ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুস্তাফিজকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ!

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১৯ মার্চ ২০১৬

মুস্তাফিজকে ঘিরেই স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ!

স্পোর্টস রিপোর্টার, কলকাতা থেকে ॥ সেই যে এশিয়া কাপে ইনজুরিতে পড়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান, এখনও ঠিক হয়ে উঠতে পারছেন না। বাছাইপর্বের তিনটি ম্যাচ খেলতে পারেননি। খেলতে পারেননি ইডেন গার্ডেনে পাকিস্তানের বিপক্ষে ‘সুপার টেনে’র প্রথম ম্যাচেও। যদি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও মুস্তাফিজ না খেলতে পারেন, তাহলে বাংলাদেশ বিপাকে পড়বে আবারও। তাই মুস্তাফিজকে কিভাবে খেলানো যায়, সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে। বাংলাদেশ দলের এখন যে অবস্থা দাঁড়িয়েছে, তাতে মুস্তাফিজকে ঘিরেই এখন স্বপ্ন দেখা হচ্ছে। সেই স্বপ্ন সফল হওয়ার পথেও। ব্যাঙ্গালুরুতে শুক্রবার অনুশীলন সেরেছে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। সেই অনুশীলনের পর শান্তির খবরও আছে। বাংলাদেশ পেসার ‘কাটার’ মাস্টার মুস্তাফিজ পুরোদমে ৪ ওভার বোলিং করেছেন। তার মানে ফিট মুস্তাফিজ! বাংলাদেশ দলের বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক অবশ্য নিশ্চিত করতে পারলেন না। তবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২১ মার্চের ম্যাচের জন্য যে মুস্তাফিজকে পুরোদমে ঠিক করে ফেলার চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই তা জানিয়ে দিলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের জন্য আমরা ওকে প্রস্তুত করার চেষ্টা করছি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়তো আমরা ম্যাচের দিন নেব। তবে এই মুহূর্তে সবকিছু খুব ভাল মনে হচ্ছে। ওর অবস্থা ভাল। তবে ম্যাচের দিনই কেবল আমরা শতভাগ নিশ্চিত করে বলতে পারব।’ হিথ স্ট্রিক অবশ্য নিশ্চিত করেছেন, মুস্তাফিজ পুরোদমে বোলিং করতে পারছেন। সেটিই যে শান্তির বার্তা হয়ে আসল সবার মাঝে। স্ট্রিক বলেছেন, ‘পুরো গতির কাছাকাছিতেই বোলিং করছে। এখন ব্যাপারটা হলো ওর আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়া। প্রায় ৩ সপ্তাহ হলো বোলিং করছে না, ছন্দ ফিরে পাওয়ার ব্যাপার আছে। সেভাবেই প্রস্তুত করা হচ্ছে। তবে যেটা বললাম, ম্যাচের দিন ফিটনেস টেস্টের পরই সিদ্ধান্ত হবে।’ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে যতক্ষণ থাকলেন স্ট্রিক, শুধু মুস্তাফিজ নিয়েই তার সামনে প্রশ্ন ছুড়তে থাকল। ‘সুপার টেনে’ প্রথম ম্যাচে হেরে গেছে বাংলাদেশ। তাও আবার বোলিংয়ে যাচ্ছে তাই অবস্থা হয়েছে। না হলে পাকিস্তান ২০১ রান করতে পারতো না। ব্যাঙ্গালুরুর উইকেট পুরোপুরি ব্যাটিং সহায়ক। সেখানে মুস্তাফিজের মতো বোলার না থাকলে অসিদের শক্তিশালী বোলিংয়ের সামনে কুলিয়ে ওঠা মুশকিল হয়ে যাবে। স্ট্রিক যেন তা বারবার বোঝানোর চেষ্টাও করলেন, ‘আমাদের জন্য সে দারুণ গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার। এমনকি এশিয়া কাপের ফাইনালে ওকে পেলেও হয়তো আমাদের সম্ভাবনা খুব ভাল থাকত। ওই রানে আমরা হয়তো ভারতকে আটকাতে পারতাম। পাকিস্তানের বিপক্ষেও ওর সাফল্য আছে। আগের ম্যাচে ওকে পেলে তাই দারুণ হতো। কিন্তু পেসারদের ইনজুরি হবেই, এটা কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এশিয়া কাপে আল আমিন, মাশরাফি, তাসকিন দায়িত্ব নিয়ে দারুণ বোলিং করেছে। ওদের নিয়ে আমি খুশি। মুস্তাফিজও ফিট হয়ে বিবেচনায় ফিরলে আমাদের জন্য হবে দারুণ ইতিবাচক। আজকে (শুক্রবার) ৪ ওভার বোলিং করেছে। কোন ব্যথা অনুভব করেনি।