ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আবদুল বাসিত মোহাম্মদ

দুর্গম পথের যাত্রী

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ১৮ মার্চ ২০১৬

দুর্গম পথের যাত্রী

শিশু-কিশোরদের উপযোগী সাহিত্যকর্মের পরিচর্যা করা, যেমন শিশু-কিশোরদের লালনপালন করার মতো সুকঠিন কর্মের মতোই একটি। চঞ্চলতা, অস্থিরতা ব্যতিক্রমী মনমানসিকতা যেমনি শিশু-কিশোরদের মাঝে সদা জাগ্রত থাকে, তেমনি তাদের উপযোগী সাহিত্য কর্মেও এ ধরনের ব্যতিক্রমী কিছু উপকরণ রাখতে হয়। তাই এ কাজটা সাহিত্য প্রতিফলন করা অনেকটা দুষ্কর এবং কষ্টসাধ্য। এ কষ্টসাধ্য কর্মটি যারা করেন তারা প্রশংসার দাবি রাখতেই পারেন। ছড়া-সাহিত্য বিশেষ করে শিশুদের উপযোগীই হয়ে থাকে। যদিও বড়দের জন্যও ছড়ার অবদান একেবারে কম নয়। রাজনীতি, সমাজনীতি, ধর্মনীতিসহ সবধরনের সঙ্গতি-অসঙ্গতিও ছড়ার মাধ্যমে উদ্ঘাটিত হয় এবং হচ্ছে। শিশু-কিশোরদের জন্য ছড়া, পদ্য এবং কিশোর কবিতা বাংলা সাহিত্যের একটা বিশাল ভা-ার আছে। এই ভা-ারকে ইদানীংকালে যারা সমৃদ্ধ করছেন তাদের অন্যতম একজন তারকা পৃথ¦ীশ চক্রবর্ত্তী। তিনি শিশু-কিশোরদের জন্য স্মরণযোগ্য কাজ করে চলেছেন অনবরত। মফস্বলের ছোট্ট একটি শহর নবীগঞ্জ। সিলেটের হবিগঞ্জ জেলার নিভৃত পল্লীময় শহর। এখানে থেকেও রাজধানী ঢাকার লেখকদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে লিখে যাচ্ছেন হর-হামেশা। জাতীয় এমন কোন পত্রিকা নেই যেসব পত্র-পত্রিকায় লেখার সুযোগ আছে, অথচ পৃথ¦ীশ চক্রবর্ত্তী লিখছেন না। নব্বই দশকের শেষ দিক থেকে তার লেখালেখির শুরু। এ পর্যন্ত তার ৩টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আলোচিত গ্রন্থ ‘দুর্গম পথের যাত্রী’ তার ৪র্থ গ্রন্থ। তার ‘উদর বাণী’ ও ‘নোনা জলের বৃষ্টি’ কাব্যগ্রন্থ হলেও লেখার মধ্যে শিশু-কিশোরদের গন্ধে বিভোর। ‘বৃষ্টি পড়ে তিথির বাড়ি’ ও ‘দুর্গম পথের যাত্রী’ পরিপূর্ণ শিশু-কিশোরদের জন্য পদ্য ও কবিতা। তিনি সহজ-সরল ভাষায় শিশু-কিশোরদের উপযোগী লেখালেখিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। জাতীয় পর্যায়ের স্বনামধন্য প্রকাশনী ‘উৎস প্রকাশন’ কর্তৃক প্রকাশিত ‘দুর্গম পথের যাত্রী’ গ্রন্থে মোট ৫৪টি কবিতা স্থান পেয়েছে। গ্রন্থের ১ম কবিতাটার শিরোনামেই গ্রন্থের নামকরণ করা হয়েছে। আলোচ্য কাব্যগ্রন্থে কবি প্রত্যেকটি কবিতাকেই ‘কিশোর কবিতা’ হিসেবে গ্রহণযোগ্যতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করেছেন। কবি ৪টি সনেট কবিতাও কিশোরদের উপযোগী করতে সক্ষম হয়েছেন। ‘কবির বসন্ত’, ‘সুরমা পাড়ের কবি’, ‘বোধ পরিভ্রমণ’, ও ‘লাবণ্য মিশ্রিত নারী’- সনেট। তার বিশেষত্ব হচ্ছে- সনেটগুলো কিশোর উপযোগী। আধুনিক গদ্যছন্দের কবিতাও যে কিশোর উপযোগী করা যায়- তার প্রমাণ এ গ্রন্থে কবি পৃথ¦ীশ চক্রবর্ত্তী স্বযতেœ প্রমাণ করেছেন। ‘ঋতুচক্র’, ‘শহরে শরৎ নেই’, ‘প্রকৃতির শ্যামল প্রান্তরে নেমে এলো শীত’, ‘কবির জন্য এলিজি’ ও ‘পানি বিষয়ক কবিতা’-সম্পূর্ণ আধুনিক গদ্য- ছন্দে অথচ কিশোরদের জন্য পাঠযোগ্য। এ কবির বর্তমান কাব্যগ্রন্থ ‘দুর্গম পথের যাত্রী’ একটি সার্থক কিশোর কাব্যগ্রন্থ। এ গ্রন্থে স্থান পেয়েছে কবি পৃথ¦ীশ চক্রবর্ত্তীর ‘কাক কবি’ নামক একটি জবাবী সার্থক কবিতা। কোন কোন কবি প্রায়শই বলে থাকেন বাংলাদেশে নাকি ‘কাকের থেকে কবির সংখ্যা বেশি’। কবি পৃথ¦ীশ চক্রবর্ত্তী এর সুন্দর এবং মূলত প্রতিবাদী একটা কবিতা এ গ্রন্থে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ‘কাক কবি’ নামক কবিতায়। তিনি বজ্রকণ্ঠে কাব্যমাখানো সূরে এর তীব্র প্রতিবাদ করেছেন। প্রতিবাদী ভাষাটাও ভিন্ন। তিনি এ কথাকে গ্রহণও করেছেন এবং বলেছেন ‘কাক কবি’ কে কাক?, কে কবি? তা-পাঠক মাত্র বোঝেন। পাড়ার লোকে বোঝেন। তাই তিনি কাক তাড়ানোর জন্য পাড়ার বোদ্ধাদের সোজা-সাপটা আহ্বান করেছেন এবং বলেছেন, আপনারা কাকদের তাড়িয়ে দিন। কবিকুলে কাকের কোন স্থান নেই। বাদবাকি কবিতাগুলোর পাঠমূল্য পাঠকদের হাতে ছেড়ে দিলাম। গ্রন্থের প্রচ্ছদ শিল্পী মোস্তাফিজ কারিগর পরিচ্ছন্ন হাতে প্রচ্ছদ করেছেন। ঝকঝকে ছাপার জন্য প্রকাশক মোস্তফা সেলিম দক্ষতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। উৎসর্গ পাতায় কবির পিতা-মাতা ও শ্বশুর-শাশুড়িকে একই সারিতে যুগপৎ দাঁড় করিয়েছেন। এখানেও কবি একটি অনবদ্য কবিতার জন্ম দিয়েছেন। মলাটের ভাঁজে কবি আসলাম সানী লিখেছেন কবি পৃথ¦ীশ চক্রবর্ত্তীর সংক্ষিপ্ত সার গুণকীর্তন। সত্যকে তিনি বাণীবদ্ধ করেছেন সহজ-সরল ভাষায়। সবশেষে বলতে চাই কবি পৃথ¦ীশ চক্রবর্ত্তীর ২০১৬ জাতীয় বইমেলায় দেশের স্বনামধন্য প্রকাশনী ‘উৎস প্রকাশন’ থেকে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘দুর্গম পথের যাত্রী’-কাব্যপ্রেমীদের জন্য এক অনবদ্য সংযোজন। এ গ্রন্থখানা পড়ার এবং সংরক্ষিত রাখার যথেষ্ট কারণ আছে। কাব্যপ্রেমীরা একবার হাতে নিলে এবং চোখ বুলালেই না টের পেয়ে যাবেন।
×