ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মু. আব্দুল্লাহ আল আমিন

আঙ্কারায় হামলা ॥ সিরিয়ায় অস্ত্রবিরতি নিয়ে সংশয়

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ১৬ মার্চ ২০১৬

আঙ্কারায় হামলা ॥ সিরিয়ায় অস্ত্রবিরতি নিয়ে সংশয়

তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় রবিবার গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে অন্তত ৩৪ জন নিহত ও ১২৫ জন আহত হওয়ার পর সদ্য বাস্তবায়িত হওয়া সিরিয়ার অস্ত্রবিরতি নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোগান সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ব্রিটেন ও ফ্রান্সসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ নিন্দা জানিয়েছেন। তুরস্কে রবিবারের হামলাই দেশটিতে সাম্প্রতিক একমাত্র সন্ত্রসাী হামলা হয়। গত ১৮ মাসে এ ধরনের কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ গত মাসে আঙ্কারায় অনুরূপ এক বোমা হামলায় ২৯ জন প্রাণ হারায়। এসব ঘটনার পর তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী আহমেত দভুতগ্লু রাজধানীর জন্য বিশেষ নিরাপত্তা প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। পিকেকের ঘাঁটি লক্ষ্য করে শনিবার থেকে ইরাকের কানদিল পার্বত্য এলাকায় তুরস্ক যে সামরিক আক্রমণ শুরু করেছে তার প্রতিক্রিয়ায় আঙ্কারায় এ হামলা চালানো হয়ে থাকতে পারে যদিও কোন পক্ষ থেকেই হামলার দায় দায়িত্ব এখনও স্বীকার করা হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্কে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। গত জানুয়ারিতেই ইস্তাম্বুলে এক জঙ্গী হামলায় অন্তত দশজন নিহত হন। যাদের অধিকাংশই জার্মান পর্যটক। এর আগে গত বছর অক্টোবরে আঙ্কারায় কুর্দিদের শান্তি সমাবেশে জোড়া আত্মঘাতী হামলায় শতাধিক লোক নিহত হয়। গত বছর জুলাইয়ে আক্রান্ত হয় সিরিয়া সীমান্তের কাছে কুর্দি অধ্যুষিত শহর সুরুস। ওই আত্মঘাতী হামলায় ৩০ জন নিহত হয়। সর্বশেষ সোমবার রাতে সিরিয়া থেকে যুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ রাশিয়া সৈন্য ফিরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছে। অন্যদিকে তুরস্ক কুর্দি গ্রুপ পিকেকের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করেছে। তুরস্ক মনে করে এ হামলার জন্য পিকেকেই দায়ী এই ঘটনা সিরিয়ায় অস্ত্রবিরতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সিরিয়ায় সরকার ও বিদ্রোহী পক্ষগুলোর মধ্যে দীর্ঘ আলোচনার পর ২৬ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতের পর থেকে এই অস্ত্রবিরতি কার্যকর হয়েছে। উভয়পক্ষের মধ্যে কথাবার্তায় মধ্যস্থতা করেছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র। অস্ত্রবিরতির স্থায়িত্ব নিয়ে অবশ্য উভয় দেশই সন্দিহান। কারণ জঙ্গীগ্রুপ আইএস ও আল কায়েদা ঘনিষ্ঠ আননুসরা ফ্রন্টকে এর আওতা থেকে বাইরে রাখা হয়েছে। তাই পরিস্থিতি কতটা স্থিতিশীল হবে তা নিয়ে আগে থেকেই সংশয় ছিল। যদিও জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ রুশ-মার্কিন অস্ত্রবিরতি উদ্যোগকে পুরোপুরি সমর্থন দিয়েছিল। সিরিয়া বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত স্তাফান দ্য মিসতুরা ঘোষণা দিয়েছিলেন, অস্ত্রবিরতি অব্যাহত থাকলে ৭ মার্চ থেকে শান্তি আলোচনা আবার শুরু হবে। সে অনুযায়ী গত সপ্তাহ আলোচনা আবার শুরু হয়েছে। তুরস্ক এখন একই সঙ্গে তিনটি দীর্ঘ মেয়াই লড়াইয়ের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেছে। একটি হলো ইসলামিক স্টেট বা আইএসের একটি অংশের সঙ্গে সাংগঠনিক লড়াই, কুর্দি আন্ডারগ্রাইন্ড গ্রুপগুলোর সঙ্গে লড়াই এবং ওয়াইপিজি নামে পরিচিত সিরিয়ায় যুদ্ধরত কুর্দিশ পিপলস প্রটেকশন ইউনিটের বিরুদ্ধে লড়াই। ওয়াইপিজি সহায়তা করছে পিকেকেকে। এদের বিরুদ্ধে তুরস্ক গত জুলাই থেকে মাঠে নেমেছে। তুরস্কের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে কুর্দি জাতিগোষ্ঠীর বাস। পরিস্থিতি এখন এমন দিকে গড়াচ্ছে যে কুর্দিদের সঙ্গে কোন রাজনৈতিক সমঝোতায় বসার মতো পরিবেশ থাকছে না। সিরিয়ার অস্ত্রবিরতির প্রতিও বিষয়টি অশনি সঙ্কেতস্বরূপ। অস্ত্রবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকেই তুরস্ক সিরীয় ঘাঁটিগুলোতে আক্রমণ বন্ধ রেখেছিল। এখন যদি সিরিয়ায় ভেতর তুরস্ক ফের সামরিক আক্রমণ শুরু করে তবে এতদিনের কষ্টার্জিত অস্ত্র বিরতি ভেঙ্গে পড়তে পারে। যদিও অস্ত্রবিরতিটি আংশিক কিন্তু এটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটির জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দিয়েছে। মানুষ এখন চিকিৎসার জন্য দাতব্য সংস্থাগুলোর কাছে যেতে পারছে। খাদ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সংস্থানের চেষ্টা করছে। জেনিভায় সদ্য শুরু হওয়া সর্বশেষ দফা শান্তি আলোচনায় কুর্দি গোষ্ঠী ওয়াইপিজির অংশগ্রহণের বিরোধিতা করছে যুক্তরাষ্ট্রও। মার্কিন কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, তুরস্ক যতক্ষণ অস্ত্রবিরতি মেনে চলছে তাদের অবস্থান অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রও কুর্দিদের আলোচনার টেবিলে আসার বিরোধিতা করে যাবে। কিন্তু তুরস্কের অভ্যন্তরে এমনকি রাজধানীতে একের পর এক হামলা দেশটিকে উভয় সঙ্কটর মুখে দাঁড় করিয়েছে। কুর্দিদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়া বিকল্প যেন থাকছে না।
×