ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইডেনের সমর্থনে তেঁতে উঠলেন আফ্রিদিরা

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১৭ মার্চ ২০১৬

ইডেনের সমর্থনে তেঁতে উঠলেন আফ্রিদিরা

স্পোর্টস রিপোর্টার, কলকাতা থেকে ॥ কত ঝক্কি, ঝামেলা পেরিয়ে ইডেন গার্ডেনের প্রেস বক্সে ঢুকতে হলো। শুরুতে ম্যাচ টিকেট নিতে হলো। এমন এক ঠিকানা দেয়া হলো, যে ঠিকানা খুঁজে যেতে যেতে আধঘণ্টা হাঁটা লাগল। এরপর যখন ম্যাচ টিকেট মিলল, স্টেডিয়ামে আসার ঝক্কি। বালুর একটি মাঠ পেরিয়ে স্টেডিয়ামে আসা লাগল। স্টেডিয়ামে এসে যখন প্রেস বক্সে উঠতে হবে, তার আগে নিরাপত্তা কর্মীরা ঘিরে ধরল। ব্যাগ দেখা হলো। এমনকি লেপটপ ওপেন করে দেখাতে হলো! যা কখনই মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম কিংবা বাংলাদেশের কোন স্টেডিয়ামে করতে হয় না। তাও সব ঝক্কি, ঝামেলা মুহূর্তেই আনন্দে পরিণত হতো। যদি যেভাবে ভাবা হয়েছিল, সেভাবে হতো। মনে করা হয়েছিল, কলকাতাবাসী বাংলাদেশ দলকেই সমর্থন দেবে। কিন্তু যখন খেলা শুরু হলো, এরপর দেখা গেল পুরো উল্টো! ইডেন গার্ডেনে পাকিস্তানের সমর্থনই বেশি। প্রেস বক্সের নিচের স্থানটুকুতেই শুধু মাঝে মাঝে ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ রব উঠল। তাও মুহূর্তেই সেই রব থেমে গেল। বাকি পুরো স্টেডিয়ামজুড়েই দেখা গেল পাকিস্তানের সমর্থন! সেই সমর্থন যেন মোহাম্মদ হাফিজ, আহমেদ শেহজাদ ও শহীদ আফ্রিদিকেও জাগিয়ে তুলল। যে ক্রিকেটাররা এশিয়া কাপ টি২০তেও ঝিমিয়ে ছিলেন, তারাই কি না টি২০ বিশ্বকাপে এসেই খুনে মেজাজে ধরা দিলেন। তাতে করে বাংলাদেশও নাস্তানাবুদ হলো। এশিয়া কাপ টি২০ আর টি২০ বিশ্বকাপে দুই দলের মধ্যে কত পার্থক্য মিলল। এশিয়া কাপে যেখানে মোহাম্মদ হাফিজ কিছুই করতে পারলেন না। শহীদ আফ্রিদি তার ত্যাজ হারিয়ে ফেললেন। আর আহমেদ শেহজাদ তো একাদশেই সুযোগ পেলেন না। বাংলাদেশের কাছে হারও হলো নিয়তি। সেখানে টি২০ বিশ্বকাপে এসে তিনজনই বাংলাদেশকে ভুগিয়ে দিলেন। টি২০তে কিভাবে খেলতে হয়, সেটিই যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের হাফিজ, শেহজাদ ও আফ্রিদি দেখিয়ে দিলেন। ৪২ বলে ৭ চার ও ২ ছক্কায় ৬৪ রান করলেন হাফিজ। ৩৯ বলে ৮ চারে ৫২ রান করলেন শেহজাদ। আর ১৯ বলে ৪ চার ও ৪ ছক্কায় ৪৯ রান করলেন আফ্রিদি। পাকিস্তান স্কোরবোর্ডে ২০১ রান যোগ হলো। এরমধ্যে হাফিজ, শেহজাদ ও আফ্রিদি মিলেই ১৬৫ রান করলেন। এর বাইরে শারজিল খান শুরুতেই ১৮ রান নিয়ে