ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রবিবার রাত বারোটা থেকে নির্বাচনী প্রচার নিষিদ্ধ ;###;এলাকায় নামছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

প্রথম দফা ইউপি নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১৯ মার্চ ২০১৬

প্রথম দফা ইউপি নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রথম দফায় ইউপি নির্বাচনের ভোট গ্রহণের যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। ইতোমধ্যে নির্বাচনের ব্যালট পেপারসহ যাবতীয় নির্বাচনী সরঞ্জাম সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় পৌঁছানো হয়েছে। ভোটের আগেরদিন রাতেই নির্বাচনী উপকরণ প্রত্যেক ভোট কেন্দ্রে পৌঁছে দেয়া হবে। কমিশন জানিয়েছে, প্রথম দফায় নির্বাচনের জন্য আগামীকাল রবিবার রাত ১২টা থেকে নির্বাচনী এলাকায় সব ধরনের প্রচার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নির্বাচন উপলক্ষে রবিবার থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকায় নামছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আগামী মঙ্গলবার প্রথম দফায় ভোট গ্রহণ করা হবে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, ইতোমধ্যে ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখন শুধু সুষ্ঠু নির্বাচনের অপেক্ষায় রয়েছে কমিশন। কমিশন জানিয়েছে শুক্রবার সকাল থেকে নির্বাচনী এলাকার সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে ব্যালট পেপার পাঠানো হয়েছে। রাজধানীর পাঁচটি প্রেস থেকে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম বিতরণ করা হয়। এ উপলক্ষে দেশের ৩৬ জেলায় ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সামগ্রী সরবরাহ করা হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনের উপ-সচিব রকিব উদ্দিন ম-ল জানিয়েছেন। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের প্রতিনিধিরা ব্যালট পেপার বুঝে নিয়েছেন। তিনি জানান, ভোটের আগের দিন জেলা পর্যায় থেকে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পৌঁছে দেয়া হবে। প্রথম ধাপের নির্বাচনের জন্য চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদের জন্য প্রায় সাড়ে চার কোটি ব্যালট পেপার ছাপিয়েছে কমিশন। চেয়ারম্যান পদের জন্য সাদা, ১২টি প্রতীকসহ সাধারণ সদস্য পদের জন্য সবুজ ও ১০টি প্রতীকসহ সংরক্ষিত সদস্য পদের জন্য ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত পদগুলো বাদ দিয়ে বাকি পদের ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে। ইউপিতে চেয়ারম্যান পদে সর্বোচ্চ ১১ জন প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন। এদিকে কমিশন জানিয়েছে, নির্বাচনী এলকায় নির্বাচনী অপরাধ তদন্ত ও তার বিচারের জন্য বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটও নিয়োগ করা হয়েছে। আগামীকাল ২০ মার্চ থেকে এসব বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটরা তাদের দায়িত্ব পালন করবেন। তারা নির্বাচনের আগের দুইদিন, নির্বাচনের দিন ও পরের দিনসহ মোট চারদিন নির্বাচনী অপরাধ বিচার কাজে দায়িত্ব পালন করবেন। কমিশন জানিয়েছে, প্রথম দফায় ইউপি নির্বাচনের জন্য ১০১টি উপজেলায় একজন করে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া আগামীকাল থেকে নির্বাচনী এলাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে চলে যাচ্ছে। রাত ১২টার পর থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত মোবাইল ফোর্স স্টাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এর বাইরের নির্বাচনী কেন্দ্রে পুলিশ, আনসার বাহিনীর সদস্যরা কেন্দ্র নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন। এর বাইরের র‌্যাব, পুলিশ ও বিজিবি সমন্বয়ে স্টাইকিং ও মোবাইল ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ইতোমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় বহিরাগতদের এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া মোটরসাইকেল চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ভোটের আগের দিন রাত থেকে সব ধরনের যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। প্রথম দফায় আগামীকালের মধ্যে নির্বাচনের প্রচার শেষ করতে হবে। কমিশন জানিয়েছে, ৩২ ঘণ্টার আগ থেকে কোন প্রার্থী বা তার সমর্থক কোন নির্বাচনী প্রচার চালালে আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। জানা গেছে, প্রথম দফায় ৭ হাজার ভোট কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। প্রত্যেক কেন্দ্রের জন্য একজন করে প্রিজাইডিং অফিসার দায়িত্ব পালন করবেন। আগেই প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার নিয়োগ দিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। ইসি জানিয়েছে প্রথম দফায় ৭ হাজার ভোট কেন্দ্রে এক লাখের বেশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করবেন। এর বাইরে থাকবে বিচারিক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন ও অপরাধ বিচরের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন। প্রথম দফায় ২২ মার্চ ৭২২ ইউপিতে এবং পরের দিন ২৩ মার্চ আরও ১১ ইউপিসহ মোট ৭৩৩ ইউপিতে ভোট গ্রহণ করা হবে। ৩১ মার্চ দ্বিতীয় দফায় ভোট গ্রহণ করা হবে ৬৪৩ ইউপিতে। তৃতীয় দফায় নির্বাচনের জন্য তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। ২৭ মার্চ পর্যন্ত তৃতীয় দফার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেয়া যাবে। কমিশন জানিয়েছে, ইউপিতে প্রথম ধাপে ইতোমধ্যে ৬২ জন চেয়ারম্যান, ১৭৯ জন সাধারণ সদস্য ও ৫৪ জন সংরক্ষিত সদস্য পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ২২ মার্চের ভোটে তিন হাজার ৩৪ জন চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য পদে ২৫ হাজার ৮৪৭ জন ও সংরক্ষিত পদে সাত হাজার ৫৭৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন। এদিকে আগামীকাল দ্বিতীয় দফার ১০টি পৌরসভায় নির্বাচনের জন্য ভোট গ্রহণের প্রস্তুতি নিয়েছে কমিশন। এসব পৌরসভায় নির্বাচনের জন্য গত বৃহস্পতিবার ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম সংশ্লিষ্ট এলাকায় পৌঁছানো হয়েছে। এসব পৌরসভায় সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনের জন্য ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে প্রথম দফায় ২৩৪ পৌরসভায় ভোট গ্রহণ করা হয় ৩০ ডিসেম্বর। এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগে বাগেরহাটের চিতলমারীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ ফরিদ হোসেনকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ইসির উপসচিব সামশুল আলম বলেন, ফরিদ হোসেনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্ব, অবৈধ নির্দেশ দেয়া, দুর্ব্যবহার ও হুমকির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর প্রেক্ষাপটে শুক্রবার তাকে সরিয়ে উপযুক্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিতে জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিবকে চিঠি দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, চিতলমারী উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ওই প্রার্থীদের পক্ষ নিয়েই ইউএনও নির্বাচনী কর্মকর্তাদের হুমকি ও অবৈধ নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। উপজেলা নির্বাচন অফিসার কমিশনে অভিযোগ করেন, ইউএনও ফরিদের চাপে তাদের সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এসব অভিযোগ তদন্তের জন্য কমিশন একজন তদন্ত কর্মকর্তাও নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
×