ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দুদক কোন কিনারাই করতে পারেনি

ইভিএম কেনায় দুর্নীতি তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৯ মার্চ ২০১৬

ইভিএম কেনায় দুর্নীতি তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ

মশিউর রহমান খান ॥ নির্বাচন কমিশনের অসহযোগিতায় থমকে আছে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনায় দুর্নীতি ও ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের কাজ। ২ বছর আগে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে অভিযোগ যাচাই-বাছাই শেষে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধানে নামলেও গত ২ বছরেও এর কোন ক্লু না পাওয়ায় কোন কূল কিনারাই করতে পারেনি রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি বিরোধী এ সংস্থাটি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে ‘ক্লু’ না পাওয়ায় অনুসন্ধান কাজটি প্রায় স্থগিত অবস্থায় রয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এসব অভিযোগের তথ্য সরবরাহে অসহযোগিতা ও বিলম্ব করায় অনুসন্ধানে এগোনো সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে। অপর একটি সূত্র জানায়, অনুসন্ধান কাজ সচল করতে শীঘ্রই সরেজমিনে ইসিতে যেতে পারেন অনুসন্ধান কর্মকর্তারা। দুদক সূত্র জানায়, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অতি জরুরী ভিত্তিতে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে টাইগার আইটি (বিডি) নামক একটি প্রতিষ্ঠান। পরে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে কার্যাদেশ প্রদান এবং ভোটার তালিকা প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এ অভিযোগটি যাচাই-বাছাই শেষে ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুদকের উপ-পরিচালক নাসিরউদ্দিন আহমেদকে দায়িত্ব দেয়া হয়। অনুসন্ধানের শুরুতেই তিনি অভিযোগ সংশ্লিষ্ট তথ্য চেয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি পাঠান। তার পাঠানো চিঠিতে, ২০০৯-২০১০ সালে ইসি প্রথম পর্যায়ে ১৩০টি, ২০১০-২০১১ সালে দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪০০টি ও ২০১১-২০১২ সালে তৃতীয় পর্যায়ে ৭০০টি ইভিএম ক্রয় সংক্রান্ত দরপত্র বিজ্ঞপ্তি, দাখিলকৃত দরপত্র, তুলনামূলক বিবরণী, কার্যাদেশ, সরবরাহের প্রমাণপত্র ও বিল ভাউচারসহ যাবতীয় রেকর্ডপত্র চাওয়া হয়েছিল। এসব চিঠির পরিবর্তে ইসি দুদককে কোন তথ্য না দিয়ে, বরং বিলম্ব করে সময় চায়। তাই তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ না করায় এসব অভিযোগের অনুসন্ধান কাজ থেমে থাকে। এদিকে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনাকাটায় দুর্নীতির অভিযোগ আসলে তা আমলে নিয়ে অনুসন্ধানে নামে দুদক। অভিযোগটি অনুসন্ধানের জন্য দুদকের তৎকালীন সহকারী পরিচালক বর্তমানে উপ-পরিচালক মোঃ মাহবুবুল আলমকে দায়িত্ব দেয় কমিশন। অনুসন্ধানের শুরুতেই তিনিও ২০১৪ সালের ৯ জানুয়ারি ইসির সচিব বরাবর প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র সরবরাহের নোটিস দেন। নোটিসে সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে মোট এক হাজার ২৩০টি ইভিএম কেনার যাবতীয় রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ছায়ালিপি সরবরাহ করতে বলা হয়। যেগুলোর মধ্যে অধিকাংশ প্রয়োজনীয় রেকর্ডপত্র দিতে না পারায় এই অংশের অনুসন্ধান কাজও থেমে যায়। নাম না প্রকাশ করার শর্তে দুদকের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, এসব অভিযোগের অনুসন্ধানেই আমরা নেমেছিলাম। তবে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট কোন ‘ক্লু’ পাওয়া যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন প্রমাণাদি না পাওয়ায় অনুসন্ধান কাজটিও প্রায় বন্ধ রয়েছে। তবে ভবিষ্যতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে পুনরায় অনুসন্ধান কাজ শুরু করা যেতে পারে। তবে এ জন্য নির্বাচন কমিশনের সহায়তা বিশেষ প্রয়োজন। অন্যথায় এ দুর্নীতির অনুসন্ধানটি পুরোপুরিই থমকে যাবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দুদকের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, এসব অভিযোগ সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত বার বার চাওয়ার পরও ইসি তা সরবরাহ করতে না পারায় অনুসন্ধান কাজের কোন অগ্রগতি নেই। তাদের নির্বাচনী ব্যস্ততাসহ নানাবিধ কারণ দেখিয়ে তথ্য প্রদানে বিলম্ব করে। তথ্য প্রমাণ না থাকায় এসব অভিযোগ যথাযথ কি না তাও প্রমাণ করতে পারছেন না অনুসন্ধান কর্মকর্তারা। জানা গেছে, নির্বাচন কমিশনের আশায় না থেকে অনুসন্ধান কাজগুলো সচল করতে উপ-পরিচালক নাসিরউদ্দিন আহমেদ ও মুহা. মাহবুবুল আলম অতি দ্রুত এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের যাবেন। উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে নির্বাচন করতে ইভিএম ক্রয় করলেও পরে তা কার্যকর করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়।
×