ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ওই দেখা যায় ‘ওপার’

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১৭ মার্চ ২০১৬

ওই দেখা যায় ‘ওপার’

জুলাইয়ের দুপুর, গত বছরের। ‘শঙ্খচিল’ ছবির টিম এসেছে সাতক্ষীরায়। সে বার সাতক্ষীরায় দ্বিতীয় এবং শেষবারের মতো। এর মাসকয়েক আগে সুন্দরবন অঞ্চল ঘেঁষে শূটিং করে গেছেন গৌতম ঘোষ, প্রসেনজিৎ। সঙ্গে বাংলাদেশের মামুনুর রশীদ, রোজি সেলিম, প্রবীর মিত্র, শাহেদ আলী- তারাও ছিলেন। দ্বিতীয়বার দেবহাটা উপজেলার ভাতশালায়। একেবারে সীমান্তবর্তী। যেখানে দৃশ্যধারণ হচ্ছে, যে নদীর পাড়ে, ইছামতি নাম, সেটি বয়ে গেছে দু’দেশের মাঝ দিয়ে। বলা চলে, ইছামতিই ভাগ করে দিয়েছে দু’দেশকে। ভাতশালা অতটা উন্নত নয়, খানিকটা দারিদ্র্যপীড়িত। যোগাযোগ ব্যবস্থা, নাগরিক সুযোগ-সুবিধার গায়ে লেগে আছে বঞ্চনার চিহ্ন। ইছামতির এ পাড়ে দাঁড়িয়ে যদি তাকানো যায় সামনে, ও পাড়টা বড্ড অপরিচিত ঠেকে। খানিকটা ঝাপসা ক্যানভাসে সারি সারি বিল্ডিং, সন্ধ্যা হলে একযোগে আলো জ্বলে ওঠে শহরজুড়ে। টাকি ওপারের নাম। ভারতের টাকি। খুব কাছাকাছি, কিন্তু অনেক দূরের। ভাতশালা আর টাকির মধ্যে আয়তনের দূরত্ব খুব বেশি না হলেও, এ দুটো জায়গা পরস্পরের কাছে ‘ওপার’ বলে পরিচিত। ওপার থেকে ওপারে যেতে গেলে ছুতো লাগে, পাসপোর্ট-ভিসা লাগে। শূটিং থেকে কলকাতায় ফিরে গিয়ে প্রসেনজিৎ তার ব্লগে লিখছেন, ‘...বাংলাদেশকে আমার সব সময়ই নিজের বাড়ির মতো লাগে। এটার কারণ হতে পারে ভাষা, মাটি, নদী, ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট; হতে পারে সবকিছুর জন্যই।’ অনেক আগে থেকেই, যখন সাতক্ষীরার ওই সীমান্তবর্তী অঞ্চলে স্যাটেলাইট সংযোগের নামগন্ধও ছিল, সাধারণ মানুষ ভাবতেও পারত না সে কথা; তখনও প্রসেনজিৎ ভীষণ জনপ্রিয়। তাই তিনি আসবেন, এ খবরে নড়ে উঠেছিল গোটা দেবহাটা, বলা চলে পুরো সাতক্ষীরা। শূটিংয়ের সময় হাজারে হাজার লোক এসেছে, সারাদিন দাঁড়িয়ে থেকেছে রোদের মধ্যে, দূরে; যদি একপলক প্রসেনজিতের দেখা মেলে! যদি তিনি একটু হাত নাড়িয়ে দেন! এদের কথাও ভোলেননি প্রসেনজিৎ। ফেসবুকে দর্শকদের সঙ্গে তোলা ছবি পোস্ট করে লিখেছেন, ‘এমন ভালবাসা আমি পেয়েছিলাম... সেখানে...।’ ‘শঙ্খচিল’ ছবি নিয়ে লিখতে গিয়ে সীমানা-এপার-ওপার নিয়ে এতো ফিরিস্তি দেয়ার কারণ আছে যথেষ্ট। এতে প্রচ-ভাবে উপস্থিত দেশভাগের প্রসঙ্গ। ’৪৭-এর দেশভাগ যে এখনও কতটা নেতিবাচক প্রভাব রেখে যাচ্ছে মানুষের জীবনে, কতটা ধ্বংসাত্মক এর প্রতিক্রিয়া- বাদল মাস্টারের ছোট্ট পরিবারের গল্পে গল্পে সেটি তুলে এনেছেন গৌতম ঘোষ। বাদল মাস্টার ভুগোল পড়ান স্থানীয় হাইস্কুলে। স্ত্রী লায়লা আর একমাত্র মেয়ে রূপসাকে নিয়ে সংসার তার। সুখের সংসার। টানিটানি আছে, কিন্তু সুখের অভাব নেই। ইছামতির একেবারে পাড়ে, বাদল মাস্টারের ঘর। ঘরটি ইটের, দু’রুমের, টালির ছাউনি। ‘শঙ্খচিল’-এর জন্যই ঘরটি বানানো। মেয়ে তার বাবাকে নানান প্রশ্ন করে, সব সময়। নদীর ওপারটা নিয়ে তার অসীম কৌতূহল। তবে রূপসার একটা অসুখ আছে। যে অসুখ তাকে একদিন ঠিকই নিয়ে যাবে নদীর ওপারে। গল্প এর চেয়ে বেশি বলে দিলে মজাটা থাকে না। প্রসেনজিৎ তো বাদল মাস্টার বোঝাই যাচ্ছে, লায়লা মানে তার স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন কুসুম শিকদার। গৌতম ঘোষের সঙ্গে এটি তার প্রথম কাজ, প্রসেনজিতের সঙ্গেও। স্বাভাবিকভাবেই তাই ভীষণ উৎফুল্ল কুসুম। তাদের মেয়ে হিসেবে আছে অনুম রহমান খান। মূলত সে-ই রয়েছে পুরো গল্পের কেন্দ্রে। ছবির ট্রেলার বেরিয়েছে ক’দিন আগে। সবাইকে খুব অবাক করে দিয়ে ইউটিউবে-ফেসবুকে তরতর করে বেড়েছে সেটার ভিউয়ারস সংখ্যা। এত শেয়ার, কমেন্ট! বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার ‘শঙ্খচিল’ মুক্তি পাবে পহেলা বৈশাখে। এখন দু’পারেই ‘শঙ্খচিল’-এর ওড়ার অপেক্ষা, অবাধে, সীমান্তের কাঁটাতারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে।
×