ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভারত না পাকিস্তান, ইতিহাস বদলাবে আজ?

প্রকাশিত: ০৪:২১, ১৯ মার্চ ২০১৬

ভারত না পাকিস্তান, ইতিহাস বদলাবে আজ?

মিথুন আশরাফ, কলকাতা থেকে ॥ ‘ডুবছে ভারত। উড়ছে পাকিস্তান।’-টি২০ বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগে এ কথাটিই ভাসছে। তার কারণ, পাকিস্তান যে নিজেদের প্রথম ম্যাচে সহজ জয় পেয়েছে। আর ভারত হেরেছে করুণভাবে! আজ যদি ইডেন গার্ডেনে পাকিস্তানের কাছে হেরে যায় ভারত, তাহলে বিশ্বকাপের আমেজইতো শেষ হয়ে যাবে। টানা দুই ম্যাচে হেরে বিদায় ঘণ্টা ভারত ক্রিকেটারদের গলায় বাজতে শুরু করবে। সেই কাজটি কি ভারত হতে দেবে? নাকি আবারও বিশ্বকাপে পাকিস্তানের হার হয়ে যাবে এবং স্বাভাবিকভাবেই ভারত উল্টো উড়া শুরু করে দেবে? নাকি এবার অন্তত ইতিহাস বদলে যাবে? ইতিহাস যে বদলাবে তা নিশ্চিত। তবে ইডেন গার্ডেনে নির্ধারিত ওভারে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানকে হারিয়ে ভারত ইতিহাস বদলাবে, নাকি বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো ভারতকে হারিয়ে পাকিস্তান ইতিহাস বদলাবে, সেটি দেখার অপেক্ষাতেই আছে সবাই। ইতিহাস বদলানোর কথা বিশ্বকাপে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হলেই ওঠে। আর যথারীতি কোন ইতিহাস বদলায় না। পাকিস্তানের কপালে হারই লেখা থাকে। যখন ম্যাচটি বিশ্বকাপের, আর পাকিস্তান দলটি ভারতের প্রতিপক্ষ, তখন ভারতের পক্ষেই সব হিসেব থাকছে। বিশ্বকাপে ভারতের মুখোমুখি হলেই যে র্থর্থ করে কাঁপে পাকিস্তান। তা যতই আগে ভারতের বিপক্ষে জিতুক পাকিস্তান, বিশ্বকাপ আসলেই সব জয় কেমন করে যেন বেলুনের মতো ‘ঠুস’ হয়ে ফুটে যায়। নিয়তিতে পাকিস্তানের হারই লেখা থাকে। আজও কি তাই হবে? ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার এখন পর্যন্ত ৬টি ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলা হয়েছে। সেই ১৯৯২ সাল থেকে একটি ম্যাচেও জিততে পারেনি পাকিস্তান। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত শুধু ভারতই জিতেছে। ১৯৯২ সালে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ৪৩ রানে, ১৯৯৬ সালে ভারতের ব্যাঙ্গালোরে ৩৯ রানে, ১৯৯৯ সালে ইংল্যান্ডের ম্যানচেস্টারে ৪৭ রানে, ২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার সেঞ্চুরিয়ানে ৬ উইকেটে, ২০১১ সালে ভারতের মোহালিতে ২৯ রানে ও ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার এ্যাডিলেডে ৭৬ রানে জিতে ভারত। এরমধ্যে গ্রুপ পর্বেই (১৯৯২, ১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০১৫ সাল) জিতে চারবার। ১৯৯৬ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে ও ২০১১ সালে সেমিফাইনালে জিতে ভারত। নকআউট পর্বে দুইবার যে জিতে ভারত, দুটিই ভারতের মাটিতে খেলা হয়। টি২০ বিশ্বকাপেও ভারতই বাজিমাত করে। ভারতের সাথে বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলতে নামলেই পাকিস্তান ক্রিকেটারদের ‘হাটু’ কেন জানি কাঁপতে থাকে। যেন হাটু জলে হাবুডুবু খাওয়ার মতো অবস্থা হয়। এ পর্যন্ত চারবার ভারতের বিপক্ষে টি২০ বিশ্বকাপে মুখোমুখি হয় পাকিস্তান। ২০০৭ সালের প্রথম বিশ্বকাপ থেকে ২০১৪ সালের শেষবারের বিশ্বকাপ পর্যন্ত চারটি ম্যাচই হারে পাকিস্তান। কি করুণ দশা! বিশ্বকাপ মানেই হচ্ছে পাকিস্তানের ভারতভীতি শুরু হয়ে যায়। সেই ভীতিতে ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানে জেতা ম্যাচেও হেরে যায় পাকিস্তান। ম্যাচটি টাই হয়। কিন্তু প্রথম টি২০ বিশ্বকাপে ‘সুপার ওভার’ ছিল না। ছিল ‘বোল আউট’। যেখানে দুই দলের পাঁচজন করে বোলার স্ট্যাম্পে বল করবে। যে দল সবচেয়ে বেশি বল স্ট্যাম্পে লাগাতে পারবে, তারাই জিতবে। ভারত পরপর তিনটি বল স্ট্যাম্পে লাগালেও পাকিস্তানের টানা তিনটি বলই স্ট্যাম্পের বাইরে দিয়ে চলে যায়। