ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তান কেন আলোচনায়

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১৬ মার্চ ২০১৬

পাকিস্তান কেন আলোচনায়

বাস্তবতার নিরিখেই বর্তমান ক্রিকেটে পাকিস্তান ভয়ঙ্কর কোন দল নয়। কনসিস্টেন্স তো নয়ই। নিজ দেশে পরবাসী পাকিদের হোম ভেন্যু আরব আমিরাত। মাঠ ও মাঠের বাইরে ঝামেলার শেষ নেই। প্রশাসনের পাশাপাশি রয়েছে অর্থ সঙ্কটও। মাঠে শহীদ আফ্রিদিদের নৈপুণ্য তথৈবচ, যথারীতি ‘আনপ্রেডিক্টেবল’। এত নেতিবাচক বিষয়ের মাঝে ধ্রুবসত্য হচ্ছে পরিস্থিতি যাই হোক, নিঃসন্দেহে ক্রিকেটের অন্যতম গ্ল্যামার দল পাকিস্তান! এখানেই তারা ব্যতিক্রম। বিশ্বজুড়ে সমর্থকের অভাব নেই। অনেক সংশয়-নাটকীয়তার পর পাকিস্তান যখন ভারতে অবতরণ করে, দমদম বিমানবন্দর হয়ে কলকাতার আলিপুরের টিম হোটেলে যাওয়ার পথেই উত্তাপটা টের পাওয়া যায়। যে দলটার নিদেন জয়ের নিশ্চয়তা নেই সেই দলটির ক্রিকেটারদের নিয়ে হৈচৈ পড়ে যায়। ভক্ত আটকানো বাদ দিয়ে খোদ ভারতীয় নিরাপত্তাকর্মীও আফ্রিদির সঙ্গে সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন! বড় সুসংবাদ, শঙ্কা দূর করে টি২০ বিশ্বকাপ খেলতে সেই পাকিস্তান এখন শত্রুদেশ ভারতের মাটিতে। বিশ্ব ক্রিকেটের জন্যেই এটা দারুণ এক খবর। বহুল আলোচিত ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আকাশ থেকে উড়ে গেছে শঙ্কার কালো মেঘ। নিরাপত্তা প্রশ্নে পাকিস্তানের করা আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯ মার্চের ম্যাচটি ধর্মশালা থেকে কলকাতার ইডেন গার্ডেনে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। পূর্ব নির্ধারিত সূচী ম্যাচটি হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ম্যাচ ঘিরে জঙ্গী হামলার গুঞ্জন ওঠে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র সিং পাকিস্তান ক্রিকেট দলকে নিরাপত্তা দিতে অপরগতা প্রকাশ করেন। মূল সমস্যার সৃষ্টি সেখানেই। ভেন্যু পরিবর্তন না হলে এমন কি পাকিস্তান টি২০ বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করবে কি-না, সেটি নিয়েই শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ের তাজ হোটেলে সন্ত্রাসী হামালর জন্য ভারত পাকিস্তানকে দায়ী করে আসছে। বন্ধ দু-দেশের পূর্ণাঙ্গ দিপক্ষীয় সিরিজ। বিসিসিআই ও ভারত কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে পূর্ণ নিরাপত্তার আশ্বাস দিলেও পাকিস্তান তাতে রাজি হয়নি। পাকিস্তান সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নেছার আলি খান যেমন বলেছিলেন, ‘আমরা কোনভাবেই নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত বিশ্বকাপ খেলতে ভারতে দল পাঠাতে পারি না। ক্রিকেটারদের জীবন নিয়ে কোনরকম ঝুঁকি নেয়ার সুযোগ নেই।’ ধর্মশালার পার্শ্ববর্তী ক্যাংরা ভ্যালিতে ভারতের একটি বৃহত্তর একটি সেনাক্যাম্প রয়েছে, সেখানে অনেকে বিখ্যাত কারগিল যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। ম্যাচটি সেখানে হলে ওই যোদ্ধাদের ভাবানুভূতিতে আঘাত লাগবে বলে মনে মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বীরভদ্র। শেষ পর্যন্ত সমস্যার সমাধাণ হয়, এটাই বড় বিুষয়। ভারত কেন্দ্রীয় সরকার, ইন্ডিয়ান বোর্ড (বিসিসিআই), কলকাতা রাজ্য সরকারের (পশ্চিমবঙ্গ) পক্ষ থেকে