ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবস্থা ভাল নয়, ঢেলে সাজাতে হবে ॥ মুহিত

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৭ মার্চ ২০১৬

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অবস্থা ভাল নয়, ঢেলে সাজাতে হবে ॥ মুহিত

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রিজার্ভ থেকে অর্থ জালিয়াতির ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক পুরোপুরি ঢেলে সাজানোর ব্যাপারে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থা ভাল নয়, তাই এটির আরও রিফর্ম (সংস্কার) হওয়া প্রয়োজন। এদিকে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সদস্য মোঃ ইউনুসুর রহমান। এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। একই আদেশে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলমকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। এছাড়া সাবেক অর্থ সচিব ও সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ফজলে কবিরকে আগামী চার বছরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর নিয়োগ দিয়ে আদেশ জারি করেছে সরকার। নতুন গবর্নর দায়িত্ব নেয়ার পরই দুই ডেপুটি গবর্নর নিয়োগে সার্চ কমিটি গঠন করা হবে। বুধবার সচিবালয়ে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। ওই সময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন সিস্টেমস রিকয়ার সিরিয়াস রিফর্মস। ইট ইজ নট ইন এ ভেরি হেলদি কন্ডিশন। দ্যাট ইজ ম্যাই এ্যাসেসমেন্ট দ্যাট কন্ডিশন ইজ নট দ্যাট হেলদি। তবে ঠিক কীভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ঢেলে সাজাতে চান তা স্পষ্ট না করে নতুন গবর্নরকে সেই দায়িত্ব দেয়ার আভাস দেন মুহিত। তিনি বলেন, নতুন গবর্নর সম্ভবত ১৯ অথবা ২০ মার্চ দায়িত্ব নেবেন। তিনি এখন নিউইয়র্কে আছেন, ১৮ মার্চ দেশে ফিরবেন। নতুন গবর্নর আসার পরে তিনি নিজেকে সেটেল করতে কিছু সময় নেবেন। তখন উনি আরও (সংস্কারের বিষয়গুলো) দেখবেন। এছাড়া সাবেক গবর্নর ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটিও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোথায় কোথায় সংস্কার প্রয়োজন তা খতিয়ে দেখবে বলেও জানান মুহিত। এদিকে, অর্থ লোপাটের ঘটনায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদ্য বিদায়ী সচিব ড. আসলাম আলম জড়িত কী না এ বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে অর্থমন্ত্রী বলেন, পদাধিকারবলে তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য। তবে অর্থ লোপাটের ঘটনায় সচিব জড়িত ছিলেন না বলেই মুহিতের বিশ্বাস। তারপরও তাকে সরিয়ে দেয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে অর্থমন্ত্রী বলেন, এখানে প্রিন্সিপালটা হলো-সচিব হবেন ভিজিলেন্ট। সো ইউ শুড নো এ্যাবাইড ইট, দুর্ভাগ্যবশত নোবডি নিউ। নতুন দুজন ডেপুটি গবর্নর নিয়োগের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা লম্বা প্রোসেস। কারণ, এটাতে সার্চ কমিটি হয়। সার্চ কমিটি নমিনেশন দেয়, তারপরে নিযুক্তি হয়, সো, এটা সময় লাগবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি বিশেষজ্ঞ ভারতীয় নাগরিক রাকেশ আস্তানার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, এটাও নতুন গবর্নর দেখবেন। তবে তার কাজের পরিধি কমানো হবে। ফজলে কবিরকে চার বছরের জন্য নিয়োগ ॥ সোনালী ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাবেক অর্থ সচিব ফজলে কবিরকে আগামী চার বছরের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর পদে নিয়োগ দিয়ে আদেশ জারি করা হয়েছে। একই সঙ্গে দুই ডেপুটি গবর্নরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ১৫ মার্চ থেকে বাতিলের আদেশও জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। রিজার্ভ লোপাটের ঘটনায় ড. আতিউর রহমান গবর্নরের পদ ছাড়ার পর এসব সিদ্ধান্ত মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী জানালেও বুধবার আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। আতিউরের পদত্যাগের পর দুই ডেপুটি গবর্নর আবুল কাশেম ও নাজনীন সুলতানাকে অব্যাহতি দেয়ার সঙ্গে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলমকেও সরিয়ে দেয়া হয়। অন্য সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কর্মসম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে যোগদানের তারিখ থেকে পরবর্তী চার বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গবর্নরের দায়িত্ব পালন করবেন ফজলে কবির। ড. আতিউর রহমানও ২০০৯ সালে প্রথম চার বছরের জন্য নিয়োগ পেয়েছিলেন। পরে তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল। তা শেষ হওয়ার আগে বিদায় নিতে হয়েছে তাকে। নতুন গবর্নরের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অন্যান্য শর্ত চুক্তিপত্র দ্বারা নির্ধারিত হবে বলে আদেশে বলা রয়েছে। ১৯৫৫ সালের ৪ জুলাই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন ফজলে কবির। তার পৈত্রিক বাড়ি মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ি উপজেলার হাসাইল গ্রামে। ব্যাংকিং খাত বিভাগের নতুন সচিব ॥ ড. এম আসলাম আলমকে ওএসডি করার পর নতুন সচিব হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে মোঃ ইউনুসুর রহমানকে। তিনি গত বছরের মে মাস থেকে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ইতোপূর্বে তিনি কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানের পদে কর্মরত ছিলেন। সচিব হওয়ার আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিবের দায়িত্ব পালন করে আসা ইউনুসুরের বাড়ি বরিশাল জেলায়। প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভে সঞ্চিত বাংলাদেশ ব্যাংকের ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি হওয়ার বিষয়টি প্রায় এক মাস পর বিদেশী একটি পত্রিকার মাধ্যমে জানাজানির পর চাপে পড়েন সদ্য বিদায়ী গবর্নর ড. আতিউর রহমান। এ ঘটনা না জানানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছিলেন। এর পরই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যবস্থাপনায় ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়।
×