ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শরণার্থী ইস্যুতে ব্রাসেলসে শীর্ষ বৈঠক আজ

মতপার্থক্য দূর হয়নি ॥ তুরস্ক ইইউ

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১৮ মার্চ ২০১৬

মতপার্থক্য দূর হয়নি ॥ তুরস্ক ইইউ

শরণার্থী ইস্যুতে তুরস্কের সঙ্গে একটি সমঝোতায় আসতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ শুক্রবার ব্রাসেলসে বিশেষ বৈঠকে মিলিত হচ্ছেন। ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রধান ডোনাল্ড টাস্ক স্বীকার করেছেন যে, চুক্তির অনেক বিষয়ে দু’পক্ষ এখনও একমত হতে পারেনি। খবর বিবিসি ও ইন্ডিপেন্ডেন্ট অনলাইনের। চুক্তিটি হলে তুরস্ক থেকে গ্রিসে আসা শরণার্থীদের তুরস্কে ফেরত পাঠানোর পথ সুগম হবে। তুরস্ক চেষ্টা করছে শরণার্থী সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রেখে নিজের ইউরোপীয় সদস্যপদ লাভের পথ উন্মুক্ত করা। তবে আঙ্কারা ইইউর কাছ থেকে কোন আশাব্যঞ্জক প্রতিশ্রুতি এখনও পায়নি। ব্রাসেলস থেকে বিবিসির সংবাদদাতা ক্রিস মরিস জানিয়েছেন, শরণার্থী বিনিময় নিয়ে ইইউ তুরস্কের জন্য যেসব প্রণোদনামূলক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সেগুলো তেমন উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। কেবল সহায়তার বিষয়ে আলোচনার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে মাত্র। তুরস্কের ইইউর সদস্যপদ অর্জনের বিষয়ে অগ্রগতিরও কোন প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়নি। কেবল বলা হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে যতশীঘ্র সম্ভব আলোচনা শুরু করা হবে। এছাড়া চলতি বছর জুনের শেষ নাগাদ তুর্কী নাগরিকরা শেনজেন নামে পরিচিত ভিসামুক্ত ইউরোপ ভ্রমণের সুবিধা পাবে কি-না, সেটিও এই চুক্তিতে নিশ্চিত করা হয়নি। এছাড়া তুর্কীদের ওই সুবিধা পেতে হলে ইইউর বেঁধে দেয়া ৭২টি শর্ত পূরণ করতে হবে। তুরস্ক গ্রিস থেকে সিরীয় শরণার্থীদের গ্রহণ করলে শরণার্থী পুনর্বাসন কর্মসূচীতে ইইউ আগে যেমন সহায়তার পরিমাণ দ্বিগুণ করে ৬শ’ কোটি ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল চুক্তিতে তারও কোন উল্লেখ নেই। শুধু বলা হয়েছে, বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। প্রস্তাবিত চুক্তিতে বলা হয়েছে, তুরস্ক থেকে গ্রিস হয়ে ইউরোপে আসা প্রতিজন শরণার্থী ফেরত পাঠানোর বিনিময় একজন শরণার্থীকে ইউরোপে পুনর্বাসিত হওয়ার সুযোগ পাবেন। এসব শরণার্থীর অধিকাংশই সিরিয়ায় চলমান গৃহযুদ্ধ থেকে আত্মরক্ষার্থে পালিয়ে আসা লোকজন। গত এক বছর হাজার হাজার শরণার্থী সিরিয়া থেকে তুরস্ক হয়ে বিপদ সঙ্কুল সমুদ্রপথ অতিক্রম করে মেসেডোনিয়া হয়ে গ্রিসে প্রবেশ করেছে, অনেকে প্রবেশের পথে সীমান্তে আটকা পড়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর এ্যাঞ্জেলা মেরকেল বলেছেন এ চুক্তি শরণার্থী সমাধানের একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। শরণার্থী সমস্যা সমাধানে তুরস্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে গত সপ্তাহে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। শরণার্থী বিনিময় নিয়ে ইইউ-তুরস্ক সমঝোতার আইনগত বৈধতা তুলে ইতোমধ্যেই জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ইউএনএইচসিআর বলেছে শরণার্থীর ব্যক্তিগত মত না নিয়ে ঢালাওভাবে এক দেশ থেকে আরেক দেশে ফেরত পাঠানো আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এ কারণে চুক্তিটি হলেও আইনগত জটিলতায় তার বাস্তবায়ন থেমে যেতে পারে। গ্রিসের পর্যটন দ্বীপ লেসবস, কিওস ও লেরোসে এখন শরণার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরী ও স্লোভাকিয়াসহ শেনজেনভুক্ত (ভিসামুক্ত ইউরোপীয় এলাকা) ৮টি দেশ সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপ করায় কয়েক হাজার শরণার্থী গ্রিসে আটকা পড়ে আছে। চুক্তির আইনগত ভিত্তি নিয়েও সংশয়ের নিরসন হয়নি। কোন আইন বলে তুরস্ক গ্রিস থেকে সিরীয় শরণার্থীদের ফেরত নেবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এসব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও চুক্তিটি শেষ পর্যন্ত হবে বলে আশাবাদী ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান জ্যঁ ক্লদ জাঙ্কার। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, তিনি আশঙ্কা করছেন চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে লিবিয়া থেকে ইউরোপ অভিমুখে নতুন করে শরণার্থীদের ঢল নামতে পারে।
×