ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিশু শিক্ষার্থীদের অভিনব আয়োজনে ওয়াহিদুল হকের জন্মদিন পালন

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১৭ মার্চ ২০১৬

শিশু শিক্ষার্থীদের অভিনব আয়োজনে ওয়াহিদুল হকের জন্মদিন পালন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সেলফোন ও ফেসবুকের আধিক্য যখন এত ছিল না তখন বিকেল হতেই বাড়ির উঠোনে চলত গোল্লাছুট, কুতকুত, বইচি, লুকোচুরিসহ অনেক খেলা। গ্রামের দুরন্তপনা ছেলেমেয়ে দলবেঁধে এসব খেলায় অংশ নিত। বারন থাকত অভিভাবকদের পক্ষ থেকে। বরং উৎসাহ দেয়া হতো। ২০১৬ এসে বলতে হচ্ছে এসব খেলা এখন গ্রামে দেখা যায় না। আর শহরে তো নয়ই। মাংস চোর, রুমাল চোর, রাজারানী, কড়ি, ডাংগুলি, আগডুম বাগডুম, ছড়াকাটা, ইচিংবিচিংসহ অর্ধশতাধিক লোকজ খেলা এখন অতীত। এসব খেলা ছিল অনেকের মধুর স্মৃতি। এসব খেলা কিভাবে খেলত হয় বর্তমান প্রজš§ অনেকেই জানে না। ছায়ানটের সাধারণ শিক্ষাকার্যক্রম নালন্দার শিক্ষার্থীদের অভিনব আয়োজনে আবার মনে করিয়ে দিল লোকজ খেলার স্মৃতি। তারা কাগজ-কলম আর নানা রকম অনুষঙ্গের মধ্য দিয়ে হারিয়ে যাওয়া লোকজ খেলা অনুভূতির প্রকাশ করল শিশু-শিক্ষার্থীরা। বুধবার ছিল দেশের সংস্কৃতির পথ নির্মাণের অগ্রপথিক ওয়াহিদুল হকের ৮৪তম জš§দিন। এ বছর ভিন্নভাবে তার জšে§াৎসবের আয়োজন করে নালন্দা। নালন্দার শ্রেণীকক্ষজুড়ে প্রদর্শন করা হয় লোকজ খেলা নিয়ে নিজেদের অনুভূতি, খেলার নিয়ম-কানুন। সাদা কাগজে হাতে লেখা কাঁচা হাতে আঁকা চিত্রকর্মগুলো যেন সজীব হয়ে ধরা দিয়েছিল। খেলার অনুষঙ্গ ঘুড়ি, মার্বেল, নাটাই, লাটিম, ডাংগুলিও প্রদর্শন করা হয়। বেশ কিছু খেলার মডেলও তৈরি করেছিল শিক্ষার্থী। লোকজ খেলার ব্যতিক্রমী এই প্রদর্শনী ছাড়াও ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। লোকজ গান ছাড়াও ছিল ছড়া বলা, শিশুতোষ নাচ, পুঁথিপাঠসহ নানা আয়োজন। অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আধ ঘণ্টা আগে থেকেই লোকারণ্য মিলনায়তন। এখানে সাংস্কৃতিক পর্বের শুরুতেই শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করে জাতীয় সঙ্গীত। এর পর পরিবেশন করে পর পর দুইটি গান ‘আমি কোথায় পাব তারে’ ও ‘আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে’। অনুষ্ঠানে ভিন্ন মাত্রা যোগ করে শিশুদের কণ্ঠে বৃন্দ ছড়া পরিবেশনা ‘ছেলে ভুলানো ছড়া’। দুটি গান ও একটি ছড়া পরিবেশার পর আবারও গানের পালা। এবার খুদে শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে শোনা গেল মজার গান ‘বিড়াল বলে মাছ খাব না’। তারপরই ছিল লোকজ গান ‘লোকে বলে বলে রে’। ‘কাক্কোলি’ শিরোনামে ছড়া পরিবেশন করে শিক্ষার্থীরা। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এই আয়োজনে আরও পরিবেশিত গান ‘জলে গিয়াছিলাম সই’, ‘নদীর নাম সই’, ‘গ্রামের নওজোয়ান হিন্দু মুসলমান’, ‘মুসলমানে বলে গো আল্লাহ’, নদীর এক কূল ভাঙিয়া গেলে’, ‘আমি মানব ধরমে’ ও ‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি। ছিল আদিবাসী নৃত্য। নৃত্যনাট্য ‘নকশী কাঁথার মাঠ’ ছিল উপভোগ্যময়। পুঁথিপাঠ ছাড়াও নাটক ‘অবাক জল পান’ পরিবেশন করে নালন্দার খুদে শিক্ষার্থীরা। পুরো এই আয়োজনে প্রথাগত কোন প্রধান বা বিশেষ অতিথি ছিলেন না। তাই ছিল না উ™ে^াধনের পালা। তবে প্রাঙ্গণ সাজানো হয় নানা অনুষঙ্গ নিয়ে। শেষটাও হয় জাতীয় সঙ্গীতের পরিবেশনের মধ্য দিয়ে। ‘আবিষ্কার সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬’ পেলেন দুই বাংলার তিন গুণী ব্যক্তিত্ব ॥ ‘সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক, কবি নির্মলেন্দু গুণ ও ওপার বাংলার কথাশিল্পী সমরেশ মজুমদারের দীর্ঘ সাহিত্য জীবনের সঙ্গে আমরা পরিচিত। তাদের সঙ্গে রয়েছে আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্কও। আজ তারা পেলেন ‘আবিষ্কার সাহিত্য পুরস্কার’। এর আগে এরা অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। সেই তুলনায় এ পুরস্কার নতুন ও অপ্রচলিত। তাদের প্রতি রইল আমার শুভ কামনা প্রেসক্লাবে আয়োজিত ‘আবিষ্কার সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬’ প্রদান অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে এ কথা বলেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ‘আবিষ্কার সাহিত্য পুরস্কার ২০১৬’ প্রদান করা হলো দুই বাংলার তিন গুণী লেখক ও কবিকে। এরা হলেন বাংলাদেশের কবি সৈয়দ শামসুল হক ও নির্মলেন্দু গুণ এবং ভারতের কথাশিল্পী সমরেশ মজুমদার। জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বুধবার বিকেলে এক আনন্দঘন পরিবেশে তাদের হাতে এ পুরস্কার তুলে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। শুরুতে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান আবিষ্কারের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে অতিথিদের বরণ করে নেয়া হয়। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী। এরপর সৈয়দ শামসুল হক, সমরেশ মজুমদার ও নির্মলেন্দু গুণের শংসাপত্র পর্যায়ক্রমে পাঠ করেন কবি হাবিবুল্লাহ্ সিরাজী, ফরিদ আহমদ দুলাল ও কবি মারুফুল ইসলাম। এবং তাদের প্রত্যেকের হাতে শংসাপত্র, পুরস্কারের অর্থমূল্য ২৫ হাজার টাকার চেক ও ক্রেস্ট তুলে দেন ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। পুরস্কার প্রাপ্তির পর অনুভূতি প্রকাশ করে নির্মলেন্দু গুণ বলেন, আজ এপার বাংলা ও ওপার বাংলার জনপ্রিয় সাহিত্যিকদের সঙ্গে যুক্ত করে আমাকে যে পুরস্কার দেয়া হলো তাতে আমি খুবই আনন্দিত। পুরস্কার সব সময় প্রত্যেকের জীবনে একটা নতুন বার্তা নিয়ে আসে। কথাশিল্পী সমরেশ মজুমদার তার অনুভূতি প্রকাশে বলেন, কয়েকদিন আগে কয়েকজনকে জড়িয়ে আমাকেও আজীবন সম্মাননা দেয়া হয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে। এতে কি আমাদের কর্মময় জীবন শেষ হয়ে গেছে? আমি তা মনে করি না। আমাকে বলা হচ্ছে ভারতের লেখক। আমি কিন্তু ভারত বা বাংলাদেশের লেখক নই। আমি বাংলা ভাষার লেখক। জীবন রহস্যময়। এ জীবনে বেঁচে থাকা তার সৃষ্টিকর্মের মাধ্যমে। আমাকে আজ এ পুরস্কার দেয়ায় আমি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। সৈয়দ শামসুল হক অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, খুব আনন্দ হলো আজ ৩জন একসঙ্গে পুরস্কৃত হলাম। দিনটি স্মরণীয় হয়ে রইল। আমি এই পুরস্কার গ্রহণ করে গর্বিত, আনন্দিত ও কিঞ্চিত সমৃদ্ধও হয়েছি। ফ্রঙ্কোফোনি উৎসবে ‘মাতৃভাষার উন্নয়ন ও সংরক্ষণ শীর্ষক’ আলোচনানুষ্ঠান ॥ ফ্রঙ্কোফোনি উদযাপনে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করছে ঢাকার আলিয়ঁস ফ্রঁসেজ। এতে রয়েছে পেতঙ্ক নামক একটি ফরাসী ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, ল্যাবসি-তোয়া প্রতিযোগিতা, রান্না প্রতিযোগিতা, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, ফরাসী ভাষায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিদর্শন,অনুবাদ প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। এর অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বুধবার সকালে ‘মাতৃভাষার উন্নয়ন ও সংরক্ষণ’ শীর্ষক এক আলোচনানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
×