ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মার্কিন নির্বাচন ॥ গন্তব্য অজানা

প্রকাশিত: ০৭:১৭, ১৬ মার্চ ২০১৬

মার্কিন নির্বাচন ॥ গন্তব্য অজানা

প্রতিটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনই এমন যে এর ফলাফল সম্পর্কে আগাম ভবিষ্যদ্বাণী করা যায় না। এবারের নির্বাচনও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে এবারে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে এমন অনিশ্চয়তা ও নাটকীয়তা বহুদিন দেখা যায়নি। বিশেষ করে রিপাবলিকান দলের ক্ষেত্রে ৫০ বছরের ইতিহাসে তো নয়ই। প্রাইমারীর লড়াইয়ে সুপার টিউজডে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ওইদিন দুই দলের যে দুজন প্রার্থী অন্যদের তুলনায় এগিয়ে থাকবেন তাদের দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্তি প্রায় নিশ্চিত। সেই বিচারে কোন অঘটন না ঘটলে হিলারি ও ট্রাম্পের মধ্যেই চূড়ান্ত নির্বাচনী লড়াইটা হবে। এটা মোটামুটি ধরে নেয়া যায়। এবারের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নানা দিক দিয়ে চমক আছে। এবারের নির্বাচনে রাজনীতি ও শোবিজের মধ্যে পার্থক্য রেখা মুছে গেছে। ট্রাম্প অথবা হিলারি যিনিই নির্বাচনী জয়ী হোন না কেন সেটা হবে এক নতুন ইতিহাস। নির্বাচনে এই প্রথমবারের মতো এক প্রাক্তন রিয়েলিটি টিভি স্টারের জয়লাভের যেমন সম্ভাবনা আছে তেমনি সম্ভাবনা আছে মার্কিন ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন মহিলার প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে প্রবেশের। এবারের নির্বাচনী প্রচার নানা ধরনের নাটকীয়তায় ভরা। আবার এর মতো কদর্য ও ঘৃণ্য প্রচারকার্যও আধুনিক ইতিহাসে দেখা যায় না। ট্রাম্প যদি দলীয় মনোনয়ন পান তাহলে মার্কিন রাজনীতির নিয়মসূত্র ও আচরণবিধি ছুড়ে ফেলে দিতে বা বিসর্জন দিতে হবে। অর্ধেক সংখ্যক আমেরিকান ট্রাম্পকে ভীতির চোখে দেখে। তথাপি কমপক্ষে অর্ধেক সংখ্যক রিপাবলিকান ভোটার স্পষ্টতই মনে করে যে ডেমোক্র্যাটদের প্রতি তিনিই হলেন উপযুক্ত জবাব। ট্রাম্প প্রতিটি নিয়মনীতি লঙ্ঘন করেছেন, মারাত্মক ধরনের বিরূপ মন্তব্য করে তা থেকে সরে এসেছেন। ক্লুক্লক্সক্লান থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। মুসলমানদের প্রতি তার নীতি ইতিহাসের কুখ্যাত একনায়কদের সঙ্গে তুলনীয়। তিনি যুদ্ধাপরাধের পক্ষ নিয়েছেন, মেক্সিকানদের র‌্যাপিস্ট আখ্যা দিয়েছেন। তার সম্পদ ও ঐশ্বর্য লাভের ব্যাপারটা ধোঁয়াশাপূর্ণ। তার চরিত্রে অনেক ত্রুটিবিচ্যুতি ও ব্যর্থতা সত্ত্বেও তিনি মার্কিন রাজনীতিতে চমকের পর চমক এনেছেন, তাতে বিদ্যুত প্রবাহ ঘটিয়েছেন। মিডিয়ার প্রচারণার জোরে তিনি রিপাবলিকান শিবিরে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কে পরিণত হয়েছেন। রীতিমতো জলোচ্ছ্বাস ঘটিয়েছেন। এমন ট্রাম্পের বিরুদ্ধে হিলারি কতটুকু কি করতে পারবেন? হিলারির মিত্ররা স্বীকার করেছেন ট্রাম্প এমন এক শক্তি যা অন্যদের মতো নয়। এই মানুষটি সম্পর্কে আগাম কোন কিছুই বলা সম্ভব নয়। হিলারি যে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভাল করবেন সে ভবিষ্যদ্বাণী করার সময় এখনও আসেনি। তবে জনমত বিশেষজ্ঞরা মনে করেন ট্রাম্পের বড় বড় গালভরা বুলি, উল্টোপাল্টা মন্তব্য তার জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাদের মতে রিপাবলিকান দলের ২০ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পকে ভোট দেবেন না। হিলারির পক্ষে এই ভোটারদের তার অনুকূলে নিয়ে আসার সম্ভাবনা আছে। তাছাড়া অশ্বেতাঙ্গ ভোটাররাও একটা উল্লেখযোগ্য ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। কারণ এরা মোট ভোটারের ২৮ শতাংশ এবং সংখ্যাটা ক্রমেই বাড়ছে। ট্রাম্পের বিভিন্ন মন্তব্য এই অশ্বেতাঙ্গদের মনে দারুণ বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। হিলারি এ থেকে নিজের ঘরে ফসল তুলতে পারেন। তার পরও অনেকে মনে করেন যে, ট্রাম্প হিলারির জন্য দারুণ বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াতে পারেন। কারণ ইতোমধ্যে তিনি গোটা রাজনৈতিক এ্যাপারেটাসকে প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছেন। তিনি দাবি করছেন যে হিলারি ক্লিনটনকে হারানোর জন্য তিনিই সর্বোত্তম প্রার্থী। কিন্তু সত্যিই কি তিনি হিলারিকে হারাতে পারবেন? অনেক বড় বড় জনমত সমীক্ষায় অবশ্য নেতিবাচক উত্তরই পাওয়া গেছেÑ অন্তত এ মুহূর্তের জন্য। বেশিরভাগ সমীক্ষায় দেখা যায় হিলারি ট্রাম্পের চেয়ে বেশ কয়েক পয়েন্ট এগিয়ে আছেন। ওয়েবসাইটে নেয়া ৫০টির মতো সমীক্ষার মধ্যে মাত্র ৫টি সমীক্ষায় ট্রাম্পকে হিলারির চেয়ে এগিয়ে থাকতে দেখা গেছে। আর দুজনের টাই হয়েছে দুটিতে। বাকি সবটিতেই হিলারি এগিয়ে। তবে জনমত জরিপই সব কথা নয়। সেটাও যে কোন মুহূর্তে পাল্টাতে পারে। ট্রাম্পের পক্ষেও চলে যেতে পারে। তবে এটা ঠিক যে আমেরিকার রাজনৈতিক দৃশ্যপটের শীর্ষভাগে ট্রাম্পের বিস্ময়কর উত্থান হয় এ বছরই শেষ হয়ে যাবে অথবা সেটা হয়ত হবে উত্থানের শুরু মাত্র। তাকে কিভাবে থামানো যায় সে কৌশল কেউ এখনও পর্যন্ত বের করতে পারেনি। যেভাবেই হোক না কেন ইতোমধ্যে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে দলের ওপর নয়, রক্ষণশীল বা উদারপন্থী নীতির ওপর নয় বরং তার নিজের ওপর এক গণভোটে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছেন। বলতে চাইছেন যে ট্রাম্পকে চান কি না চান তার ওপরই হবে এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। ফল যাই দাঁড়াক ৮ নবেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনই হবে আমেরিকার ইতিহাসে অন্যতম সাড়া জাগানো। চমক লাগানো নির্বাচন, অত্যন্ত কঠিন ও তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন। সূত্র : টাইম ও অন্যান্য
×