ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ফের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা পিয়ংইয়ংয়ের

কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় ॥ উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ১৯ মার্চ ২০১৬

কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় ॥ উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা

উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দুই সপ্তাহ পর চীনের কয়েকটি বাণিজ্যিক ও শিপিং প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়া থেকে আমদানি নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তাদের কিছু জানানো হয়নি। এর ফলে কমিউনিস্ট শাসিত দেশটির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এদিকে দেশটি শুক্রবার পূর্ব উপকূলে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। খবর ইয়াহু নিউজ ও ওয়েবসাইটের। বহির্বিশ্ব থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হলেও উত্তর কোরিয়া চীনের সহায়তায় অর্থনীতি টিকিয়ে রেখেছে। উত্তর কোরিয়ার ৯০ শতাংশ বৈদেশিক বাণিজ্য চীনের সঙ্গে হয়ে থাকে। এ কারণে জাতিসংঘ দেশটির বিরুদ্ধে একটির পর একটি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও পিয়ংইয়ংয়ের অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ছে না। পরমাণু ও ব্যালিস্টিক কর্মসূচীর জন্য জাতিসংঘ দেশটির বিরুদ্ধে চলতি মাসের ২ তারিখ সর্বশেষ কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কয়লা। এটি রফতানি করে নগদ সবচেয়ে বেশি অর্থ আয়। পাশাপাশি কয়লা বিনিময় করে তেল, খাদ্য ও যন্ত্রপাতির মতো প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলোর সংস্থান করা হয়। উত্তর কোরিয়ার বন্দরনগরী ডানডংয়ের ওপর বেশিরভাগ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে। চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বন্দরগুলোতে কর্মকর্তাদের অনেকেই জানিয়েছেন যে, তারা উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত কর্র্তৃপক্ষের কোন লিখিত নির্দেশনা পাননি। এই বন্দরগুলো দিয়ে উত্তর কোরিয়া থেকে কয়লার চালান চীনের মধ্যে এসে থাকে। চীনের বন্দরনগরী দালিয়ানের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘আমরা এই কাজটি করতে পারব না এমন কোন সরকারী নির্দেশ আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়নি। উত্তর কোরিয়ার ওপর আদৌ কোন নিষেধাজ্ঞা আরোপিত আছে কি এ ব্যাপারে আমি স্পষ্ট করে কিছুই জানি না। আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘জাতিসংঘ সদস্য দেশগুলোর দায়িত্ব নিষেধাজ্ঞা তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়িত করা। কিন্তু লক্ষ্য করা গেছে, উত্তর কোরিয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘ আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো অনেকটাই যেন দায়সারা গোছের। চীন যদিও উত্তর কোরিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র কিন্তু দেশটির বিরুদ্ধে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা আরোপকে সমর্থন করেছে। একই সঙ্গে চীন এটাও চায় যে, কোরিয়া উপদ্বীপে স্থিতিশীলতা বজায় থাকুক। সেখানে কোন ধরনের অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়লে লাখ লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়ে সীমান্ত অতিক্রম করতে পারে। একজন বিদেশী পর্যবেক্ষক বলেছেন, সীমান্ত প্রহরায় নিয়োজিতদের প্রতি বেজিংয়ের কোন নির্দেশনা নেই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা এখনও নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে পুরোপরি অবগত নন। সীমান্তবর্তী একটি নদীর তীরে এক দোকানে দেখা গেল উত্তর কোরিয়ার এ্যালকোহল, সিগারেট, জিনসেং ইত্যাদি জিনিস বিক্রি হচ্ছে। দোকান মালিক বলেছেন, তিনি যেসব জিনিস বিক্রি করেন তা নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়ে না। চীনের কাস্টমস কর্মকর্তারা প্রতিটি শিপমেন্টের পণ্য সেভাবে যাচাই করে দেখেন না। এদিকে উত্তর কোরিয়া শুক্রবার জাতিসংঘ আরোপিত নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সমুদ্রে নিক্ষেপ করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সমুদ্রে নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৮০০ কিলোমিটার (৫০০) মাইল। উত্তর কোরিয়ায় পূর্ব উপকূল থেকে এ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়। তবে উত্তর কোরিয়া এ বিষয়ে কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। দক্ষিণ কোরিয়ার বার্তা সংস্থা ইয়োনহ্যাপ খবরটি দিয়েছে। মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র বলেছেন, উত্তর কোরিয়া দুটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। প্রথমে একটি পরে আরেকটি। দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্রটিকে তারা শনাক্ত করতে পেরেছেন। এটি মধ্যাকাশেই ভেঙ্গে সাগরে পড়ে যায়। দক্ষিণ কোরিয়ার পুরোটা ও জাপানের কিছু অংশ এসব ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লার মধ্যে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র উত্তর কোরিয়াকে আঞ্চলিক উত্তেজনা বৃদ্ধি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানায়, তারা কোরীয় উপদ্বীপের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। মুখপাত্র জন কারবি বলেন, এ অঞ্চলে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি করে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে এবং আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতি ও বাধ্যবাধকতা পূরণে দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিতে আমরা উত্তর কোরিয়ার প্রতি আবারও আহ্বান জানাচ্ছি।
×