ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী

প্রকাশিত: ০৩:৪৬, ১৯ মার্চ ২০১৬

মুক্তিযোদ্ধা ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী

সময়ের সাহসী সন্তান ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী। তিনি মুক্তিযোদ্ধা, নারী সংগঠক, সমাজসেবক ও শিক্ষানুরাগী। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে শেষ বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ শোনার জন্য তরুন ছাত্রনেতা স্বামী অ্যাডভোকেট তাফাজ্জল হায়দার নসু চৌধুরীকে নিয়ে ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়াদী উদ্যান) যান। রেসকোর্স ময়দান ছিল লাখো জনতায় ঠাসা। কারও হাতে বাঁশের লাঠি। ২৫ মার্চ গভীর রাতে পাক সেনাদের হামলার পর তিনি ও তাঁর স্বামী ২৭ মার্চ ঢাকা থেকে হেঁটে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে চলে আসেন। ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল চাঁদপুর অঞ্চলে গঠিত প্রথম স্থানীয় সরকারে আমি ও আমার স্বামী অ্যাডভোকেট তাফাজ্জল হায়দার নসু চৌধুরী যোগ দেই। নবগঠিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১২০৪ সাব সেক্টরের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন জহিরুল হক পাঠানের মধুমতি কোম্পানীর মেডিকেল অফিসার হিসেবে আহত ও অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের সেবার মাধ্যমে নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পৃক্ত করি। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১২০৪ সাব সেক্টরের অধীন হাজীগঞ্জের অলিপুর প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে হালকা অস্ত্র চালনা ও আত্মরক্ষার কৌশলের উপর প্রশিক্ষণ নেই। এ সময় আমার সাথী যোদ্ধা ছিলেন প্রকৌশলী দেলোয়ার হোসেন, আজিম, তরিক ও রতনসহ আরও অনেকে। এ মুহুর্তে অনেকের নাম মনে নেই। এ প্রশিক্ষণ ক্যাম্প অধিনায়ক ক্যাপ্টেন জহিরুল হকের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়েছে। ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ সালের একটি দিনের কথা আজও আমার স্পষ্ট মনে পড়ে। সেদিন ছিল সেপ্টেম্বর মাসের ২৯ তারিখ। শরৎকাল শেষ হতে বেশি দেরি নেই। আশ্বিন মাসের শেষ দিন বুধবার রাত ১১টা। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আমরা সবাই নৌকায় ছিলাম। সংখ্যায় ৪০ মুক্তিযোদ্ধা। আমাদের ক্যাপ্টেন আবদুর রহমান। সেদিন শাহরাস্তির চিতোষী আর.এন্ড.এম হাইস্কুলে পাক বাহিনীর ক্যাম্পে মুক্তিযোদ্ধারা অতর্কিত হামলা চালায়। তুমুল যুদ্ধের পর পাক বাহিনী অসংখ্য লাশ রেখে ভোরে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাম্প দখল করে আমাকে খবর দেয়। সংবাদ পাওয়া মাত্র আমি ক্যাম্পের ভিতরে যাই। আগেই খবর ছিল পাক বাহিনী চিতোষী উচ্চ বিদ্যালয় ক্যাম্পে ১৫/২০ বছর বয়সী ২০/২৫ যুবতী নারীকে আটকে রেখে নির্যাতন করছে। দেখলাম, এদের কয়েকজনের গায়ে কোন কাপড় নেই। সারা শরীরে ক্ষতের চিহ্ন। মেডিকেল টিমের প্রধান হিসেবে চিকিৎসার দায়িত্ব পড়ে আমার ওপর। আমি সেদিন বিবস্ত্র মেয়েদের দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। আমার বোরকা ও ওড়না দিয়ে যতটুকু সম্ভব তাদের ঢাকার চেষ্টা করেছি। পরে আশে পাশের বাড়ি থেকে কাপড় এনে তাদের নৌকায় করে পানিয়ারা মেডিকেল ক্যাম্পে এনে সুস্থ করে তুলি। মুক্তিযোদ্ধা ভাইয়েরা তাদের কথা অনুযায়ী আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। ডা. সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী বলেন, আমি মধুমতি কোম্পানীর চাঁদপুর অঞ্চলসহ নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লার সর্বমোট ১১টি অঞ্চলে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা দিয়েছি। ফরিদগঞ্জের সাইসিয়ালি যুদ্ধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহত হয়েছিলেন। তার শরীরে গুলি লাগে। তাকে পানিয়ালা ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। অনেক চেষ্টার পরও তাকে আর বাঁচানো যায়নি। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সৈয়দা বদরুন নাহার চৌধুরী ২০১২ সালে স্বাধীনতা পদক লাভ করেন। এছাড়া তিনি স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন সংগঠন ও সমাজ সেবা প্রতিষ্ঠান থেকে অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন। Ñজালাল চৌধুরী চাঁদপুর থেকে
×