ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অস্ত্র ও ২ মাইক্রো জব্দ

মেয়ে অপহরণে বাধা দেয়ায় বাবাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা গ্রেফতার ৭

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১৭ মার্চ ২০১৬

মেয়ে অপহরণে বাধা দেয়ায় বাবাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা গ্রেফতার ৭

নিজস্ব সংবাদদাতা, নারায়ণগঞ্জ, ১৬ মার্চ ॥ ফতুল্লার ভুঁইঘরের রঘুনাথপুর এলাকায় মেয়েকে অপহরণে বাধা দেয়ায় বাবা মনীন্দ্র চন্দ্র অধিকারীকে (৪৮) ছুরিকাঘাতে হত্যা করেছে কথিত প্রেমিক ও তার সহযোগীরা। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে এলাকাবাসীর ৭ জনকে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে হত্যাকা-ে ব্যবহৃত দুটি ধারালো ছোরা এবং দুটি হাইয়েস মাইক্রোবাস। পুলিশ বলছে, মেয়েকে তুলে নেয়ার সময় বাধা দেয়ায় বাবাকে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার পর কথিত প্রেমিক তুহিন পলাতক। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার রাত তিনটায়। বুধবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি। পুলিশ, প্রতক্ষ্যদর্শী ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গত ৬ মাস আগে সনাতন ধর্মাবলম্বী পরিবারের মেয়ে ঝর্নার সঙ্গে রাজধানীর শ্যামপুর এলাকার সাউন্ড সিস্টেম দোকানের কর্মচারী মুসলিম পরিবারের সন্তান তুহিনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু বিষয়টি জেনে ঝর্ণার বাবা মনীন্দ্র চন্দ্র অধিকারী তাদের প্রেমের সম্পর্ক মেনে না নিয়ে ওই ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক না রাখার জন্য মেয়েকে নানাভাবে চাপ দিতে থাকে। এ কারণে গত দুই মাস ধরে ঝর্ণা তুহিনের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে তাকে এড়িয়ে চলে। সম্প্রতি ঝর্ণার বিয়েও ঠিক করেন বাবা মনীন্দ্র চন্দ্র। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে মঙ্গলবার রাত তিনটায় তুহিন দুটি মাইক্রেবাসে করে ১০-১২ সহযোগী মিলে ওই বাড়িতে যায় এবং কৌশলে মেয়েকে তুলে নিয়ে আসতে। বিষয়টি পরিবারের লোকজন টের পেলে বাবা মনীন্দ্র চন্দ্র ঘর থেকে রেব হন। বাবাকে পেয়েই তারা তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। এ সময় পেছনে পেছনে মনীন্দ্রের স্ত্রী প্রজাপতি রানীও ঘর থেকে বের হন। স্বামীকে ছুরিকাঘাত করার সময় হৃদয়কে সেও জাপটে ধরে চিৎকার করতে থাকে। পরে আশপাশের লোকজন ছুটে এসে তার ৭ সহযোগীকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। গুরুতর আহত অবস্থায় মনীন্দ্র অধিকারীতে নারায়ণগঞ্জ তিন শ’ শয্যা হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গ্রেফতারকৃতরা হলো- হৃদয় (২৬), নজরুল ইসলাম (৩৫), মনির হোসেন (৩৪), জাহিদ (২০), সুশান্ত (১৯), জুয়েল (২৫) ও বাবু (২১)। নিহত মনীন্দ্র চন্দ্র অধিকারীর বাড়ি রংপুর জেলার লালমনিরহাট থানার কালীগঞ্জে। তিনি স্ত্রী ও চার সন্তান নিয়ে ভূঁইঘরে রঘুনাথপুর এলাকায় এনামুল হকের বাড়িতে সপরিবারে বসবাস করতেন এবং বাড়ির কেয়ারটেকার হিসেবে কাজ করতেন। পেশায় তিনি একজন চিত্রকর ছিলেন। ফতুল্লা থানার ওসি কামাল হোসেন জানান, ঝর্ণা নবম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। ঝর্ণার প্রেমে বাধা ও মেয়েকে তুলে নিতে আবারও বাধা প্রদান করায় বাবাকে ছুরিকাঘাত হত্যা করেছে। এ ঘটনায় হৃদয়সহ সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে হৃদয় গণপিটুনিতে আহত হয়েছে। পুলিশ দুটি হাইয়েস মাইক্রোবাস এবং দুটি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে। হত্যার মূল আসামি তুহিন ও তার সহযোগী চারজন পালিয়ে গেছে। থানায় ঝর্ণা রানী সাংবাদিকদের বলেন, ছয় মাস আগে কালীপূজার সময় তার সঙ্গে পরিচয় হয় তুহিনের। গত দুই মাস আগে সে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। তুহিনের ধারণা তার বাবার চাপের কারণে সে যোগাযোগ বন্ধ করেছে। এ জন্য বাবার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল তুহিন। এর জের ধরে মঙ্গলবার রাতে ওই বাড়িতে গিয়ে বাবাকে হত্যা করে তুহিন ও তার সহযোগীরা। ঝর্ণার বড় বোন বন্যা রানী জানান, ছয় মাস আগে একটি পূজার অনুষ্ঠানে তুহিনের সঙ্গে ঝর্ণার পরিচয় হয়। ঝর্ণার এক বান্ধবীর কাছ থেকে বাসার ফোন নম্বর নিয়ে তুহিন ঝর্ণাকে ফোন করত এবং দুজনের মধ্যে কথা হতো। পরে বাবার আদেশের কারণে ঝর্ণা তুহিনের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিলে তুহিন আমাদের বাবাকে খুন করবে বলে ঝর্ণাকে হুমকি দেয়। সেই থেকেই তুহিন আমাদের বাবাকে খুন করার পরিকল্পনা করে রাতে আমাদের বাসায় এসে হামলা করে। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে ঝর্ণা দ্বিতীয়। নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মোঃ মোখলেছুর রহমান জানান, বাবার কারণে মেয়ে সরে যাচ্ছেÑ এ কারণে পরিকল্পিতভাবে তুহিন ও তার সহযোগীরা বাবাকে মেরে ফেলার জন্য উপর্যুপুরি ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তাকে মারার জন্যই পরিকল্পিতভাবে মাইক্রোবাসযোগে এসে হামলা চালিয়েছে। এই ঘটনায় ৭ জনকে আটক করা হয়েছে।
×