ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

কথামালা আর তুলির আঁচড়ে বঙ্গবন্ধু শিশুদের নানা আয়োজন

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৮ মার্চ ২০১৬

কথামালা আর তুলির আঁচড়ে বঙ্গবন্ধু শিশুদের নানা আয়োজন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৭তম জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস ছিল বৃহস্পতিবার। দিনটিকে আনন্দময় করে তুলতে রাজধানীজুড়ে ছিল শিশুদের নানা আয়োজন। কোথাও ছিল গল্প বলার আসর, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আবার কোথাও ছিল নাচ-গানসহ বিভিন্ন রকম সাংস্কৃতিক আয়োজন। বাংলা একাডেমিতে ‘বঙ্গবন্ধুর গল্প শোন’ ॥ বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চের সম্মুখভাগে হাজারও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি। বিমুগ্ধ চিত্তে তারা শুনছে জাতির পিতার গল্প। তাদের চোখে-মুখে যেন ছড়িয়ে আছে বসন্তের রোদেলা সকালের স্নিগ্ধতা। মঞ্চ থেকে বিশিষ্টজনের মুখ থেকে তারা শুনছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জীবনের কথা। কোন এক সময়ে তাদের কেউ কেউ বলে উঠল, আমরাই জাতির পিতার আদর্শে স্বপ্নের দেশ গড়ব। শিশু-কিশোরদের জন্য ‘বঙ্গবন্ধুর গল্প শোন’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। যাতে রাজধানীর ৮টি বিদ্যালয় ও বিভিন্ন শিশু সংগঠন থেকে অংশ নেয় হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী। দেশের গুণীজনদের মুখে তারা শুনল বঙ্গবন্ধুর বর্ণাঢ্য জীবন, আলোকিত নেতৃত্ব আর বিপথগামীদের হাতে তার সপরিবারের হত্যার কথা। আর মাঝে মাঝেই তারা কণ্ঠ ছেড়ে বলে উঠছিল মুক্তিযুদ্ধের শাণিত সেøাগানÑ জয় বাংলা। অনুষ্ঠানে শিশু-কিশোরদের বঙ্গবন্ধুর গল্প শোনান কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন, এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, কথাশিল্পী আনিসুল হক, শিশুসাহিত্যিক লুৎফর রহমান লিটন, ডাঃ আব্দুন নূর তুষার, ডাঃ নুজহাত চৌধুরী, সাংবাদিক প্রণব সাহা ও ব্যাংকার নূরুল ফজল বুলবুল। আয়োজনটিতে সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ও পরিচালনা করেন সুভাষ সিংহ রায়। সেলিনা হোসেন বলেন, জীবিত অবস্থায় তার শেষ জন্মদিন, ১৯৭৫ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু গণভবনে ডেকেছিলেন শিশু-কিশোরদের। গণভবন সবুজ চত্বরে তাদের ছেড়ে দিয়ে, তিনি বলেন, তোমরা খেলো, তোমরা আনন্দ করো, কিন্তু গাছ নষ্ট করো না। এর মধ্য দিয়ে তিনি শিশুদের প্রকৃতিরক্ষার কথা বলেন। তিনি তার সব বক্তব্যেই শিক্ষণীয় কথা বলতেন। তাই আমরা তাকে স্মরণ করি, বরণ করি। তার আদর্শ মনে রেখেই তাকে স্মরণ ও বরণ করতে হবে। সুলতানা কামাল বঙ্গবন্ধুকন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ বান্ধবীদের একজন। প্রতিবেশী হওয়ায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার স্মৃতি অনেক। তিনি দুটি স্মৃতি ভাগ করে নিলেন শিশুদের সঙ্গে। বললেন, একদিন বঙ্গবন্ধু আদালতে হাজিরা দিতে যাচ্ছিলেন আর আমি রেডিওতে যাচ্ছিলাম। পথে আমাকে দেখতে পেয়ে সে গাড়িতে তুলে নেন এবং আমার পুরো পরিবারের খোঁজ নেন। এরপর তিনি প্রথমে আদালতে যাবেন ও পরে তার গাড়ি আমাকে রেডিও অফিসে নিয়ে যাবে বলে আমার কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণ হয়, সে ছোট-বড় সবাইকে সম্মান করতেন। আরেকবার ছোট্ট একটি শিশু বঙ্গবন্ধুকে দেখবে বলে আমার কাছে বায়না করে। সেদিন ৬ মার্চ, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের রূপরেখা নিয়ে তিনি গভীর আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন। তারপরও তার কাছে এ খবর পৌঁছানো মাত্র তিনি সব ছেড়ে ওই বাচ্চাটি কোলে নিয়ে আদর করেন। গল্প দুটি বলে তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়, বঙ্গবন্ধু শুধু নেতা হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে ছিলেন অসাধারণ। তিনি ছিলেন সাহসী ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তিনি নিজের জীবনকে বারবার হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে আমাদের জন্য একটি স্বাধীন দেশ উপহার দিয়েছেন। শামসুজ্জামান খান বলেন, বাংলাদেশকে জানতে হলে বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। আর বঙ্গবন্ধুকে জানা মানে এদেশের সমগ্র ইতিহাস জানা যাবে। কারণ, এ দেশের প্রতিটি ইতিহাসের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অন্য বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু