ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রোমাঞ্চ উড়ে গিয়ে হার হলো নিয়তি!

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৭ মার্চ ২০১৬

রোমাঞ্চ উড়ে গিয়ে হার হলো নিয়তি!

মিথুন আশরাফ, কলকাতা থেকে ॥ ‘ইডেন গার্ডেন আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে।’- খেলা শুরু হওয়ার আগেই সাইড স্ক্রিনে ভেসে ওঠে লেখাটি। কিন্তু খেলা যখন চলতে থাকল এবং শেষ হলো, মনে হলো ইডেন গার্ডেন বাংলাদেশকে নয়, পাকিস্তানকেই স্বাগত জানিয়েছে। পুরো ম্যাচ জুড়ে যে শুধু পাকিস্তানকেই মিলল। বাংলাদেশকে খুঁজেই পাওয়া গেল না। পাকিস্তানের ইনিংস শেষ হতেই বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের ইডেন গার্ডেনে প্রথমবারের মতো খেলার রোমাঞ্চও উড়ে গেল। ৫৫ রানের হারে এখন আত্মবিশ্বাস উড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই জোরালো হয়েছে। যে আত্মবিশ্বাসহীনতা বাংলাদেশকে সামনের ম্যাচগুলোতেও বিপাকে ফেলতে পারে। ‘আমরা রোমাঞ্চিত।’ বুধবার বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচের আগে মঙ্গলবার কথাটি বলেছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। সেই রোমাঞ্চে যেন সব গুলিয়ে গেল। ভারতের মাটিতে পাকিস্তানের সঙ্গে প্রথমবারের মতো খেলছে বাংলাদেশ। কত আশা, কত স্বপ্ন; সর্বশেষ দুইবার যে পাকিস্তানকে হারিয়েছে বাংলাদেশ, এবারও হারাবে। সব স্বপ্ন, আশা ধূলিস্মাত হয়ে গেল। পাকিস্তানকে একটু সময়ের জন্যও চাপে ফেলতে পারল না বাংলাদেশ। অথচ এ মাসেই এশিয়া কাপে পাকিস্তানকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই হারের প্রতিশোধই নিল যেন পাকিস্তান। তাই বলে এমনভাবে হার হবে বাংলাদেশের! মোহাম্মদ হাফিজ (৬৪), আহমেদ শেহজাদ (৫২) ও শহীদ আফ্রিদি (৪৯) এমন ব্যাটিংই করলেন, পাকিস্তান ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২০১ রান করল। তাসকিন আহমেদ ও আরাফাত সানি ২ উইকেট করে নিলেন। পাকিস্তানের স্কোরবোর্ডে এত বেশি রান জমা হলো যে তখনই বাংলাদেশের হার নিশ্চিত হয়ে গেল। এরপর এমন চাপের ম্যাচে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা কী করতে পারেন, তাই যেন দেখার অপেক্ষা ছিল। বাছাইপর্বে হল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও ওমানের সঙ্গে খেলেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তামিম ইকবাল প্রতি ম্যাচেই ভাল খেলেছেন। এমনকি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে একমাত্র সেঞ্চুরিয়ানও তামিম। বাছাইপর্বে যে বোলিং শক্তির বিপক্ষে খেলেছে বাংলাদেশ, সেই শক্তি এবার ‘সুপার টেনে’ অনেকগুণ বেড়ে গেছে। এ শক্তির সামনে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা কী করেন, সেদিকেই সবার দৃষ্টি থাকে। তাতে বোঝাও গেল, ‘সুপার টেনে’ বাংলাদেশের সামনে আরও বিপদ আসছে। ব্যাটিং সহায়ক উইকেটেও যখন বাংলাদেশ ১৫০ রান করতে পারল না, তখন বিপদ সঙ্কেত মিলছেই! সাকিব আল হাসান শুধু ৫০ রান করতে পারলেন। আর কোন ব্যাটসম্যানই ৩০ রানও করতে পারল না। এত বেশি রানের বিপক্ষে যখন খেলতে হয়েছে, তখন একজনের বড় স্কোর দিয়ে কী আর ম্যাচ জেতা সম্ভব! কখনই না। বোঝা গেল, চাপে পড়লেই বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা এলোমেলো হয়ে যাবেন। পাকিস্তানের সঙ্গে ২০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৪৬ রানের বেশি করতেই পারল না বাংলাদেশ। যে দুই বোলারকে নিয়ে ভয় ছিল, সেই মোহাম্মদ আমির ও শহীদ আফ্রিদি ২টি করে উইকেট নিয়ে নিলেন। পাকিস্তান ব্যাটিং যেমন ভাল করল, তেমনি বোলিংটাও করল দুর্দান্ত। সেখানে বাংলাদেশ বোলাররাও এদিন খারাপ করল, ব্যাটিংটাও হলো বাজে। যেদিন খারাপ দিন যায়, সেদিন সবদিক দিয়েই যায়। এশিয়া কাপে এত ভাল খেলার পর বাছাইপর্বেও দুর্দান্ত খেলা উপহার দেয়ার পর ‘সুপার টেনে’র প্রথম ম্যাচে এসে খারাপ দিনটির মুখোমুখি হয়ে গেল বাংলাদেশ। এখন বাংলাদেশের সামনে আছে অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে ম্যাচ। যে অবস্থা প্রথম ম্যাচেই বোঝা গেল, তাতে করে সামনে আরও বেশি করে বোলিং আক্রমণের সামনে পড়বে বাংলাদেশ, সেই সঙ্গে প্রতিপক্ষের ব্যাটিংটাওতো বিশ্বমানের। তাহলে তো বাংলাদেশ ‘সুপার টেনে’ একটি ম্যাচেও জিততে পারবে না! সেই রকম হিসেবও সবার সামনে চলে আসছে। মাশরাফি নিজেই বলেছেন, ‘ব্যাঙ্গালুরুর উইকেটও ফ্ল্যাট হবে। সেই উইকেটে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংটা আরও শক্তিশালী হয়ে ধরা দেবে।’ তাতেই বোঝা যাচ্ছে, এখনই অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ম্যাচটি নিয়ে ভাবতে শুরু করে দিয়েছে বাংলাদেশ দল। পাকিস্তানের ম্যাচটিতে হারা নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘দুই শ’ রান সামনে থাকলে তা অতিক্রম করা সবসময়ই কঠিন। পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণের সামনে তা আরও কঠিন। সাকিব ভাল ব্যাটিং করেছে এবং আমরাও ১৫০ রানের কাছে গিয়েছি। এটা খারাপ নয়। আমরা বল ভালই করছিলাম। কিন্তু আজ (বুধবার) বোলিং ভাল হয়নি। প্রথম ছয় ওভারে আসলে অনেক রান দিয়ে দিয়েছি। আমরা ইডেন গার্ডেনে খেলার আগে অনুশীলনটাও ভাল করতে পারিনি। তবে মানসিকভাবে এখনও শক্তই আছি আমরা।’ তা শক্ত থাকলেই হয়। না হলে সামনে বিপদই আছে!
×