ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

টাইগারদের ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১৮ মার্চ ২০১৬

টাইগারদের ঘুরে  দাঁড়ানোর  লড়াই

মিথুন আশরাফ, কলকাতা থেকে ॥ শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান ম্যাচ শুরু হবে। এর আগে ইডেন গার্ডেনের চতুর্দিকে যেন আফগানিস্তান সমর্থকদের ঘেরাও। শুধু আফগানদেরই দেখা মিলছে। ইডেন গার্ডেন যেন আফগানদের দখলে চলে গেছে। এর মধ্যে দুই আফগান আবদুল্লাহ ও মাতিনের সঙ্গে কথা হলো। দুইজনই বললেন তাদের স্বপ্নের কথা, ‘আমরা একদিন বাংলাদেশের মতো হব।’ প্রশ্ন করা হলো, কেন বাংলাদেশ? বিশ্বকাপ জেতা কোন দলের মতো হওয়ার স্বপ্ন নয় কেন? দুইজনই একই সুরে জবাব দিলেন, ‘বাংলাদেশ যেভাবে উন্নতি করছে, সেই রকম উন্নতি তো আগে করতে হবে। লক্ষ্যটা দূর আকাশে না রেখে, আগে তো এগিয়ে যেতে হবে। তাই বাংলাদেশের মতো হওয়ার স্বপ্নই দেখছি। সেই রকমটি হলে, এরপর আরও বড় স্বপ্ন দেখব।’ সেই বাংলাদেশ দল পাকিস্তানের বিপক্ষে ‘সুপার টেনে’র প্রথম ম্যাচে ৫৫ রানে হেরে গেছে। এরপরও সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ! হাতে আছে আরও তিন ম্যাচ। ব্যাঙ্গালুরুতে ২১ ও ২৩ মার্চ যথাক্রমে অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ রয়েছে। এরপর ২৬ মার্চ ইডেন গার্ডেনে আছে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ। বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে উঠতে হলে কম করে হলেও ৩ ম্যাচ জিতবে হবে। তার মানে সামনে যে তিন ম্যাচ রয়েছে, সবকটিতে জিততে হবে। এটা কী সম্ভব! তা না জিতলেও ২ ম্যাচ জিতেও রানরেটে সেমিফাইনালে খেলা সম্ভব। কিন্তু সামনে যে তিন দল আছে, সবাই শক্তিশালী। দুটি ম্যাচও কী জেতা সম্ভব? বাংলাদেশ দলের ওপেনার সৌম্য সরকারের বিশ্বাস সম্ভব, ‘আমরা খেলার মধ্যেই ছিলাম। সবার প্রথম ম্যাচ ছিল, আমাদের চার নম্বর ম্যাচ। আগের তিন আমরা জিতেছি। চার নম্বর ম্যাচ হারতেই পারি। একটা ম্যাচ খারাপ যেতেই পারে। পরের তিন ম্যাচে আমরা অবশ্যই চেষ্টা করব ঘুরে দাঁড়াতে। অবশ্যই সেমিফাইনালে যাওয়াই লক্ষ্য।’ সৌম্য সরকারের আত্মবিশ্বাস বেড়ে গেছে। ব্যাটিংয়ে তিনি যতটাই ব্যর্থ হন, ফিল্ডিংয়ে কিন্তু চমক দেখিয়ে দিয়েছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে যে দুর্দান্ত একটি ক্যাচ ধরেছেন। ছক্কাটি রুখেছেন। দুর্দান্ত ক্যাচ ধরে এখন লাইম লাইটেও আছেন। সৌম্য এ ফিল্ডিং নিয়ে বলেছেন, ‘ফিল্ডিংয়ে যখন আমি থাকি, তখন সবসময় চেষ্টা করি ভাল কিছু করার বা এমন কিছু করার যেন সবাই দেখে। ওই সময় মিড উইকেট জায়গাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। চেষ্টা করি ভাল একটা ফিল্ডিং করার বা ক্যাচ নেয়ার। ওই রকম সুযোগ এসেছিল। ক্যাচটা নিতে পেরে ভাল লেগেছে। শুনলাম জন্টি রোডসও নাকি কমেন্ট করেছে।’ ব্যক্তিগত ফর্ম নিয়েও কথা বলেছেন সৌম্য। জানিয়েছেন, ‘ব্যক্তিগত ফর্ম নিজের কাছে, আপনারা সবাই দেখেছেন একটু খারাপ যাচ্ছে। চেষ্টা করছি ফর্মে ফিরতে। অনুশীলনে বাড়তি সময় দিচ্ছি। ভুলগুলো কোথায় হচ্ছে, বের করার চেষ্টা করছি। আশা করি সামনের ম্যাচগুলোয় রান পাব।’ এ জন্য তো ভুলগুলো শুধরে নিতে হবে। সৌম্য যে সুইপ করতে যান বার বার, বল ব্যাটে লাগে না। এতে করে আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়। সেটিতে আউটও হন সৌম্য। সেই ভুল না শুধরালে ব্যাটিংটা ভাল হবে কি করে। সৌম্যও তা বুঝছেন, ‘একেকজনের পথ একেকরকম থাকে নিজেকে ফিরে পাওয়ার। অনেকে হার্ডওয়ার্ক করে, অনেকে চিন্তা করে নিজেকে ফিরে পায়। আমিও সেটা বোঝার চেষ্টা করছি কোনটা করা উচিত। আপাতত দুটিই করছি ও ভাবছি আমি নিজে।’ ইডেন গার্ডেনে জাতীয় দলের হয়ে এর আগে না খেললেও সিএবির বিপক্ষে একটি ম্যাচ খেলেছেন সৌম্য এবং ১২৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন। তাতে সৌম্য মনে করেছেন লাকি গ্রাউন্ড। কিছু করতে পারবেন। কিন্তু হয়নি। কেন? সৌম্য বললেন, ‘ইডেনে আমার যেটা প্রথম মাথায় এসেছিল, এখানে আগে একটি ম্যাচই খেলেছিলাম সিএব দলের বিপক্ষে। ১২৯ রানের ইনিংস খেলেছিলাম। ওইটাই আমি ভেবে নিয়েছিলাম যে আমার লাকি গ্রাউন্ড, হয়ত কামব্যাক করতে পারব। কিন্তু পারিনি।’ ব্যক্তিগত পরিকল্পনার বাইরে দলীয় পরিকল্পনাই মুখ্য হয়ে ওঠে। এখন তো দলের পরিকল্পনাই আসল। এক ম্যাচ হেরে পিছিয়ে গেছে বাংলাদেশ। এখন সামনে জিততে হবে। না হলে সেমিফাইনালের স্বপ্ন থেকে অনেক দূরে সরে যাবেন মাশরাফিরা। সেই স্বপ্ন সফল করতে আবার ব্যক্তিগত নৈপুণ্যগুলো ভাল হতে হবে। সৌম্য তাই মনে করেন, ‘আমি আপাতত যেটা ভাবছি, আমি যদি ভাল করি অবশ্যই আমার দলের জন্য ভাল হবে। আমি সেটিই চেষ্টা করছি, দলকে ভাল কিছু দেয়ার জন্য।’ এভাবে সৌম্য সরকারের মতো সবাই ভাল কিছু দলকে দিতে পারলে সেমিফাইনালে খেলা সম্ভব। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাজেভাবে হারের পরও সেই স্বপ্নই এখন দেখছে বাংলাদেশ।
×