নিলেন। আর শেষে শোয়েব মালিক অপরাজিত ১৫ রান করলেন। ইডেন গার্ডেনে প্রথমবার বাংলাদেশের বর্তমান দলটি খেলেছে। সুযোগটি পেয়ে যেন পাকিস্তান ব্যাটসম্যানরা ছাড়তে চাইলেন না। মারমুখী হয়ে খেলে শুধু রানই জমা করতে থাকলেন। তাতে করে পাকিস্তানের ইনিংস শেষ হতেই আসলে বাংলাদেশের বিজয়ের স্বপ্নই শেষ হয়ে গেল। একটি বারের জন্যও হাফিজ, শেহজাদ ও আফ্রিদি সুযোগ দিলেন না। ইডেন গার্ডেন ব্যাটিং নির্ভর উইকেট। তা জানাই ছিল। তাই বলে পাকিস্তান ব্যাটসম্যানরা এমন ব্যাটিংই করবেন! একজন ভারতীয় সাংবাদিক বলেই ফেললেন, ‘ইডেনে পুরো বাংলাদেশের সমর্থন থাকবে, এটা আসলে ভুল ধারণা। কারণ হলো, এখানে যে কলকাতার লোক আছে, তারা বেশিরভাগ নর্থ বেঙ্গলের। বেশিরভাগই মুসলিম। তারা মূলত পুরো দস্তুর বাঙালী নন। তারাই খেলা দেখতে এসে। স্টেডিয়াম যে পুরো ভরেনি, সেটি অফিস ডে থাকাতেই। যারা এসেছে, তারা এই ইডেন গার্ডেনের আশপাশেই থাকেন। তারা মুসলিম। তারা বাংলাদেশকে যতটানা, পাকিস্তানের পক্ষেই থাকবে। সেটাই বোঝা যাচ্ছে। স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের পতাকা। এটাও কী কল্পনা করা গেছে কখনও। এ ম্যাচে তাও হয়েছে। তাই বাংলাদেশের চেয়ে যে পাকিস্তানের সমর্থন বেশি থাকবে, তা আগেই বোঝা গেছে। তাই বলে, এমন সমর্থন, কল্পনাই করা যায়নি! বাংলাদেশের চেয়ে সমর্থন বেশি থাকবে, তা বোঝা গেছে। কিন্তু পাকিস্তান এর আগে আসলে কখনও এমন সমর্থন পায়নি। এবারই দেখা যাচ্ছে অনেক বেশি সমর্থন পাচ্ছে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘সমর্থন যেমনই থাকুক, ইডেন গার্ডেনে পাকিস্তান সবসময়ই ভাল খেলেছে। এবারও খেলল।’ ইডেন গার্ডেনে এর আগে টেস্ট, ওয়ানডে মিলিয়ে ১৩ ম্যাচ খেলেছিল পাকিস্তান। এবার প্রথমবারের মতো টি২০ খেলেছে। ১৩ ম্যাচের মধ্যে ভারতের সঙ্গেই ১১ ম্যাচ খেলেছে। পাঁচ টেস্টে ড্র করেছে। এক টেস্টে হেরেছে। আরেক টেস্টে জিতেছে। চার ওয়ানডের প্রতিটিতে ভারতের সঙ্গে জিতেছে। আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে একটি ওয়ানডে জিতেছে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে একটি ওয়ানডেতে হেরেছে। এবার বাংলাদেশের সঙ্গেও জিতল। ইডেন গার্ডেনে পাকিস্তানকে যে কতটা কঠিন তা বুঝেছে ভারত। বাংলাদেশও এবার বুঝল। তবে বাংলাদেশকে সমর্থন করা সবার ভেতর একটা কষ্টই থাকল। কলকাতা সমর্থন বাংলাদেশ পেল না। পেল পাকিস্তান। সেই সমর্থনে খুঁজে মেজাজেই যেন আবির্ভূত হলে অফফর্মে থাকা হাফিজ, শেহজাদ ও আফ্রিদি।
×