ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাবরিনা সিরাজী তিতির

শেখাতে হবে শুরু থেকেই

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১৮ মার্চ ২০১৬

শেখাতে হবে শুরু থেকেই

শিশুদের ক্ষেত্রে একটা কথা আমরা বাবা মায়েরা সবসময় বলি, বড় হলে একলাই শিখে নেবে! শুধু বাবা মা না এই কথাটি পরিবারের সবাই বলে! শিশুটি কোন কিছুর জন্য বায়না করল, সঙ্গে সঙ্গে তাকে কিনে দেয়া চাই! হোক তা অনেক দামী বা শিশুর বয়সের অনুপযোগী! যেহেতু শিশুটি খেলনাটির জন্য কান্না করেছে সেহেতু কান্না থামাতে তাকে কিনে দিতেই হবে! এর ফলে শিশুটি কী শিখল তা একবারও কি ভাবছি আমরা? শিশুটি শিখে গেল, বায়না করলেই সব পাওয়া যায়! হোক তা তার বাবা মায়ের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে! হোক তা তার বয়সের অনুপযুক্ত! এরপর থেকে সে যা ইচ্ছে চাইতে শিখবে, বাবা মায়ের আর্থিক অবস্থার কথা মাথায় রাখবে না! তাকে নিয়ে মার্কেটে গেলেন, সে কিছু একটার জন্য বায়না করল! তার মা হয়ত তাকে বোঝালো আজ না আর একদিন কিনে দেব অমনি শুরু“হলো শিশুর কান্না! এমনও দেখা যায়, শিশুটি মার্কেটের মেঝেতে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছে! শিশুর কান্না থামাতে হোক বা চক্ষুলজ্জার খাতিরে হোক শিশুর আবদার করা জিনিসটি তাকে কিনে দেয়া হয়! অথচ একটু চেষ্টা করলেই শিশুর এই স্বভাব বদলানো সম্ভব! তাকে ছোটবেলা থেকে শেখাতে হবে, বাবা মায়ের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে! হোক শিশুটির বয়স ৩ বছর! গল্পচ্ছলে তাকে শেখাতে হবে, তার বাবা মা কত কষ্ট করে সৎ উপার্জন করেন। এবং এই উপার্জন দিয়ে সংসারের যাবতীয় খরচা মেটানো হয়! সংসারে যদি বয়োজ্যেষ্ঠ কোন সদস্য থাকেন তাঁর বিষয়ে শেখাতে হবে! জানাতে হবে অহেতুক খরচা না করলে দাদা, দাদু, নানা, নানুর জন্য প্রয়োজনীয় কিছু কেনা যায়! শেখাতে হবে বাইরে গিয়ে যা দেখবে তাই কিনতে চাইলে অন্যরা তাকে দুষ্টু বাচ্চা ভাববে! তাকে বোঝাতে হবে বাবা মা তাকে অনেক ভালবাসে! বাবা মা সুযোগ হলেই তাকে ভাল কিছু কিনে দেবে! যা তার প্রয়োজন বা যা দেবার সামর্থ্য তাদের আছে তেমন কিছু বাবা মা অবশ্যই তাকে দেবে! এমন কথাগুলো শুরু থেকে বাচ্চাকে শেখালে বাচ্চা ঠিক ঠিক শিখে নেবে! কিছু বায়না করবার আগে সে ভাববে তার বাবা মায়ের কথা! সে ভাবতে শিখবে তার দাদা বা নানুর কথা! তখন সে বাবা মায়ের সঙ্গে কেনাকাটা করতে গিয়ে বলবে, এটা নানা ভাই এর জন্য কেন! এটা দাদুর জন্য কেন! তার নিজের কিছু পছন্দ হলে সে বায়না করবে না! বলবে, মা এই খেলনাটা অনেক সুন্দর! আমাকে কিনে দেবে? এখন না পারলে পরে কিনে দিও! অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে কথাগুলো? মোটেও তা নয়! শিশুদের যদি আদর করে, বুঝিয়ে শুরু থেকেই শেখানো যায় ওরা দ্রুত শিখে নেয়! ওরা অনেক বুদ্ধিমান! আমরা ওদেরকে প্রাধান্য দিয়ে যদি বড়দের মতো সাধারণভাবে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সংসারের খুঁটিনাটি কথাগুলো আস্তে ধীরে শেখাতে থাকি ওরা ঠিক শিখে নেবে! ওরা নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ ভাবতে শুরু করবে! যখন ওরা কোন কিছুর জন্য অকারণ বায়না করবে না তখন ওদের প্রশংসা করুন! এতে ওরা আরও উৎসাহিত হবে! ওদের পছন্দ কী সেটা বুঝবার চেষ্টা করুন! সুযোগ এবং সাধ্যের সমন্বয় হলে শিশুর প্রিয় কিছু কিনে আনুন! হঠাৎ পাওয়া উপহারে শিশু খুশি হলে তাকে জানান সে যে অকারণে বায়না করে না বা নিজে না কিনতে চেয়ে অন্যের জন্য কিছু করতে চায় এটা তার পুরস্কার! এমন করেই দেখুন! আপনার শিশুটি ধীরে ধীরে বায়না করা ছেড়ে দেবে! এবং সে নিজের চেয়ে অন্যের জন্য করতে শিখবে! তাই বিষয়গুলো বড় হলে একাই শিখবে এই ভ্রান্ত ধারণায় না থেকে শুরু থেকেই শেখাতে শুরু করুন। ছবি : শিথীল রহমান‘
×