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ হলেই কেন জানি ‘¯œায়ুচাপে’ ভোগে পাকিস্তান। সেই চাপ শেষ পর্যন্ত নিতেই পারে না। তাতে ভারতই জিতে। এ ম্যাচটি ছিল গ্রুপ পর্বের ম্যাচ। প্রথমবার হওয়া টি২০ বিশ্বকাপে যে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়, সেই ম্যাচের প্রতিপক্ষও থাকে পাকিস্তানই। চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে ৫ রানে পাকিস্তানকে হারিয়ে টি২০’র প্রথম বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। এরপর ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কার কলম্বোতে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ৮ উইকেটে ও ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মিরপুরে হওয়া বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ৭ উইকেটে জিতে ভারতই। বিশ্বকাপে ভারতের সামনে পড়লেই পাকিস্তানের গায়ে ‘কাঁপন’ ধরে যায়। মাঠে নেমে যখন খেলা শুরু হয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতা যতই হোক; শেষ পর্যন্ত জয় হয় ভারতেরই। অথচ ৫০ ওভারের ম্যাচের হিসেব দেখলে মনে হবে, পাকিস্তানেরতো হারারই কথা না! ১৯৭৮ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ভারতের বিপক্ষে ১২৭টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে পাকিস্তান। ৪টি ম্যাচের রেজাল্ট হয়নি। থাকে আর ১২৩টি ম্যাচ। ম্যাচগুলোর মধ্যে ৭২টিতে জিতে পাকিস্তান। ভারত জিতে ৫১টি ম্যাচে। পাকিস্তানই অনেক বেশি ওয়ানডে ম্যাচ জিতেছে। আবার ইডেন গার্ডেনে যে খেলাটি হবে, সেখানেও পাকিস্তানই এগিয়ে থাকছে। শুধু ইডেন গার্ডেনে নির্ধারিত ওভারে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার ম্যাচগুলো হিসেব করলে পাকিস্তান চার ওয়ানডে ম্যাচের চারটিতেই জিতেছে। শতভাগ সাফল্য মিলেছে। তবে এবার বিশ্বকাপ হচ্ছে টি২০ ফরমেটে। যে ফরমেটে ভারতের কাছে পাকিস্তানের ভরাডুবিই হয়েছে শুধু। টি২০ ক্রিকেটে ভারতই এগিয়ে আছে। এখন টি২০তে এক নম্বর দল ভারত। সেই ঝলক শুরু থেকেই পাকিস্তানের বিপক্ষে বজায় রেখেছে ভারত। ২০০৭ সাল থেকে এ বছর এশিয়া কাপ পর্যন্ত দুই দলের মধ্যকার ৭টি ম্যাচ হয়েছে। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে টাই ম্যাচে ‘বোল-আউটে’ জয়সহ ৬টিতেই জিতেছে ভারত। একটি মাত্র ম্যাচে হেরেছে। এবারও কি ভারতের মাথাতেই জয়ের মুকুট ধরা দিবে? নাকি এবার ইতিহাস বদলাবে? যখনই ভারত-পাকিস্তান খেলা হোক, যেখানেই খেলা হোক, উত্তাপ ছড়াবেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতার আমেজ মিলবেই। ম্যাচটি যখন ভারতে হচ্ছে, সেই উত্তাপ দ্বিগুণ হয়ে গেছে। যে ভারতে পাকিস্তানের খেলা নিয়ে এত সংশয়, শেষ পর্যন্ত খেলতে রাজি হওয়া এবং পাকিস্তানে গিয়ে ভারতের না খেলা; সবমিলিয়ে ম্যাচটিতে আলাদা আবহই তৈরি হয়ে গেছে। পাকিস্তান যদি ভারতকে হারাতে পারে, তাহলে শুধু পাকিস্তানে গিয়ে বা অন্য কোথাও পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের না খেলার জবাবই দেয়া হবে না, বিশ্বকাপে যে ভারতের বিপক্ষে পারে না পাকিস্তান, সেই ইতিহাসও বদলাবে। তবে ইডেন গার্ডেনে এখন পর্যন্ত ভারতের বিপক্ষে টি২০ ম্যাচ খেলেনি পাকিস্তান। তাই কি ঘটবে বোঝা মুশকিলই। বাংলাদেশকে হারিয়ে পাকিস্তান উড়ছে। নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে ভারত আছে বিপাকে। সবকিছুই মুহূর্তে পাল্টে যেতে পারে, ভারতের প্রতিপক্ষ যে আজ পাকিস্তান। আবার সেই ম্যাচটি বিশ্বকাপের। যতই সমস্যা থাকুক, যতই বিপদের মধ্যে দিয়ে যাক, বিশ্বকাপ শব্দটি যোগ হওয়াতেই ফেবারিট হয়ে গেছে ভারতই। সেখানে ইতিহাস বদলাতে পারবে পাকিস্তান? নাকি আবার বিশ্বকাপে ভারতই জিতবে এবং জিতে ইডেন গার্ডেনে যে পাকিস্তানের বিপক্ষে কখনই নির্ধারিত ওভারে জিততে পারেনি ভারত, সেই ইতিহাস বদলাবে?
×