ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হাজারো মানুষের ভোগান্তি

৪ কোটি টাকার ব্রিজ দুই বছরেই ধস

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ১৭ মার্চ ২০১৬

৪ কোটি টাকার ব্রিজ দুই বছরেই ধস

নিজস্ব সংবাদদাতা, পটিয়া, ১৬ মার্চ ॥ কর্ণফুলী নদীর শাখা চট্টগ্রামের পটিয়ার শিকলবাহা খাল। খালের পশ্চিম পাড়ে শিকলবাহা ইউনিয়ন ও পূর্ব পাড়ে রয়েছে উপজেলার কোলাগাঁও ইউনিয়ন। দুই ইউনিয়নের মাঝখানে বয়ে যাওয়া শিকলবাহা খালের ওপর ২০১৪ সালে চার কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) একটি ব্রিজ নির্মাণ করে। দুই বছর না ঘুরতেই গত জানুয়ারিতে ব্রিজটির পশ্চিমাংশের একটি পিলার ধসে পড়েছে। যার কারণে সড়ক পথে দুই মাস ধরে কোলগাঁও-শিকলবাহা হয়ে চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ফলে এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, বিপুলসংখ্যক নারী শ্রমিক ও সাধারণ মানুষ বিভিন্নভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তারপরও খরস্রোতা এই খালের দুই পাড়ের মানুষ ঝুঁকি নিয়ে ইঞ্জিনচালিত বোটে এপাড় থেকে ওপাড়ে যাতায়ত করছে। এতে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীর অভিভাবক ও গ্রামবাসী। অভিযোগ উঠেছে, সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এর ঘুষখোর কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ব্রিজটি নির্মাণ কাজ করায় দুই বছরের মাথায় এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ধসে পড়া ব্রিজটি সংস্কারের জন্য সওজ কর্তৃপক্ষ আবারও ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। একটি প্রভাবশালী চক্র সংস্কারের নামে এবারও সিন্ডিকেট করে ৪০ লাখ টাকা লোপাটের পাঁয়তারা করছে। সওজ সূত্র ও সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, উপজেলার শিকলবাহা ও কোলাগাঁও ইউনিয়নের মাঝখানে বয়ে যাওয়া শিকলবাহা খালের ওপর সেতুটি দুই পাড়ের মানুষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুরুতে এটির নাম পটিয়া কালারপুল সেতু হলেও ২০১৪ এটি বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু সেতু নামে নামকরণ করা হয়। ২০০৭ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর এস আলম স্ট্রিল মিলের একটি কয়েলবাহী বার্জের ধাক্কায় সেতুটি বিধ্বস্ত হয়। কালারপুল উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদ ও কালারপুল সেতু বাস্তবায়ন কমিটির দাবির প্রেক্ষিতে সেতুটি প্রায় চার কোটি টাকা ব্যয়ে সওজ কর্তৃপক্ষ পুনরায় বেইলি সেতু নির্মাণ করে। সেতুটি আনোয়ারা ও পটিয়ার সংসদীয় আসনের মাঝামাঝি হওয়াতে দুই এমপির সহযোগিতায় ২০০৯ সালের এপ্রিলে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) কংক্রিট বেইজড গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্য ২১ কোটি ৯৭ লাখ টাকার প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠান। সেতুটির দৈর্ঘ্য ছিল ১৮৩.৪৪৫ মিটার এবং প্রস্থ ১০ মিটার। কিন্তু যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন হয়ে পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলেও তা আটকা পড়ে। পরবর্তীতে বিধ্বস্ত সেতুর সঙ্গে ৩২০ ফুট বেইলি সংযোজন করা হয়েছে। যা চীন ও ইংল্যান্ড থেকে আমদানি করা হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মহিউদ্দিন বিল্ডার্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড (এমবিইএল) কাজ শেষ করলে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজে এসে ২০১৪ সালের ৮ মার্চ এটি উদ্বোধন করেন। খালের পশ্চিম পাড়ের কালারপুল ওমর মিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী হুমায়রা সুলতানা এ প্রতিবেদককে বলেন, যখন নৌকায় উঠি তখন মনে ধুক-ধুক করে। ভয়ে নৌকায় উঠতে মন চায় না। তবুও শিক্ষক ও অভিভাবকদের চাপে পড়ে স্কুলে যেতে হচ্ছে। পটিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরী টিপু বলেন, জনগণের ভোগান্তি কমাতে জরুরী ভিত্তিতে সওজ কর্তৃপক্ষ ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ধসে পড়া পিলারটি সংস্কার করে শীঘ্রই ব্রিজটি পুনরায় খুলে দেয়া হবে। তাছাড়া কংক্রিট বেইজড গার্ডার সেতু নির্মাণের জন্য ৩২ কোটি টাকার একটি প্রস্তাবনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তা অনুমোদন হয়ে আসলে কংক্রিট বেইজড গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হবে।
×