ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হামিদুর রহমান

অনীক মাহমুদের ‘কাব্যসারথি’ ॥ মননে-সৃজনে-চিন্তনে

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ১৮ মার্চ ২০১৬

অনীক মাহমুদের ‘কাব্যসারথি’ ॥ মননে-সৃজনে-চিন্তনে

জীবনকে কবিতাময় এবং কবিতাকে জীবনময় করে তোলার মতো এক দুঃসাধ্য শিল্পকর্মে কবি অনীক মাহমুদ ঈর্ষণীয়মাত্রায় সিদ্ধহস্ত ও সার্থকজন। বহুমাত্রিকতায় অভিনিবেশ করতে গিয়ে কাব্যজীবনের নানা সময়েই অনীক মাহমুদের কাব্যিক পর্বান্তর ঘটেছে বিষয়ে ও প্রকরণে। নিজেকে প্রতিনিয়ত নিরীক্ষিত রেখে ঘটিয়েছেন কাব্যবোধের উত্তরোত্তর উত্তরণÑ যা প্রত্যেক কবির জীবনেই আরাধ্য। তার সৃষ্টিকর্ম সৃজনশীল ও মননশীল উভয়বিধ ধারাতেই পেয়েছে উচ্চস্থান ও শৈল্পিক পরিজ্ঞান। অতি সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার ‘চারুপাঠ প্রকাশনা’ থেকে প্রকাশ লাভ করেছে অনীক মাহমুদের নির্বাচিত কবিতার সংকলন ‘কাব্যসারথি’। অনবরত নিরীক্ষাপ্রবণ কবি অনীক মাহমুদের সর্বমোট ২২টি কাব্যগ্রন্থের সুনির্বাচিত কবিতাগুলোর এক স্বয়ংসম্পূর্ণ সংকলন ‘কাব্যসারথি।’ গ্রন্থটিতে মোট কবিতাসংখ্যা ৩৭৮টি। প্রকাশকালের ধারাবাহিকতায় গ্রন্থগুলোর নামপরিচিতি এরকমÑ প্রেম বড় স্বৈরতন্ত্রী (১৯৯৫), একলব্যের ভবিতব্য (১৯৯৭), ভরদুপুরে আমার মাকে (১৯৯৭), দুলকি ঘোড়া চাবুক কড়া (১৯৯৭), আসন্নবিরহ বিষণœবিদায় (২০০৪), এইসব ভয়াবহ আরতি (২০০৪), মাধবী রাতের গান (২০০৬), নষ্ট জ্যোৎস্নার ক্যারাভান (২০০৬), শেয়াল মামার খেয়াল (২০০৬), দীর্ঘদংশন নীলজ্বালা (২০০৭), বৃহন্নলা ছিন্ন করো ছদ্মবেশ (২০০৭), সুমিত্রাবন্ধন (২০০৯), চৈতীচাঁদে রাহুর লেহন (২০০৯), হৃৎ-খৈয়ামের রুবাইয়াৎ (২০১১), কান্তবোধি কবিতিকা (২০১২), ভদ্রলোকসংহিতা (২০১২), বনসাঁই রূপবন্ধ (২০১৫), তখনো বৃষ্টি ঝরছিলো (২০১৫), কালিন্দী-আকাশ-কংসগহ্বর (২০১৫), দিনযাপনের গ্লানি (২০১৫)। ‘কাব্যসারথি’র উৎসর্গপত্রে আছেন ‘আমার চেতনার শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান পরম শ্রদ্ধাস্পদেষু।’ কাব্য হতে কাব্যের ক্রমতুলনায় নিম্নোক্তভাবে কবি অনীক মাহমুদ আমাদের কাছে প্রতিভাতÑ প্রেম বড় স্বৈরতন্ত্রী (১৯৯৫) : একটি হাঁটি হাঁটি পা পা’র রোডম্যাপ ১৯৭৭-১৯৯১ কালপরিসীমায় লিখিত কবিতাগুলোকে মলাটবন্দী করেছেন কবি, যেখানে প্রেমচেতনাই মুখ্য বিষয় হিসেবে উদ্ভাসিত। কবির স্বগতোক্তি- ‘ভালোবাসা মানে জীবন জারক/ভুল বুঝে কাঁদা অকারণ,/ভালোবাসা মানে মরণ মসীতে/দুঃখিতের লেখা ব্যাকরণ।/ভালোবাসাবাসি করে যেই লোক/ বড় বেয়াকুব বিশ্বের,/ আমি তাঁকে বলি মানব-ঈশ্বর/ হৃদয় সরসী নিঃস্বের’। প্রেমকে বহুমাত্রিক করে প্রকাশের এক সফল কাব্যিক প্রয়াস সমস্ত কাব্যটিতে দৃষ্ট। একলব্যের ভবিতব্য (১৯৯৭) : প্রেম প্রকাশের অন্য ও অনন্য প্রয়াস নারীপ্রেম হতে সাময়িক বিচ্যুত হয়ে ব্যক্তিপ্রেমকে মুখ্য করে কাব্যসৃষ্টিতে অনীক মাহমুদ ‘একলব্যের ভবিতব্য’র উত্থাপন ঘটান। কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশমুূখ দেখেছিল ১৯৯৭ সালে বিশ্বসাহিত্য ভবনের ব্যানারে। ‘প্রেম বড় স্বৈরতন্ত্রী’র অন্তঃপাতী কবিতাগুলোর সমসাময়িককালেই ‘একলব্যের ভবিতব্য’র কবিতাগুলো রচিত হলেও গ্রন্থবদ্ধ কার জন্য আলাদা দুটি কাব্যগ্রন্থকে বেছে নেয়ার পেছনেও ছিল যুক্তিযুক্ত কারণ। এই দুটি কাব্যগ্রন্থকে পর্যায়ক্রমে পাঠ করলে আগ্রহী পাঠমাত্রই পেতে পারেন সে জিজ্ঞাসার উত্তর। একলব্যের ভবিতব্যতে মূলবিষয় আসলে বিভিন্ন কবি-ব্যক্তিত্বকে উপলক্ষ্য বানিয়ে সম্মানসূচক কাব্যনির্মাণ। যথাÑ বিষের প্রপাত ছুঁয়ে অকালে বুনলো প্রেম-কাপুরুষ ফজল মামুদ, পৃথিবীর রঙ খেয়ে দারিদ্র্যের জলসায় গান গেলো আবুল হাসান, আমুত্যু মুক্তির স্বপ্নে খেঁই হারিয়ে কাঁদলো পাবলো নেরুদা আমি আজ বুমেরাং হাতে নিজেকে শপতি করে যুদ্ধে যাবো। এইসব ভয়াবহ আরতি (২০০৪) : পরাবাস্তবের দলিলে বাস্তবের স্বাক্ষর সুররিয়ালিস্টিক ইমেজের শিল্পসুষমায় ইতিহাসচেতনা, রাজনীতি, সামাজিক দায়বদ্ধতা, প্রেম, বাস্তবতাবোধ, মানসিকতা ও বৈশ্বিক আবহে সমৃদ্ধ এই কাব্যগ্রন্থটি। কাব্যের শিরোনামে জীবনানন্দের পঙ্ক্তির ব্যবহার এবং ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ ও ‘শকুন’ কবিতার অনুপ্রেরণায় লিখিত কবিতা এই কাব্যগ্রন্থটিতে থাকলেও সমস্ত কাব্য পাঠে আমরা এক ধরনের স্বকীয় অনীকীয় শিল্পোৎকর্ষ প্রত্যক্ষ করি। ২০০৪ সালে প্রকাশিত এই কাব্যে সুররিয়লিস্টিক ছদ্মবেশে সুপারস্ট্রাকচারের বিরুদ্ধ-উচ্চারণ বিদ্যমান। যেমন- ‘শৃগালের