেন শিশুরাই আগামীতে নেতৃত্ব দিয়ে সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। ইমদাদুল হক মিলন বলেন, প্রতিটি শিশুর হাতে বই তুলে দিতে হবে। এতে তাদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। বইয়ের প্রতি আগ্রহই একটি শিশুকে আগামীর যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। বইমেলায় ৫০টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করছে। প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এবং ছুটির দিনগুলোতে সকাল ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। মেলা চলবে আগামী ২৬ মার্চ পর্যন্ত। এছাড়াও প্রতিদিন বিকেলে থাকবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিশু-কিশোরদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মুক্তিযুদ্ধের গল্প, কবিতা আবৃত্তি, নৃত্যনাট্য, নৃত্য-সঙ্গীত, পাপেট শো, ত্রি মাত্রিক শো ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। নড়াইলে সুলতান মেলার উদ্বোধন ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা, নড়াইল থেকে জানান, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ৯১তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে নড়াইলের সুলতান মঞ্চ চত্বরে সাত দিনব্যাপী ‘সুলতান মেলা’র উদ্বোধন করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে মেলার উদ্বোধন করবেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বী মিয়া। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হাফিজুর রহমান, জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফ, পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম, নড়াইল সরকারী ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ শেখ আনোয়ার হোসেন, এসএম সুলতান ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মিকু প্রমুখ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রধান অতিথি আর্ট গ্যালারিও ঘুরে দেখেন। জেলা প্রশাসন ও সুলতান ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে সাত দিনব্যাপী মেলায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এর মধ্যে সুলতানের জীবন ও কর্মের ওপর প্রতিদিনের সেমিনার। শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, চিত্র প্রদর্শনী, লাঠিখেলা, হা-ডু-ডু, ভলিবল, ঘোড়ার গাড়ি, সাইকেল রেস, রশি টানাটানি, কলা গাছে চড়াসহ বিভিন্ন গ্রামীণ খেলা। এ ছাড়া স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সুলতান ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান মিকু জানান, পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় এ মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলা চলবে আগামী ২৪ মার্চ পর্যন্ত।
×