ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে চাকরি হারানোর আতঙ্কে দেড় শ’ কর্মকর্তা কর্মচারী

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৯ মার্চ ২০১৬

বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালে চাকরি হারানোর আতঙ্কে  দেড় শ’ কর্মকর্তা কর্মচারী

আরাফাত মুন্না ॥ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) নিয়োগ সংক্রান্ত আইনের একটি ধারা সুপ্রীমকোর্টে অবৈধ হওয়ায় চাকরি হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন চিকিৎসক ও নার্সসহ প্রায় দেড়শ’ কর্মকর্তা-কর্মচারী, যাদের মধ্যে অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকও রয়েছেন। এসব চিকিৎসক কর্মকর্তা কর্মচারী চাকরি হারালে শুধু তারাই ক্ষতির সম্মুখীন হবেন তা নয়, দক্ষ জনবলও হারাতে পারে বিএসএমএমইউ। মানবিক দিক বিবেচনায় চাকরি রক্ষার্থে আদালত পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিশেষ পর্যবেক্ষণ দেবেন, এমনটাই আশা ভুক্তভোগীদের। সূত্র জানায়, এই দেড়শ’ জন ছাড়াও ২০১০ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত চুক্তি বা দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে বিভিন্ন সময়ে চিকিৎসকসহ আরও প্রায় এক হাজার জনবল নিয়োগ দিয়েছে বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ। এই রায়ের ফলে তারাও চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগী কয়েক চিকিৎসক জানান, এই নিয়োগ যদি অবৈধ হয়, সেটার দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। এখানে আমাদের কোন দোষ নেই। তারা বলেন, এতদিন চাকরি করে অনেকের বয়স ৪১ থেকে ৪৫ এর উপরেও উঠে গেছে। ৫০ জনের অধিক উচ্চতর ডিগ্রী এবং ১০ থেকে ১২ সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপকও রয়েছেন আমাদের সঙ্গে। এসব চিকিৎসক প্রায় ১০ বছর কাজ করে দক্ষতা অর্জন করেছেন। তারা আরও বলেন, যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চায়, তবে আইনী প্রক্রিয়াতেই আমাদের চাকরি রক্ষা সম্ভব। ভুক্তভোগীরা আরও জানান, আপীল বিভাগ থেকে এখনও পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি আসেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। কপি পেলে রায় অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বাতিল হওয়া আইনের অধীনে নিয়োগপ্রাপ্তরা বর্তমানে কর্মস্থলেই আছেন। সকলেই ফেব্রুয়ারির বেতনও তুলেছেন। ভুক্তভোগীরা জানান, ওই সময়ে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্য থেকে কেউ কেউ ইতোমধ্যেই ওই পদের চাকরি থেকে ইস্তফা নিয়ে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য পদে যোগ দিয়েছেন। আবার কেউ বা এ প্রতিষ্ঠান ছেড়ে অন্য কোথাও চলে গেছেন। আপীল বিভাগ পূর্ণাঙ্গ রায়ে তাদের চাকরি রক্ষার্থে পর্যবেক্ষণ দেবেন বলেই আশা করেন এই চিকিৎসকরা। সুপ্রীমকোর্টের ওই মামলার নথিসূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালের ১৮ অক্টোবর অস্থায়ীভাবে ‘কিছু সংখ্যক’ চিকিৎসক নিয়োগের (মেডিক্যাল অফিসার পদ) জন্য দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। এর আলোকে ২০০ জনেরও বেশি চিকিৎসক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছিল। এ নিয়োগের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট আবেদন করলে সে সময় বিজ্ঞপ্তির বৈধতা নিয়ে রুল জারি করে আদালত। তবে ২০তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২শ’ চিকিৎসক নিয়োগের পক্ষে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন হাইকোর্ট। এ অনুযায়ী নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হলে ২০০৬ সালের ২ মার্চ তারা কর্মস্থলে যোগ দেন। ওই বছরের ২৭ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের ২৩তম সভায় এ নিয়োগ ও যোগদান অনুমোদিত হয়। ২০০৮ সালের ১৮ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৬তম সিন্ডিকেট সভায় বিজ্ঞপ্তিতে উল্লিখিত পদের (২০০ পদ) বিপরীতে এক বছরের মেয়াদ শেষে ১৭৪ জনের চাকরি স্থায়ী করা হয়। এতে সিন্ডিকেট সদস্য ওই রিট আবেদন দায়েরকারীও উপস্থিত ছিলেন, তখন তিনি এর বিরোধিতা করেননি। তবে ২০১০ সালের ১৪ ডিসেম্বর রিট আবেদনকারীর পক্ষে রায় দেন হাইকোর্ট। ওই রায়ে বলা হয়েছিল এই নিয়োগ ও তার কার্যকারিতা অবৈধ। ২০১০ সালের ২০ ডিসেম্বর সংক্ষুব্ধ চিকিৎসকরা এ আদেশের বিরুদ্ধে আপীল বিভাগে চ্যালেঞ্জ করলে তৎকালীন চেম্বার বিচারপতি হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়ে শুনানির জন্য আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। পরে গত ২২ ফেব্রুয়ারি সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে রায় দেন। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান জনকণ্ঠকে বলেন, তাদের প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে আমরা অমান্য করতে পারি না। এখনও উচ্চ আদালতের রায়ের কপি হাতে পাইনি। কপি পাওয়ার পর এ বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে মানবিক দিক বিবেচনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে বলেও জানান উপাচার্য।
×