লিখিত নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়েই আফ্রিদিদের সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেয় পাকিস্তান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এলে যেমন হয়, আফ্রিদিদের জন্য তেমনি কঠোর নিরাপত্তা। দমদম বিমানবন্দর থেকে আলিপুরের হোটেল পর্যন্তÑ সিআইএসএফ, বিধাননগর পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ, কলকাতা পুলিশের কমান্ডো ও র‌্যাফ মিলিয়ে ছিল নিরাপত্তার অভেদ্য দেয়াল। শঙ্কা তাড়িয়ে আফ্রিদিরা অবশ্য ভারতে অবতরণ করেন ফুরফুরে মেজাজে। বিমানবন্দর থেকে হোটেলের উদ্দেশে বাস ছাড়ার পরই সেটি টের পাওয়া যায়। কলকাতা রাস্তার দু-পাশে বহুতল ভবন দেখতে দেখতে পেসার আমির যেমন স্থানীয় এক নিরাপত্তা কর্তাকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠেন, ‘জানেন আমিও কিন্তু ধনী পরিবারের ছেলে। বাড়িতে ১১১টা মোষ আছে! যার প্রত্যেকটা ৩০ কেজি করে দুধ দেয়।’ পাক পেস তারকা অবশ্য একটা বিষয়ে ছিলেন সিরিয়াস। পুরো দল যখন স্থানীয় সিমকার্ড নিতে ব্যস্ত, কেবল তিনিই সেটি নিতে চাননি। ও সবে নাকি ঝামেলা! ‘এ সবে ঝামেলা, আমার দরকার নেই। আপনার মোবাইল থেকেই না হয় বাড়িতে ফোন দেব।’ ম্যানেজারকে বলেন আমির। ইডেনে শনিবার বহুল আলোচিত ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ, তার আগে বুধবার একই ভেন্যুতে প্রথমপর্ব পেরিয়ে আসা বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচ খেলবে আফ্রিদি-বাহিনী। ‘ভারতে এসে প্রত্যেক বারই যে ভালবসা পাই তেমনটা নিজ দেশেও কখনো পাইনি।’ সংবাদ সম্মেলনে আফ্রিদির এই বক্তব্য দারুণ সারা ফেলে। নিরাপত্তা শঙ্কায় গত কয়েকদিন ধরে পাকিস্তান দলের ভারতে আসা নিয়ে টানাপোড়েন চলছিল। এমন কি বিশ্বকাপ থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিল পাকিস্তান। তবে সংবাদ সম্মেলনে আফ্রিদির চোখে মুখে তার লেশমাত্র ছিল না। ভারতের দর্শক ও দেশটির ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রশংসায় ভাসালেন পাকি টি২০ অধিনায়ক, ‘ভারতে এসে খেলাটা যত উপভোগ করি, অন্য কোথাও এতটা করি না। আমি আমার ক্যারিয়ারের প্রায় শেষ পর্যায়ে আছি। এতটুকো অন্তত বলতে পারি, ভারতের যে ভালবাসা পেয়েছি সেটা আমার সারাজীবন মনে থাকবে।’ সোজা সাপটা কথা বলার জন্য আফ্রিদির একটি বদমান আছে। বিতর্ক এড়াতে এবার বেশ সতর্ক তিনি। তবে নিরাপত্তা নিয়ে যে ভাবছেন না সেটি পরিষ্কার, ‘কোনরকম নিরাপত্তা শঙ্কায় ভুগছি না। আমরা ক্রিকেটেই মনোযোগ রাখতে চাই।’ বিশ্বকাপসহ আইসিসির টুর্নামেন্টে ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের পারফর্মেন্স বেশ নাজুক। এই তথ্য আমলে নিতে রাজি নন আফ্রিদি। উল্টো ইডেনে অনুপ্রাণিত সফরকারী অধিনায়ক, ‘এই মাঠে খেলতে দারুণ লাগে। ইডেনে আমরা পাঁচ বার খেলে চার বারই ভারতকে হারিয়েছি।’ আফ্রিদির আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের পর ওপেন মিডিয়া সেশনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন শোয়েব মালিক, ওয়াহাব রিয়াজ ও সরফরাজ আহমেদ। তারকা অলরাউন্ডার মালিক বলেন, ‘১৯ তারিখে (ভারত ম্যাচ) আমরা সেরাটা দেব। তবে ভারতকে আমরা আর পাঁচটা প্রতিপক্ষ দলের মতো করেই দেখতে চাইছি। আলাদা করে ভাবলে শুধু শুধুই চাপ বাড়বে। যা আমরা চাই ছি না।’
×