ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেট সামনে রেখে প্রতিটি মন্ত্রণালয়কে ধারণাপত্র পাঠাতে বলা হয়েছে

গবেষণা খাত প্রসারে দিকনির্দেশনা তৈরি করছে সরকার

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৯ মার্চ ২০১৬

গবেষণা খাত প্রসারে দিকনির্দেশনা তৈরি করছে সরকার

এম শাহজাহান ॥ জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে গবেষণা খাত সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এলক্ষ্যে গবেষণার অগ্রাধিকার ক্ষেত্র ও প্রতিষ্ঠান চিহ্নিতকরণ এবং বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যয়ের পদ্ধতি নির্ধারণে একটি গাইডলাইন প্রণয়ন করছে সরকার। আগামী বাজেট সামনে রেখে সংশ্লিষ্ট স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়কে একটি ধারণাপত্র প্রস্তুত করে তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চলতি অর্থবছরের অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত হতে গবেষণার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের জন্য অনুমোদন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) ৩০টি গবেষণা সমীক্ষা পরিচালনা করবে। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটাতে সরকার বিআইডিএসকে এ বছর অতিরিক্ত ১৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোপূর্বে এ খাতে বছরে মাত্র ২ কোটি টাকা খরচ করা হতো। বিআইডিএসের পাশাপাশি অন্যান্য গবেষণা খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া হবে। এলক্ষ্যে আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়ার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে গবেষণা খাত অধিকতর সম্প্রসারণ হওয়া প্রয়োজন। রূপকল্প-২০২১ ও প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২০২১ আলোকে গৃহীত সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী অনুযায়ী কাক্সিক্ষত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার অর্জন এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ইতোমধ্যে অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত হতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছায় গবেষণা খাত সম্প্রসারণ, বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং তা ব্যয় করার সক্ষমতা অর্জনের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। শীঘ্রই এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে অর্থ মন্ত্রণালয়ে। ওই বৈঠকে সংশ্লিষ্ট স্ব-স্ব মন্ত্রণালয়সহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। তিনি বলেন, ইতোপূর্বে বাংলাদেশের একজন বিজ্ঞানী পাটের জিন আবিষ্কার করেছেন। গবেষণা খাত সম্প্রসারণ করা গেলে পাটের জিন আবিষ্কারের মতো আরও বড় অর্জন সম্ভব। জানা গেছে, গবেষণার অগ্রাধিকার ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণসহ কোন কোন প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এবং কী উপায়ে বরাদ্দ ব্যয়িত হবে সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থবিভাগ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। বিশেষ করে শিক্ষা খাতের গবেষণা ব্যয় বাড়াতে আরও মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজেটের আকার বাড়ছে, কিন্তু সে অনুপাতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় বাড়ছে না। গবেষণার খাতে মোট বাজেটের ০.২ শতাংশ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এ বরাদ্দ বাড়াতে সরকারকে নজর দিতে হবে। ধার করা প্রযুক্তি দিয়ে একটি দেশ এগিয়ে যেতে পারে না। রুয়েট, বুয়েটের মতো প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার ক্ষেত্র বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। সম্প্রতি ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ইউআইইউ) রিসার্চ গ্র্যান্ট ২০১৬-এর অধীনে নির্বাচিত প্রকল্পের গবেষক শিক্ষকদের গবেষণা তহবিল মঞ্জুরি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, উচ্চশিক্ষার অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হলো গবেষণা। গবেষণার মাধ্যমে সৃষ্টি হয় নতুন জ্ঞান, যা জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনে অবদান রাখে। সরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ বৈঠকে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আগের অর্থবছরগুলোতে বিআইডিএসকে গড়ে ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হতো। এবছর তা বাড়িয়ে ১৫ কোটি ২৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। সরকার গবেষণা ব্যয়কে ভবিষ্যত বিনিয়োগ হিসেবে দেখে থাকে। দেশের অর্থনৈতিক চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে গবেষণার বিষয়বস্তু ঠিক করতে হবে। গবেষণার মাধ্যমে আমাদের সক্ষমতার ক্ষেত্রগুলো কোথায় তা জানতে হবে। তিনি বলেন, পৃথিবীব্যাপী বছরে ৮৮ ট্রিলিয়ন ডলার বাণিজ্য হয়, অথচ আমরা এর বিস্তারিত জানি না। তাহলে আমরা কিভাবে বুঝব আমাদের সক্ষমতা কোথায়? বিআইডিএসকে গবেষণা ক্ষেত্র ঠিক করে এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্ধারণ করে প্রকল্প প্রস্তাব নিয়ে আসা উচিত। তাহলে গবেষণা কার্যক্রম আরও নিরবচ্ছিন্ন হবে। জানা গেছে, গবেষণার অর্থ ব্যয় না হওয়ারও বেশ কিছু কারণ আছে। তবে বড় কারণ হচ্ছে অদক্ষতা। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান দক্ষতার সাথে গবেষণা চালাতে পারেন না। আরও একটি কারণে গবেষণার টাকা ফেরত যায়Ñ অনেক গবেষণার কাজে দুর্নীতির কোন সুযোগ থাকে না। ফলে বরাদ্দ খরচ করার আগ্রহ থাকে না। যার অভাব রয়েছে দেশের প্রায় প্রতিটি সেক্টরে। সরকারের প্রায় সব মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ দফতরের জন্যই গবেষণা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু গবেষণায় সংশ্লিষ্টদের আগ্রহের অভাবে বছর শেষে অধিকাংশ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সরকারী বরাদ্দ ফেরত যায়। তবে হাতেগোনা কিছু প্রতিষ্ঠান গবেষণা খাতে অর্থের ব্যবহার করছে। বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) চলতি বছর শিক্ষা গবেষণার জন্য ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। কিন্তু গত অক্টোবর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি একটি টাকাও ব্যয় করতে পারেনি। একইভাবে বাংলাদেশ ইউনেস্কো জাতীয় কমিশন ৩ বছর ধরে শিক্ষা গবেষণার টাকা পেলেও খরচ করতে পারছে না। গবেষণার টাকা খরচ করতে পারেনি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটও। দুই বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি বরাদ্দ ফেরত দিচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ সুপারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউিট, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, তুলা উন্নয়ন বোর্ড গবেষণা বরাদ্দের প্রায় পুরোটাই খরচ করতে পারছে।
×