একটি দেশ স্বাধীন করতে নেতৃত্ব দেননি, তিনি একটি জাতিকে শৃঙ্খলমুক্ত করেছেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুকরণ করে পথ চললে, বাংলাদেশ হবে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ দেশ। আজ আমরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের মুখ দেখছি, এমন দেশের স্বপ্নই বঙ্গবন্ধু দেখেছেন। তিনি শুধু এ দেশের জন্য দিয়ে গেছেন, কিন্তু কিছুই নেননি। তার এই দর্শন ও আদর্শ নিয়ে আজকের শিক্ষার্থীদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। গল্প শোনা শেষে লালবাগের গোরে শহীদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী সুমাইয়া রহমান সাবা জানায়, আমরা আজ বঙ্গবন্ধুর গল্প শুনেছি। আমরা বুঝতে পেরেছি, তিনি কত বড় মানুষ ছিলেন। আমরা বড় হয়ে তার মতোই হতে চাই। তার মতো দেশকে ভালবাসতে চাই, মানুষকে ভালবাসতে চাই। ঘাষফুল শিশু-কিশোর সংগঠনের দুই শিল্পী জয়িতা ও ইশরাতের কণ্ঠে ‘বঙ্গবন্ধু’ শিরোনামের একটি গান দিয়ে এ আয়োজন শেষ হয়। শিল্পকলায় ‘ধন্য মুজিব ধন্য, বাংলা মায়ের মুক্তি এলো এমন ছেলের জন্য’ ॥ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ও শিশু দিবস উপলক্ষে দেশব্যাপী প্রতি জেলা ও উপজেলায় ‘ধন্য মুজিব ধন্য, বাংলা মায়ের মুক্তি এলো এমন ছেলের জন্য’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। বৃহস্পতিবার সকালে অনুষ্ঠানের উ™ে^াধন করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। এরপর একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা প্লাজাসহ সকল জেলা ও উপজেলায় শিশু চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেয় তিন শতাধিক শিশু। অনুষ্ঠানে আরও ছিল শিশুদের মেলা, একাডেমির শিল্পীদের পরিবেশনায় সমবেত নৃত্য, একাডেমির এ্যাক্রোবেটিক দলের পরিবেশনা। বিকেলে ™ি^তীয় পর্বের আয়োজনে সম্মানিত অতিথি ছিলেন শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। এ পর্বের আয়োজনের মধ্যে ছিল পুতুল নাট্য, মূকাভিনয়, অটিস্টিক শিশুদের পরিবেশনা, শিশু বিদ্যালয়ের পরিবেশনা ও শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। পল্লবীতে শিশুশিল্প উৎসব ॥ বাসন্তী সকালে শিশুদের সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীতের পরই শুরু হয় গোষ্ঠের গান। কুষ্টিয়ার বাউল শিল্পীদের কণ্ঠে এ গান চলতে চলতেই ভরে ওঠে শিশুদের জমায়েত। স্বাগত বক্তব্য শেষে শুরু হয় উন্মুক্ত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। রং, পেন্সিল, তুলি আর ক্যানভাস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায় দেড়শতাধিক শিশু। রাজধানীর পল্লবীর ৩২নং সড়কে বৃহস্পতিবার সকালে এভাবেই শুরু হয় দিনব্যাপী শিশুশিল্প উৎসব। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে এ উৎসবের আয়োজন করে যৌথভাবে সেন্টার ফর এ্যাডভান্স নারচারিং এ্যান্ড ভিজ্যুয়াল আর্ট স্টাডিজ (ক্যানভাস) ও নেশন হাট লিমিটেড। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ক্যানভাসের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান কাজী মোস্তফা আলম (এফসিএ)। বিকেলে উৎসবের দ্বিতীয় পর্ব পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অংশ নেন কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব, আনুশেহ আনাদিল, শিল্পী, কবি ও নির্মাতা টোকন ঠাকুর, মিডিয়াকর্মী এশা ইউসুফ, নির্মাতা সামির অহমেদ, স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ ইলিয়াস উদ্দিন মোল্লা প্রমুখ। সবশেষে পরিবেশিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ঢাকা কলেজ ॥ দিনটি উপলক্ষে ঢাকা কলেজে রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং আনন্দর‌্যালি হয়। চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার উ™ে^াধন করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ফাহিমা খাতুন। র‌্যালি শেষে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষাসচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন। সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোয়াজ্জম হোসেন মোল্লা। কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা ॥ কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা দিনটি উপলক্ষে নিজস্ব মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ হামিদা আলী। আলোচনায় অংশ নেন রুবি রহমান, দিল মনোয়ারা মনু ও আমানুল হক। সভাপতিত্ব করেন মেলার সহসভাপতি ড. রওশন আরা ফিরোজ।
×