চোখ থেকে ধূর্ততার মণিবীজ নিয়ে/ ঘাসশুদ্ধ খেয়ে ফেলে ঘোড়াগুলো কৃষকের মাঠের ফসল/ মাঠ হয় মন্ত্রিপাড়া, ভেড়াদের পদশব্দে রাজপথে জাগে মার্সিডিস’ (জৈগুনের ভেড়াগুলো)। ‘মধ্যরাতে রক্তচাটে বধ্যভূমি, লবণাক্ত স্বাদে/ ধেয়ে আসে শকুনি গৃধিনী’ ‘আর নাই বিশ্বাসের তরুমূল’ ‘কী আশ্চর্য মানুষগুলো হিংসার কর্দম মেখে/ বুনো শূকরের চিৎকার করতে করতে অন্ধকার চিরে চিরে/কচুক্ষেতে দলবেঁধে নেমে গেল।’ নষ্ট জ্যোৎস্নার ক্যারাভান (২০০৬) : সেকাল-একাল ও অন্য কালের অনুঘটক অনীক মাহমুদের একমাত্র কাব্যনাট্য ‘নষ্ট জ্যোৎস্নার ক্যারাভান’ (প্রকাশকাল ২০০৬) তার সমস্ত কাব্যপ্রবাহের এক অনবদ্য বাঁক। এই কাব্যনাট্যটি অনীক মাহমুদকে রিপ্রেজেন্ট করে একজন ইতিহাস সচেতন সমকালবোদ্ধা প্রখর শিল্পদৃষ্টির কাব্যকার হিসেবে। মাত্র তিন মাসে (৬ সেপ্টেম্বর ২০০৪Ñ৬ নবেম্বর ২০০৪) এ কাব্যনাট্যটি রচিত হলেও কবি যে সুদীর্ঘকালব্যাপী নীরবে-নিভৃতে ইতিহাস সচেতন এক শিল্পপ্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তা অনুমেয় হয় এটির কাহিনী প্রবাহের দীর্ঘ ২০০ বছরের কালপরিসীমার বিবেচনায়। সপ্তদশ শতকের ৫ম দশক থেকে ঊনবিংশ শতকের ৫ম দশকের মোঘল সাম্রাজ্যকেন্দ্রিক সর্বজনবিদিত সুপ্রসিদ্ধ ঐতিহাসিক ঘটনাকে কাব্য পরিধিতে শিল্পবন্ধনে আবদ্ধ করেছেন অনীক মাহমুদ এই কাব্যনাট্যের মাধ্যমে। দীর্ঘদংশন নীলজ্বালা (২০০৭) : সমকাল মনস্কতায় সংক্ষুব্ধ শিল্পসৃষ্টি ভাষা ও ছন্দের অসামান্য দখল এবং প্রবন্ধের বিষয় নিয়ে সিরিয়াস ও ন্যারেটিভ কবিতা রচনা এ কাব্যের অনন্য দিক। তাছাড়া প্রতীকী কবিতাও এখানে আলাদা মাত্রা প্রাপ্ত। যখা- ‘পক্ষী-সংলাপ : কাক ও কোকিল’ কবিতাটি, যেখানে কবির প্রতীকে কাক আর সমালোচকের প্রতীকে কোকিল অতি শৈল্পিকভাবে পরিদৃশ্যমান। ‘ভেতরে ভেতরে রক্তপুঁজ দগদগে ক্ষতের ভূগোল’ কবিতায় রাজার অর্থনীতির ছদ্মনাম গোঁসাই ঠাকুরের কার্যকলাপে দেখানো হয়েছে পুঁজিবাদের আগ্রাসী ও বিধ্বসী সম্মুখযাত্রা। বৃহন্নলা ছিন্ন করো ছদ্মবেশ (২০০৭) : অফুরান পুরাণের সাথে স্বকালের সন্ধি পুরাণআশ্রিত অভিব্যক্তির মাধ্যমে সমকালকে রচনা করার আরও সার্থক ক্যারিজমা আলোচ্য কাব্যে দৃষ্ট। যেমন- ‘বন্ধুত্ব-বিবেক-হার্দ্য খুবলে কেবল তাড়কা ফিকির। ওইখানে ব্যথিত অর্জুন