ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৫৬ শতাংশ কোম্পানির বেশি দরে আইপিও অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১৭ মার্চ ২০১৬

৫৬ শতাংশ কোম্পানির বেশি দরে আইপিও অনুমোদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজার থেকে প্রাপ্য মূল্যের চেয়ে বেশি দামে টাকা তুলে বেশকিছু কোম্পানি। অতি মূল্যায়িত বা বেশি দামে কোম্পানিগুলো বাজার থেকে টাকা উত্তোলন করায় পরে কোম্পানিগুলো প্রত্যাশামতো দর ধরে রাখতে পারেনি। গত ২০১২ সালে তালিকাভুক্ত ৫৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানই অতি মূল্যায়িত হিসাবে বাজারে এসেছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোকে টাকা তোলার সুযোগ করে দিয়েছে। ২০১২ সালে পুঁজিবাজার থেকে ৯টি কোম্পানি ৭৬২ কোটি ২৭ লাখ ২৮ হাজার টাকা উত্তোলন করেছে। এর মধ্যে প্রিমিয়াম বাবদই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৫১৫ কোটি ৭০ লাখ ৮ হাজার টাকা নেয়া হয়েছে। বছরটিতে প্রিমিয়াম নেয় ৮টি কোম্পানি। একমাত্র জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন প্রিমিয়াম নেয়নি। এ কোম্পানিগুলোর আর্থিক বা ব্যবসায়িক অবস্থা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৯টি মধ্যে ৫টি কোম্পানিই যোগ্যতার তুলনায় বেশি প্রিমিয়াম সংগ্রহ করেছে। শতকরা হিসেবে যার হার দাঁড়ায় ৫৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ডিপোজিটে ব্যাংকের বর্তমান সুদের হারের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে, এ কোম্পানিগুলোর শেয়ারে বিনিয়োগ না করে ব্যাংকে ডিপোজিট রাখলে বেশি মুনাফা পেতেন বিনিয়োগকারীরা। ডিপোজিটের সুদ হার ৯ শতাংশ ধরে এ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। আমরা টেকনোলজি ॥ কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে ২৪ টাকা মূল্যে (প্রিমিয়াম ১৪ টাকা) ৫১ কোটি ৭৭ লাখ ২৮ হাজার টাকা উত্তোলন করে। আইপিও আবেদনে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ার প্রতি আয় দেখায় ২.৬৩ টাকা। তালিকাভুক্তির প্রথম বছর ২০১২ সালে ২.৪৬ টাকা, ২০১৩ সালে ১.৪৬ টাকা, ২০১৪ সালে ১.৫২ টাকা ও ২০১৫ সালে ১.৬৫ টাকা ইপিএস হয়েছে। এ হিসাবে তালিকাভুক্তির ৪ বছরে কোম্পানিটির গড় ইপিএস হয়েছে ১.৭৭ টাকা। কিন্তু একজন বিনিয়োগকারী কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ না করে ব্যাংকে ডিপোজিট রাখলে ২.১৬ টাকা করে পেত পারত। ইউনিক হোটেল এ্যান্ড রিসোর্ট ॥ কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে ৭৫ টাকা মূল্যে (প্রিমিয়াম ৬৫ টাকাসহ) ১৯৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে। শেয়ার প্রতি ৪.৫৫ টাকা আয় নিয়ে পুঁজিবাজারে আসা কোম্পানিটির ২০১২ সালে ৪.০২ টাকা, ২০১৩ সালে ৩.৪৪ টাকা ও ২০১৪ সালে ৩.২৭ টাকা ইপিএস হয়েছে। এ হিসাবে তালিকাভুক্তির ৩ বছরে কোম্পানিটির গড় ইপিএস হয়েছে ৩.৫৮ টাকা। কিন্তু একজন বিনিয়োগকারী কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ না করে ব্যাংকে ডিপোজিট রাখলে ৬.৭৫ টাকা করে পেত। জিবিবি পাওয়ার ॥ কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে ৪০ টাকা মূল্যে (প্রিমিয়াম ৩০ টাকাসহ) ৮২ কোটি টাকা উত্তোলন করে। শেয়ার প্রতি ২.৫৭ টাকা আয় নিয়ে আসা কোম্পানিটির ২০১২ সালে ২.১৩ টাকা, ২০১৩ সালে ১.৯০ টাকা ও ২০১৪ সালে ১.৫৫ টাকা ইপিএস হয়েছে। এ হিসাবে তালিকাভুক্তির ৩ বছরে কোম্পানিটির গড় ইপিএস হয়েছে ১.৮৬ টাকা। কিন্তু একজন বিনিয়োগকারী কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ না করে ব্যাংকে ডিপোজিট রাখলে ৩.৩৬ টাকা করে পেত। জিপিএইচ ইস্পাত ॥ ঋণ পরিশোধ ও ব্যবসায়িক পরিধি বৃদ্ধির জন্য আসা কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে ৩০ টাকা মূল্যে (প্রিমিয়াম ২০ টাকাসহ) ৬০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। শেয়ার প্রতি ৩.৬৬ টাকা আয় নিয়ে আসা কোম্পানিটির ২০১২ সালে ৩.৫৩ টাকা, ২০১৩ সালে ২.৩২ টাকা, ২০১৪ সালে ২.৩৫ টাকা ও ২০১৫ সালে ২.৩৪ টাকা ইপিএস হয়েছে। এ হিসাবে তালিকাভুক্তির চার বছরে কোম্পানিটির গড় ইপিএস হয়েছে ২.৬৪ টাকা। জিএসপি ফাইন্যান্স ॥ ব্যবসায়িক পরিধি বৃদ্ধির জন্য আসা কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে ২৫ টাকা মূল্যে (প্রিমিয়াম ১৫ টাকাসহ) ৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। শেয়ার প্রতি আয় ৩.৫১ টাকা নিয়ে আসা কোম্পানিটির ২০১২ সালে ১.৮৮ টাকা, ২০১৩ সালে ১.৫০ টাকা ও ২০১৪ সালে ১.৭২ টাকা ইপিএস হয়েছে। এ হিসাবে তালিকাভুক্তির ৩ বছরে কোম্পানিটির গড় ইপিএস হয়েছে ১.৭০ টাকা। কিন্তু একজন বিনিয়োগকারী কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ না করে ব্যাংকে ডিপোজিট রাখলে ২.২৫ টাকা করে পেত। সায়হাম কটন ॥ ব্যবসায়িক পরিধি বৃদ্ধির জন্য আসা কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে ২০ টাকা মূল্যে (প্রিমিয়াম ১০ টাকাসহ) ৪৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা উত্তোলন করে। শেয়ার প্রতি ৩.০২ টাকা আয় নিয়ে আসা কোম্পানিটির ২০১২ সালে ২.৪৮ টাকা, ২০১৩ সালে ১.৯২ টাকা, ২০১৪ সালে ১.৪৮ টাকা ও ২০১৫ সালে ১.৪০ টাকা ইপিএস হয়েছে। এনভয় টেক্সটাইল ॥ ব্যবসায়িক পরিধি বৃদ্ধির জন্য আসা কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে ৩০ টাকা মূল্যে (প্রিমিয়াম ২০ টাকাসহ) ৯০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। শেয়ার প্রতি আয় ৪.৪২ টাকা নিয়ে পুঁজিবাজারে আসা কোম্পানিটির ২০১২ সালে ৪.২৪ টাকা, ২০১৩ সালে ৩.১৯ টাকা, ২০১৪ সালে ২.২১ ও ২০১৫ সালে ৩.৯৪ টাকা ইপিএস হয়েছে। এ হিসাবে তালিকাভুক্তির ৪ বছরে কোম্পানিটির গড় ইপিএস হয়েছে ৩.৩৬ টাকা। বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল ॥ ঋণ পরিশোধ ও ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের জন্য আসা কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে ৩৫ টাকা মূল্যে (প্রিমিয়াম ২৫ টাকাসহ) ১০৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা উত্তোলন করে। শেয়ার প্রতি ৩.৪৯ টাকা আয় নিয়ে আসা কোম্পানিটির ২০১২ সালে ৭.৮৫ টাকা, ২০১৩ সালে ৬.৬৯ টাকা, ২০১৪ সালে ২.৪২ টাকা ও ২০১৫ সালে ০.৮৬ টাকা ইপিএস হয়েছে। এ হিসাবে তালিকাভুক্তির ৪ বছরে কোম্পানিটির গড় ইপিএস হয়েছে ৪.৪৬ টাকা। কিন্তু একজন বিনিয়োগকারী কোম্পানিটিতে বিনিয়োগ না করে ব্যাংকে ডিপোজিট রাখলে (৯ শতাংশ হারে) ৩.১৫ টাকা করে পেত। জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন ॥ ঋণ পরিশোধের জন্য আসা কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে শেয়ার প্রতি ১০ টাকা মূল্যে ৩০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। শেয়ার প্রতি ২.০৯ টাকা নিয়ে পুঁজিবাজারে আসা কোম্পানিটির ২০১২ সালে ২.০১ টাকা, ২০১৩ সালে ২.১৫ টাকা ও ২০১৪ সালে ১.৫৪ টাকা ইপিএস হয়েছে। এ হিসাবে তালিকাভুক্তির ৩ বছরে কোম্পানিটির গড় ইপিএস হয়েছে ১.৯০ টাকা। আইপিওতে অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে বিএসইসিকে আরও আগে সচেতন হওয়ার জন্য অনেক আগে আহ্বান করা হয়েছে বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদ। কোন কোম্পানিকে আইপিও অনুমোদন দেয়ার কোম্পানিটির ভবিষ্যত কেমন হবে তা আগে অবশ্যই গুরুত্বসহ দেখা দরকার বলে উল্লেখ করেন। আর প্রিমিয়াম বেশি না দেয়া ও দুর্বল কোম্পানিকে আইপিও অনুমোদন না দেয়ার পক্ষে তিনি।
×