ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ধনীরামপুর ক্যাম্পে যোগ দেন মুক্তিযোদ্ধা গৌরী রানী

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ১৯ মার্চ ২০১৬

ধনীরামপুর ক্যাম্পে যোগ দেন মুক্তিযোদ্ধা গৌরী রানী

১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে সেদিন অনেক সাধারণ নারী নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিল। দেশকে শত্রুমুক্ত করতে পুরুষের পাশাপাশি সেদিন নারীরা হাতে তুলে নিয়েছিল অস্ত্র। অনেক নারী মান-সম্ভ্রম বিসর্জন দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সেবা শুশ্রƒষা ও সহযোগিতা করেছিল। শত্রু বিনাশ করতে সেদিন বাংলার বধূরা হাতে তুলে নিয়েছিল হাতিয়ার। মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যেসব সাহসী নারী সেদিন ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তাদের মধ্যে গৌরী রানী তরফদার একজন। নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার আহম্মদপুরে ১৯৪৪ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুরের রবীন্দ্রনাথ তরফদারের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে গৌরী রানী তখন ২৫ বছরের যুবতী। গৌরী রানী তরফদারের বাবা ভূপেন্দ্রনাথ চাকী সে সময়ে রাজনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। সেই সুবাদে ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে রাজনৈতিক কর্মকা-ে অংশ নেয়ার সুযোগ হয় তাঁর। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত বাবা-মেয়ে উভয়ই ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা থেকে নাটোরের আহম্মদপুরে পাক-সেনারা অবস্থান নিলে গৌরী রানী সপরিবারে দেশত্যাগে বাধ্য হন। সে সময় মুক্তিযুদ্ধের বীভৎসতা আর ভয়াবহতা দেখে তিনি স্থির থাকতে পারেননি। সিদ্ধান্ত নেন যেভাবেই হোক দেশের, দেশের মানুষের জন্য কিছু করবেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর কিছুদিন পরই তিনি পশ্চিমবঙ্গের ধনীরামপুর ক্যাম্পে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় তিনি সেখানে অবস্থান করে ট্রেনিংয়ে আসা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রান্নাবান্না, অস্ত্র পরিষ্কার করা, মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবাসহ নানা কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখেন। গৌরী রানী তরফদারের বয়স এখন ৭২ বছর। দেশ স্বাধীনের পর ২৮ বছর ধরে স্বামীগৃহে থাকার পর বর্তমানে তিনি বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন। দাম্পত্য জীবনে তিনি দুই ছেলে ও তিন মেয়ের জননী। বর্তমানে দুই ছেলে, পুত্রবধূ, নাতনি নিয়ে তার দুঃখের সংসার। ছেলেরা বেকার হওয়ায় পরিবারের চাকা ঘোরাতে এখনও তার অবদান সবচেয়ে বেশি। মুক্তিযোদ্ধা সনদপত্র থাকা সত্ত্বেও তিনি দীর্ঘদিন মুক্তিযোদ্ধা ভাতা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। পরে জনকণ্ঠে সংবাদ প্রকাশের পর ২০১১ সাল থেকে তিনি মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন। এছাড়া খাসজমি স্থায়ীভাবে পত্তনী না পাওয়ায় বসতভিটা নিয়ে দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করছেন বলে জানান। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিনি আকুতি জানিয়ে বলেন, আমার ভাতা যেন বন্ধ না হয়, তাহলে না খেয়ে মরতে হবে। Ñকালিদাস রায়, নাটোর থেকে
×