আজ রঙ বদলিয়ে ধরে/বৃহন্নলা ছদ্মবেশে পরীক্ষিত বার্তা ঘঁষে খুলে দেবে অর্গল বাধার/ হে অর্জুন, ছিন্ন করো ছদ্মবেশ কবন্ধ আঁধার’, ‘আমাদের দুঃখনদী/ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে যায় কাল নিরবধি’, ‘মৃত্তিকার চোখে আজ কষ্টের কাজল/ মুখে মেদুরতা অধরে ক্ষয়িষ্ণু বিয়াবান/দুঃখবতী ক্ষত/ শুকিয়ে শুকিয়ে নিজেরাই হয়ে যায় ব্যথার লাটাই’। আবার এসবের বিপরীতে আশাবাদী মনোভাবও দুর্লক্ষ্য নয়Ñ ‘পাদপ্রদীপে স্বপ্নভূমি সেইদিন/ আমাদের সমবায়ী প্রাত্যহিক/ উৎকর্ষের জয়মাল্য হবে।’ উক্তিনির্ভর কবিতা ও প্রবাদ-প্রবচন কেন্দ্রিক থিম ধরে কবিতা রচনাও এখানে দৃষ্ট। সুমিত্রাবন্ধন (২০০৯) : সনেটের সুবিন্যাস ও প্রেমের সুবর্ণন ছন্দস্রোতের জীবনদোলায় অনীক মাহমুদের একাদশতম প্রকাশ ‘সুমিত্রাবন্ধন’ (২০০৯) নামক সনেটগ্রন্থটি। কাব্যটির রচনাকাল ১৭ এপ্রিল ২০০৮ হতে ১৪ ডিসেম্বর ২০০৮ পর্যন্ত। মূলত ঈড়হপষঁফরহম পঁঢ়ষবঃ নিয়মানুগ হয়েও শেক্সপিয়রীয় ঘরানার সনেট এগুলো। প্রথম কবিতা ‘অনাঘ্রাতা অনীকিনী’ ব্যতীত সব সনেটের মিলবন্ধন একরকমÑ ‘কখকখ গঘগঘ ঙচঙচছছ’। সনেটের ব্যাকরণিক-ছান্দিক-প্রাকরণিক দিকগুলো সম্পূর্ণাংশে মেনেও অনীক মাহমুদ বিষয়বস্তু ও শব্দনির্বাচনে দেখিয়েছেন তাঁর যৌথযোগ্যতা। চৈতীচাঁদে রাহুর লেহন (২০০৯) : কাব্যপথের আরেক বাইপাস বাংলাদেশের সুচয়নী পাবলিশার্সে ব্যানারে ২০০৯ সালে প্রকাশিত হয় ‘চৈতীচাঁদে রাহুর লেহন’ কাব্যগ্রন্থটি। ‘শব্দরোলে স্তব্ধবাক ধ্বনিবন্ধ হোক নির্ঘোষিত’ বলে কবি প্রথমেই জানান দেন নিজের ইতিবাচকতার অভিব্যক্তি। এ কাব্যের উল্লেখযোগ্য দিক সংলাপনির্ভর পঙ্ক্তি এবং গ্রাম্যপ্রবাদের আলোকে কবিতার ভাবকাঠামোর গঠন। গ্রামীণ চরিত্রগুলো এখানে গুরুত্বপ্রাপ্ত, বিভিন্ন কবিতায়-নিরঞ্জন-পাগলা মেহের আকলিমা-রজবালি-কদমালি-হেকমত আলির কথাল্লেখ তার প্রমাণ। তিনটি কাব্যগ্রন্থ এবং তিনটি ভিন্ন প্রকরণ প্রয়োগ এরপরের তিনটি কাব্যগ্রন্থ ‘হৃৎ-খৈয়ামের রুবাইয়াৎ’ (২০১১), ‘শঙ্খিল সপ্তমিকা’ (২০১১) এবং কান্তবোধি কবিতিকা (২০১১), অনীক মাহমুদের বিচিত্র কাব্যানুশীলনের আরও তিনটি নতুন ধরন, ভিন্ন আঙ্গিক ও ব্যতিক্রমী দিক। ‘হৃৎ-খৈয়ামের রুবাইয়াৎ’-এ ২২৪টি চতুষ্পদী কাব্যর মাধ্যমে সমস্ত গ্রন্থটি