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘সে সবকিছুই চেষ্টা করেছে নেটে। অস্বস্তি নেই। এই মুহূর্তে সবই ভাল। তবে আবারও বলছি, ম্যাচ ইনটেনসিটি ভিন্ন ব্যাপার। আমরা ম্যাচের দিনই সিদ্ধান্ত নেব। মুস্তাফিজ আমাদের জন্য এমন গুরুত্বপূর্ণ একজন, পরের তিন ম্যাচের জন্য ওকে পেলে দারুণ হবে। আশাকরি, সবকিছু ঠিকঠাক এগোবে। আশাকরি সে নিজের ভূমিকা রাখতে পারবে। শতভাগ ফিট হলেই কেবল ওকে খেলানো হবে।’ স্ট্রিক এক পেসার। এখন বাংলাদেশ দলে পেস বিভাগটাকেই সামলাচ্ছেন স্ট্রিক। তাই পেসারদের দিয়েই প্রতিপক্ষকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাতে সাফল্যও মিলছে। চারজন পেসারও বাংলাদেশ দলে খেলানো হয় এখন এবং জয়ও মিলেছে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও কি সেই রকম কিছুই ঘটবে? স্ট্রিক জানালেন, ‘বোলারদের শৃঙ্খলা দেখাতে হবে। ঠিক জায়গায় বল রাখতে হবে এবং বৈচিত্র্য দেখাতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্ভবত সুনির্দিষ্ট ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে পরিকল্পনা। নিশ্চিত করতে হবে যেন পরিকল্পনা মতো আমরা বোলিং করি। এজন্যই আমরা ওদের নিয়ে বিশ্লেষণ করব। আমি তো সবসময়ই বলি ৪ সিমার খেলতে পারে। কিন্তু প্রতিপক্ষ, পরিস্থিতি বুঝে আমরা আক্রমণ সাজাব।’ সেই প্রতিপক্ষ নিয়ে যখন হিসেব করা হচ্ছে, তখন প্রতিপক্ষের ব্যাটিং শক্তির দিকেই মনোযোগ দিতে হচ্ছে। সেই মনোযোগে এলোমেলো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে। যেমনটি পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘটেছে। স্ট্রিক তাই ব্যাটিং নিয়ে যখনই কথা বলেছেন ব্যাঙ্গালুরুর উইকেট যে ব্যাটিং নির্ভর তাই বোঝাতে চেয়েছেন। তাতে মুস্তাফিজও যে বিপাকে পড়তে পারে, সেটিও নজরে এনেছেন, ‘এটি খুব ভাল ব্যাটিং উইকেট। খেললে ওকে (মুস্তাফিজকে) দ্রুত মানিয়ে নিতে হবে। ব্যাঙ্গালুরু সবসময়ই বড় রানের মাঠ, ব্যাটিংয়ের জন্য দারুণ। খেললে ওকে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে। সব বোলারের জন্যই আসলে চ্যালেঞ্জ। সব বোলারকেই নিজের খেলার চূড়ায় থাকতে হবে।’ তবে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের জন্যও যে এটি সুযোগ সেটিও মনে করিয়ে দিলেন স্ট্রিক, ‘আমাদের ব্যাটসম্যানদের জন্য অবশ্যই খুব ভাল সুযোগ রান করার। ভাল ব্যাটিং উইকেট। আমদের কয়েকজন এখানে খেলে গেছে ‘এ’ দলের হয়ে। সাব্বির রান করে গেছে। আশাকরি ওরা সেই আত্মবিশ্বাস এখানে বয়ে আনবে।’ জাতীয় দলের হয়ে বাংলাদেশের কোন ক্রিকেটার এখনও ব্যাঙ্গালুরুতে না খেললেও গতবছর সেপ্টেম্বরে ব্যাঙ্গালুরুতে ভারত ‘এ’ দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে তাসকিন আহমেদ, সৌম্য সরকার, নাসির হোসেন, আরাফাত সানি, সাব্বির রহমান খেলেছেন। তাদের অভিজ্ঞতাই এখন পুঁজি বাংলাদেশের। আর সঙ্গে মুস্তাফিজকে নিয়েই স্বপ্ন দেখা হচ্ছে।
×