ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সেমিনারে অভিমত

দেশে শিশুদের মাতৃদুগ্ধ পানের হার বিপজ্জনক হারে কমছে

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ১৭ মার্চ ২০১৬

দেশে শিশুদের মাতৃদুগ্ধ পানের হার বিপজ্জনক হারে কমছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে শিশুদের মাতৃদুগ্ধ পানের হার আগের বছরগুলোর তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে বুকের দুধের পরিবর্তে শিশুদের গুঁড়োদুধ খাওয়ানোর হার বিপজ্জনকহারে বেড়ে চলেছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় নানাবিধ সুপারিশের পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানকে (আইপিএইচএন) শক্তিশালী করতে হবে। গুঁড়োদুধ প্রস্তুত ও বিপণনকারী কোম্পানিগুলোর দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। এ সংক্রান্ত আইন যথাযথভাবে কার্যকর করতে হবে। এ আইন ভঙ্গ করার জন্য মামলা করতে হবে এবং অন্যায়কারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ ডাঃ মিলন হলে বেসরকারী সংস্থা ব্র্যাকের আয়োজনে ‘চাইল্ড নিউট্রিশন ও বিএমএস এ্যাক্ট ২০১৩’ শীর্ষক জাতীয় আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন। ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচীর পরিচালক ড. কাওসার আফসানার সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানটির এ্যাডভোকেসি ফর স্যোশাল চেঞ্জ বিভাগের কর্মসূচী সমন্বয়কারী সদরুল হাসান মজুমদার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পিডিয়াট্রিক এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মোঃ শহীদুল্লাহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন আইপিএইচএন পরিচালক ডাঃ এবিএম মাজহারুল ইসলাম ও অবসটেট্রিকাল এ্যান্ড গাইনিকলজিক্যাল সোসাইটি অব বাংলাদেশের (ওজিএসবি) সভাপতি অধ্যাপক রওশান আরা বেগম। অনুষ্ঠানে মাতৃদুগ্ধ-বিকল্প সংক্রান্ত আইন বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ব্রেস্টফিডিং ফাউন্ডেশনের (বিবিএফ) সভাপতি ডাঃ এস কে রায়। এ বিষয়ে একটি সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরেন ব্র্যাকের গবেষণা ও মূল্যায়ন বিভাগের স্টাফ গবেষক ফাহমিদা আক্তার। এতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিশু, পুষ্টি ও প্রসূতি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং গণমাধ্যম কর্মীরা আলোচনায় অংশ নেন। অধ্যাপক মোঃ শহীদুল্লাহ বলেন, মাতৃদুগ্ধ বিকল্প ও শিশুখাদ্য বাজারজাতকরণ সংক্রান্ত আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের জন্য সরকার ও অন্যান্য অংশীদারকে যার যার জায়গা থেকে নিবিড় দায়বদ্ধতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, এ আইন ভঙ্গ করার জন্য মামলা করতে হবে এবং অন্যায়কারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া আইনটি হিসাবে চিকিৎসকদের পাঠ্যসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করার কথাও তিনি বলেন। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, মায়ের বুকের দুধ পান নিশ্চিত করা হলে বিশ্বে বছরে পাঁচ বছরের কম বয়সী দুই লাখ বিশ হাজার শিশুকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব। কিন্তু এ বিষয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও সমাজে অগ্রগতি সমানভাবে আশানুরূপভাবে হচ্ছে না। বাংলাদেশে ২০১১ সালে সদ্যজাত থেকে ছয় মাস বয়স পর্যন্ত শিশুদের শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়ানোর হার ছিল ৬৪ শতাংশ, যা বর্তমানে ৯ (নয়) শতাংশ কমে ৫৫ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে আবার গুঁড়োদুধ খাওয়ানোর হার বিপজ্জনকভাবে বেড়ে চলেছে। মূল প্রবন্ধে আরও বলা হয়, মাতৃদুগ্ধ-বিকল্প ও শিশুখাদ্য বাজারজাতকরণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার আইন ও নীতিমালা প্রণয়নে অনেকটা এগিয়ে গেলেও এর বাস্তবায়ন অনেক পিছিয়ে আছে। ব্র্যাকের গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী, সরকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও কর্মচারী, দোকান ও ফার্মেসি এবং পরিবার পর্যায়ে এ আইন সম্পর্কে ধারণার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। বিপরীতে গুঁড়োদুধ উৎপাদনকারী কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিদের এ আইন সম্পর্কে প্রখর জ্ঞান রয়েছে। বক্তারা বলেন, আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের জন্য বাজার তদারকির ব্যবস্থা আরও অনেক জোরদার করতে হবে। একই সঙ্গে তিনি জনস্বাস্থ্য ও পুষ্টি প্রতিষ্ঠানকেও জনবল ও সামর্থ্যরে দিক থেকে শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তাছাড়া তিনি বলেন, দেশের পুষ্টিবিদদের মধ্যে ঐক্যের অভাব রয়েছে, যার সুযোগ নিয়ে গুঁড়োদুধ ও শিশুখাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য বাজারজাত করার ক্ষেত্রে ক্রমশ বেশি আগ্রাসী হয়ে উঠছে। আইপিএইচএন পরিচালক ডাঃ এবিএম মাজহারুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত মোট প্রসবের মাত্র ৩৫ শতাংশ হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হচ্ছে। বাকি ৬৫ শতাংশ প্রসব বাসাবাড়িতে হয়। শিশুজন্মের প্রথম ছয় মাস শুধু বুকের দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করতে হলে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসবের হার বাড়াতে হবে। আর তা করতে হলে তৃণমূল পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট সরকারী ও বেসরকারী পক্ষগুলোকে নিবিড়ভাবে কাজ করতে হবে। শিশুর মাতৃদুগ্ধ পানের হার বাড়াতে জনসচেতনতার কোন বিকল্প নেই আর সেজন্য মসজিদ-মন্দিরসহ জনসমাগমের সব স্থানকে কাজে লাগাতে হবে। এছাড়া তিনি চিকিৎসক নিয়োগ পরীক্ষায় আইনটি অন্তর্ভুক্ত করার জন্য পাবলিক সার্ভিস কমিশনকে অনুরোধ করা হবে বলে জানান। ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচীর পরিচালক ডাঃ কাওসার আফসানা মাতৃদুগ্ধ-বিকল্প ও শিশুখাদ্য বাজারজাতকরণ নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আইনটি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সচেতনতা বাড়াতে এ বিষয়ে আলোচনা, সেমিনার, কর্মশালা আয়োজন করার ওপর জোর দেন।
×