ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অরক্ষিত অবস্থায় চলছে মগবাজার-মৌচাক উড়াল সেতুর কাজ

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১৭ মার্চ ২০১৬

অরক্ষিত অবস্থায় চলছে মগবাজার-মৌচাক উড়াল সেতুর কাজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পুরোপুরি অরক্ষিত অবস্থায় চলছে মগবাজার-মৌচাক উড়াল সেতুর নির্মাণ কাজ। প্রকল্পের কাজে গেল তিন বছরে কোনদিনই মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রাখা হয়নি। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দিব্যি মাথার ওপর রাতদিন চলছে নির্মাণ কাজ। নিরাপত্তার বিষয়টি তোয়াক্কা না করেই উপরে উঠানো হচ্ছে ভারি ভারি যন্ত্রপাতি। চলছে ঝালাই, যা শুধু বাংলাদেশেই নয়, গোটা পৃথিবীর ইতিহাসেই হয়ত বিরল ঘটনা। অথচ রাস্তা দিয়ে দিনভর যাচ্ছে হাজার হাজার যানবাহন আর মানুষ। বলতে গেলে রাজধানীর সবচেয়ে ব্যস্ততম কয়েকটি রাস্তার মধ্যে এটি একটি। এমন বাস্তবতায় নিরাপত্তাহীনতার বলি হতে হলো রাব্বী আহমেদ ওরফে ইমন (৩২) নামে এক যুবকের। বুধবার রাজধানীর মগবাজারে উড়াল সেতু থেকে লোহার রড পড়ে তার নির্মম মৃত্যু হয়েছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। যিনি ছিলেন উড়াল সড়কের নির্মাণ কাজের সঙ্গে যুক্ত। এ ঘটনার পরপরই প্রকল্পের শ্রমিক থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করে। অনেকেই নানামুখী মন্তব্য করেন। কেউ কেউ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ারও দাবি তোলেন। সেইসঙ্গে জানমালের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে উড়াল সড়কের নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাওয়ার দাবি জানান সাধারণ মানুষ। রমনা থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) তাপস ঘোষাল জনকণ্ঠকে শ্রমিক নিহত হওয়ার তথ্য জানান। তাপস ঘোষাল বলেন, মগবাজার মোড় থেকে বাংলামোটরের দিকে যাওয়ার পথে নির্মাণাধীন উড়ালসেতু থেকে লোহার টুকরা রাব্বীর ওপর পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত রাব্বীর গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধায়। তার বাবার নাম কবির হোসেন। রাব্বী ঢাকার উত্তরার আশকোনায় থাকতেন। তিনি মগবাজার উড়াল সেতুর নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপের অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন। প্রতিদিনের মতো বুধবার সকালে কর্মস্থলে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। এ দিনই যে তার জীবনের শেষ দিন, তা কে জানত। হয়ত নিজেও কখনও ভাবেননি তাকে এভাবে বিদায় নিতে হবে। যে হাত দিয়ে মানুষের যাতায়াতের সুবিধার্তে উড়াল সড়ক নির্মাণ করছিলেন, তা তিনি দেখে যেতে পারবেন না। এখানেই তাকে মরতে হবে। রাব্বীর মৃত্যুতে কেঁদেছেন সহকর্মীরা। চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি পথচারী থেকে শুরু করে কর্তব্যরত পুলিশও। প্রশ্ন হলো এ হত্যাকা-ের দায় কার? কিংবা কে নেবে দায়? তবে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সবার একই প্রশ্ন? অরক্ষিত নির্মাণ কাজের জন্যই রাব্বীকে চলে যেতে হয়েছে। সহকর্মীরা চিরদিনের মতো তাকে হারিয়েছেন। বিদায় দিয়েছেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে। খবর পেয়েও তমা গ্রুপের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থলে কেউ আসেননি। এ সড়কে প্রতিদিন যাতায়াত করেন রায়হান। ঘটনার পর মানুষের জটলা দেখে গাড়ি থেকে নামেন তিনি। জানালেন, জান ও মালের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় না নিয়েই প্রকল্পের কাজ চালানো হচ্ছে। প্রতিদিন রাস্তা দিয়ে যখন হাজার হাজার গাড়ি চলে তখন উপরে চলে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ। আগুনের ফুলকি পড়ে মানুষের গায়ে, নয়ত গাড়িতে। এতে সায় দিলেন উপস্থিত আরও অনেকে। সায়হাম নামে একজন বললেন, রাজধানীতে বেশিরভাগ গাড়ি চলে সিএনজিচালিত গ্যাসে। কিন্তু উপর থেকে দিব্যি আগুনের ফুলকি পড়ে। এতে গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হতে পারে। ঘটতে পারে মারাত্মক দুর্ঘটনা। নির্মাণ শ্রমিক রাসেল জানালেন, যেভাবে কাজ চলছে এভাবেই চলবে। এর চেয়ে বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কোন পদক্ষেপ বা নির্দেশ কোম্পানির পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি। ফলে অনিরাপদ পরিবেশে আমাদেরও কাজ করতে হচ্ছে। রাস্তার মাঝখানে মই দিয়ে উঠতে হচ্ছে ফ্লাইওভারের উপরে। নামেমাত্র ঝালাই দেয়া রডে বাঁধা চিকন রশিতে ঝুলে নির্মাণ কাজ করতে দেখা গেছে শ্রমিকদের। ক্রেন দিয়ে ভারি ভারি জিনিসপত্র তোলা হচ্ছে মানুষের উপর দিয়ে। অথচ একটু অসতর্ক হলেই ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। সোমবার সকালে মানুষের মাথার উপর দিয়ে সেতুর উপর থেকে ভারি ভারি লোহার পাত নামাতে দেখা গেছে। তাছাড়া অনেক সময় দিনের বেলাতেও গার্ডার বসানো হয়। এদিকে শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় মগবাজার উড়াল সেতুর নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান তমা গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছেন রমনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান। তিনি বলেন, নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় মামলা করার কথা রয়েছে। যদি তারা কেউ মামলা না করেন, তাহলে পুলিশ বাদী হয়ে তমা গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা করবে। তবে বুধবার রাত পর্যন্ত কোন পক্ষ থেকেই মামলা দায়ের করা হয়নি।
×