সজ্জিত। ক্ষণবাদী দার্শনিক ওমর খৈয়ামের রুবাইগুলোর গঠন কাঠামো মেনে নিলেও খৈয়ামের মরমিয়া বা গুংঃরপ ঘরানা থেকে বেরিয়ে এসে সমকাল ও স্বদেশের ঘটনা প্রবাহকে বিষয়বস্তু করে অনীক মাহমুদ লিখেছেন ‘হৃৎ-খৈয়ামের রুবাইয়াৎ’। যেখানে সমকালীন রাজনীতি-মুক্তিযুদ্ধ-ভারতীয় পুরাণ-পিলখানা হত্যাকা-সহ আরও অনেক দিনানুদৈনিক বিষয়গুলো উঠে এসেছে চতুষ্পদীর সংক্ষিপ্ত পরিসরেই। পিলখানাতে রঙ্গগঙ্গা জিঘাংসারই উন্মোচন, ইতিহাসের নৃশংসতা খা-বেরই দাহন বন, বিনা অস্ত্রে যে ঘটল পিলখানাতে রক্তস্রোত তাঁর ফাঁসিটা কে দেবে আজ তোমরা বলো বিজ্ঞজন। ভদ্রলোকসংহিতা (২০১২) : পেতে হবে তব পরিচয় মম অনীক মাহমুদ কাব্যসংগ্রহ-১ এর অন্তর্গত শেষ কাব্যগ্রন্থ ‘ভদ্রলোকসংহিতা’ (২০১২)। উদ্বোধনী কবিতা ‘এখনো বোধের ফুলে’ হতে ‘অনন্য জীবন প্রণম্য সম্বোধী’ পর্যন্ত প্রথম ৩৪টি কবিতার বিষয়বস্তু ৪৭ পরবর্তী বাংলাদেশের নানান অনুষঙ্গ। যেখানে ৫২, ৫৪, ৫৮, ৬৬, ৬৯, ৭০, ৭১, ৭৫, ৮২, ৯০ সালগুলো কবিতার পঙ্ক্তির গাঁথুনিতে যেন আরও চাক্ষুস করে তুলেছেন কবি। সাম্প্রতিকতম কাব্যসমূহ : আপ্রথমঅন্তিমা শিল্পসুষমা সদ্য গত হওয়া ২০১৫ সালে অনীক মাহমুদের তিনটি কাব্যগ্রন্থ ও একটি গীতিকাব্য প্রকাশিত হয়। প্রত্যেকটি পারস্পরিকভাবে পৃথক, প্রকরণে ও ভাবনার প্রয়াসে। নিরীক্ষাপ্রবণ অনীক মাহমুদের আত্মপরিচয় এখানেই স্বতন্ত্র। ‘বনসাঁই রূপবন্ধ’ (২০১৫) কাব্যগ্রন্থটি সদ্য প্রকাশিত তবু আদি ও অদ্য এক অনবদ্য শব্দগন্ধে এখানে সম্মিলিত হয়েছে। কালিন্দি-আকাশ কংসগহ্বরের (২০১৫) কাব্যগ্রন্থটিতে মিথের সমকালীন আবেদন এবং আবশ্যিকতাকে আপ্রথমঅন্তিমা প্রস্ফুটিত করা হয়েছে শব্দসুষমা ও কাব্যবাক্যরীতির সংমিশ্রণে। ‘জালিয়ানওয়ালা বাগ’, ‘নেপাল ২০১৫, ‘দাউদী স্তোত্র’, ‘কালিন্দি-আকাশ’, ‘মীরের আখরা’, ‘জয়দেব’ প্রভৃতি কবিতায় পূর্বোক্ত বাক্যের সমর্থনে বহু উদাহরণ পাওয়া যাবে। সর্বশেষ (আপাতত) কাব্যগ্রন্থ ‘দিনযাপনের গ্লানি’ (২০১৫)-তে কবি অনীক মাহমুদ দিনানুদৈনিক তথা বৈষয়িক বিষয়গুলোকে কাব্যিক আবহে বর্ণনায়িত করেছেন। সততই কবি মাত্রই সর্বক্ষণিক পর্যবেক্ষক আর অতীত স্মৃতিরক্ষক। অনীক মাহমুদ জীবনের বিভিন্ন সময়ে প্রাপ্ত নানানজনকে কাব্যচরিত্র দান করেছেন ‘দিনযাপনের গ্লানি’তে।
×