ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এবার অস্ট্রেলিয়াকে মোকাবেলার প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ১৮ মার্চ ২০১৬

এবার অস্ট্রেলিয়াকে মোকাবেলার  প্রস্তুতি

স্পোর্টস রিপোর্টার, কলকাতা থেকে ॥ এমনিতে অস্ট্রেলিয়া দল বাংলাদেশের সামনে কখনই প্রতিশোধ নেয়ার দল নয়। তবুও এবার অস্ট্রেলিয়া যখন সামনে পড়ছে, তখন যেন প্রতিশোধ শব্দটি খুব বেশি ঘুরপাক খাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচে হারিয়ে হারের প্রতিশোধ নেয়ার কোন সুযোগই নেই। অসিদের হারালে সেটি কোনভাবেই প্রতিশোধ নেয়া হবে না। এটি আসলে বাংলাদেশে খেলতে না আসার প্রতিশোধ। জিতে অস্ট্রেলিয়াকে বুঝিয়ে দেয়ার প্রতিশোধ। একটা জবাব দেয়ার ম্যাচ। বাংলাদেশে না আসার কারণ যে হারের সম্ভাবনায় পড়া, অস্ট্রেলিয়া যে নিরাপত্তা অজুহাতই দেখিয়েছে, সেটি বুঝিয়ে দেয়ার জন্য অস্ট্রেলিয়াকে হারানো খুব জরুরী। একটা জবাব দেয়া খুব জরুরী। আর অস্ট্রেলিয়াকে হারালেই প্রতিশোধ নেয়াও হয়ে যাবে। অস্ট্রেলিয়াকে জবাব দেয়া হয়ে যাবে। বাংলাদেশের সামনে ২১ মার্চ ব্যাঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সেই প্রতিশোধ নেয়ার ম্যাচই। পারবে বাংলাদেশ প্রতিশোধ নিতে? অস্ট্রেলিয়া খুব শক্তিশালী দল। বাংলাদেশও সেই শক্তি নিজেদের মধ্যে জড়িয়ে ফেলে এখন। নির্ধারিত ওভারে তো এখন বাংলাদেশও তুখোড় দল। টি২০ বিশ্বকাপের ‘সুপার টেনে’ যদিও পাকিস্তানের কাছে ভরাডুবি হয়েছে বাংলাদেশের, এখনও কিন্তু সব স্বপ্ন শেষ হয়ে যায়নি। বাংলাদেশ যে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলে ফেলবে, বাস্তবতা সামনে রেখে এমন আশা কেউই করেনি। তবে স্বপ্ন দেখতে তো আর মানা নেই। তাই এশিয়া কাপে বাংলাদেশের দুর্দান্ত নৈপুণ্যতে সেই স্বপ্ন দেখাও হয়েছে। তবে বাংলাদেশ সেমিফাইনালে না উঠলেও যদি ‘এক-দুটি’দলকে হারিয়ে দিতে পারে, সেটিও কিন্তু বড় প্রাপ্তি হবে। গত বিশ্বকাপে ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ‘সুপার টেনে’ খেলেছে বাংলাদেশ। একটি ম্যাচেও জিততে পারেনি। এবার চার দলের মধ্যে তিনদলই বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ। শুধু ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্থানে এবার আছে নিউজিল্যান্ড। পাকিস্তানের বিপক্ষে এরই মধ্যে খেলা শেষ। ৫৫ রানে হেরেছেও বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো বর্তমান দলের ক্রিকেটাররা ইডেন গার্ডেনে খেলে হারের সম্মুখীন হয়েছে। এখন সামনে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ। বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ যে চার দল আছে, এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটিই বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় ম্যাচ হয়ে ধরা দিচ্ছে। প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন? অস্ট্রেলিয়া যে বাংলাদেশে খেলতে না গিয়ে বাংলাদেশকেই অপমান করেছে। এত বড় বড় দলগুলো বাংলাদেশে গিয়ে খেলেছে। তাদের কিছুই হয়নি। অথচ অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দল নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে অক্টোবরে বাংলাদেশে সিরিজ খেলতে যায়নি। এমনকি তারা অনুর্ধ ১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপেও অস্ট্রেলিয়া যুব দলকে খেলতে পাঠায়নি। বাংলাদেশ এখন প্রমাণ করেছে, নিরাপত্তা নিয়ে অন্তত ক্রিকেটে কোন সমস্যা নেই। তারপরও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সে বিশ্বাস ঢুকছে না। বাংলাদেশ যে টানা পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজে হারিয়ে সাফল্যের চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল এবং তখন অস্ট্রেলিয়া খেলতে গেলে বিপদের মধ্যে পড়ে যেতে পারত, তাই খেলেনি অস্ট্রেলিয়া; এমনই ধারণা করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার সাবেক তারকা ক্রিকেটার ডিন জোন্সতো সরাসরি বলেই দিয়েছেন, ‘হারের ভয়েই বাংলাদেশে খেলতে যায়নি অস্ট্রেলিয়া।’ ১৯৮৪ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলের নিয়মিত এই মুখ বলেছেন- ‘উপমহাদেশে এমনিতেই অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ড যাচ্ছেতাই। এর মধ্যে বর্তমান দলটি খুবই অনভিজ্ঞ। ওপেনিং পজিশনে নেই ডেভিড ওয়ার্নার, ক্রিস রজার্সদের মতো ব্যাটসম্যান। এই অবস্থায় সিরিজটি অস্বস্তির কারণ হতো ক্যাঙ্গারুদের।’ সম্প্রতি অবসরে যাওয়া মাইকেল ক্লার্ক, ওয়াটসন, হ্যাডিন, রজার্সদের মতো তারকা না থাকায় অস্ট্রেলিয়া দলটি পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেছিলেন জোন্স। এই অবস্থায় উপমহাদেশের মতো প্রতিকূল পরিবেশে খেলা দলটির জন্য হতো ভীষণ অস্বস্তির। নিরাপত্তার কারণও রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছেন সাবেক ডানহাতি এই টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান। বলেছেন, ‘নিজেদের মাঠে সম্প্রতি ওরা (বাংলাদেশ) পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকাকে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছে। তরুণ এই দল রয়েছে সময়ের সেরা ফর্মে। আমার ধারণা অস্ট্রেলিয়া বিব্রতকর পরিস্থিতি এড়াতেই সফরটি বাতিল করেছে।’ সেই সফর বাতিল করার জবাব দেয়ার সুযোগ এখন বাংলাদেশের সামনে। যদি অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারে বাংলাদেশ, তাহলেই সেই জবাব দেয়া যাবে। সঙ্গে প্রতিশোধও নেয়া হবে। মাশরাফিরা পারবে সেই কাজটি করতে? বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বলেছেন, ‘ব্যাঙ্গলুরুতে আমাদের খুব তাড়াতাড়ি এ্যাডজাস্ট করতে হবে। পরের ম্যাচে আমাদের অবশ্যেই ভাল করতে হবে। এর থেকেও আরও ফ্ল্যাট উইকেট হবে। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপ আরও স্ট্রং হবে। অবশ্যই আমাদের জন্য আরও কঠিন চ্যালেঞ্জ সামনে অপেক্ষা করছে। আমি মনে করি আমাদের মাইন্ড সেটআপ ঠিক করতে হবে। রি গ্রুপ করে আমাদের আবার ফিরে আসতে হবে। আসলে ওভার অল দূরের কথা বলা কঠিন। আমাদের লক্ষ্য সামনের ম্যাচ।’ সেই সামনের ম্যাচটি হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ। আর সেই ম্যাচে জিতলে বাংলাদেশের খেলতে না আসার জবাব দেয়া হবে।
×