ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মনোবল এগিয়ে রাখছে টাইগারদের

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৬ মার্চ ২০১৬

মনোবল এগিয়ে রাখছে টাইগারদের

মিথুন আশরাফ, কলকাতা থেকে ॥ যে কেউ সন্ধ্যা ৬টায় যদি কলকাতার ইডেন গার্ডেনে ঢুকত, ভিমরি খেয়ে যেত। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পতাকা হাতে শিশুরা দাঁড়িয়ে আছে। মাঝখানে ‘ক্রিকেট ফর গুড’ লেখা একটি পতাকা ধরে আছে শিশুরা। আর সামনে ম্যাচ শুরুর আগে জাতীয় সঙ্গীত হওয়ার সময় ক্রিকেটারদের সঙ্গে যেভাবে দাঁড়িয়ে থাকে শিশুরা, সেভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। তাহলে কী বাংলাদেশ-পাকিস্তান খেলা শুরু হয়ে গেল! এমন অবাকই হওয়ার মতো অবস্থা হয়। অবশ্য মুহূর্তেই বোঝা যাবে, তা আসলে আজ দুই দলের ‘সুপার টেনে’র প্রথম ম্যাচের ‘ড্রেস রিহার্সাল’। যা আজ প্রকৃত অর্থেই দেখা যাবে। দুই দিন আগে ভারতের আজকাল টিভিতে টি২০ বিশ্বকাপ নিয়ে একটি অনুষ্ঠান হচ্ছিল। সেখানে হাজির ছিল দুই দেশের দুই কিংবদন্তি। ভারতের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কপিল দেব ও পাকিস্তানের সাবেক পেস ‘স্পিড স্টার’ ওয়াসিম আকরাম ছিলেন। দুইজনই বাংলাদেশের উন্নতির ভূয়সী প্রশংসা করেন। এশিয়া কাপে যে বাংলাদেশ ফাইনালে খেলে, এমন সাফল্যের প্রশংসা করেন। এর সঙ্গে দুইজনই জানিয়ে দেন, ‘এ বিশ্বকাপে অন্যতম সেরা দলগুলোর মধ্যে একটি হয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ।’ আজ যখন কলকাতায় পাকিস্তানের সঙ্গে ইডেন গার্ডেনে বাংলাদেশ ‘সুপার টেনে’র প্রথম ম্যাচ খেলতে নামবে, এর আগে দুই দেশের দুই সেরা ক্রিকেটারের এমন মন্তব্যই বুঝিয়ে দিচ্ছে মাশরাফিরা এবার বিশ্বকাপে কতটা ভয়ঙ্কর দল হয়ে উঠতে পারেন। বাংলাদেশ সময় সাড়ে তিনটায় যখন পাকিস্তানের সঙ্গে খেলতে নামবে বাংলাদেশ, এর আগে সত্যি সত্যিই কী আফ্রিদিরা ভয় পাচ্ছে না মাশরাফিদের! যদি হেরে যায় পাকিস্তান, তাহলেই তো বাজিমাত করবে বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে শুভসূচনা করবে। বাংলাদেশ কী পারবে তা করতে? কপিল দেব বলেছেন, ‘বাংলাদেশ যেভাবে উন্নতি করেছে, তা প্রশংসনীয়। এখন বিশ্ব ক্রিকেটে সেরা দলগুলোর মধ্যে বাংলাদেশকেও ধরতে হবে। এ দলটি, দলের ক্রিকেটাররা দিন দিন উন্নতি করেই চলেছে। যে কোন দলকেই এদের সঙ্গে জয় পাওয়া এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। টি২০ তো অল্পসময়ের খেলা। সাড়ে তিন ঘণ্টার খেলা। এ সময়ের মধ্য যে দল নিজেদের ভালভাবে উপস্থাপন করতে পারবে, জয় তাদের হাতেই ধরা দেবে। এমনিতেই নির্ধারিত ওভারে বাংলাদেশ ভয়ঙ্কর দল। এশিয়া কাপে যেভাবে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনালে খেলেছে বাংলাদেশ, তাতে ‘সুপার টেনে’ যে কোন দলকেই হারাতে পারে বাংলাদেশ।’ ওয়াসিম আকরাম অবশ্য বাংলাদেশের প্রশংসা করার সঙ্গে আজকের ম্যাচটি নিয়েই বেশি কথা বলেছেন। জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশ শক্তিশালী দল হয়ে উঠেছে। তা দেখে ভাল লাগছে। ধীরে ধীরে তারা শক্ত প্রতিপক্ষের জন্য ভালভাবেই হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘সুপার টেনে’ বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ পাকিস্তানের সঙ্গে। যেভাবে বাংলাদেশ টি২০তেও এগিয়ে চলেছে, তাতে করে যে কোন দলকেই হারাতে পারে। তবে টি২০ বিশ্বকাপে সবসময়ই পাকিস্তান অসম্ভব ভাল দল। এশিয়া কাপে তারা বাংলাদেশের কাছে হেরেছে ঠিক। তবে বিশ্বকাপেই অন্যরকম দল হয়ে উঠবে পাকিস্তান। বাংলাদেশের কাছে যে হেরেছে, সেই অতীত ভুলে এখন সামনে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। দলে যে ক্রিকেটাররা আছে, তারা দ্রুতই সব ভুলে মানিয়ে নেয়ার ক্ষমতা রাখে। আশা করি, প্রথম ম্যাচ থেকেই তা ধরা পড়বে।’ ওয়াসিম আকরামের কথা যদি সত্যি হয়ে যায়, তাহলে পাকিস্তান করবে শুভসূচনা। তা কী হতে দেবে বাংলাদেশ? ইডেন গার্ডেনে এর আগে ১৫ বছর আগে একবারই খেলেছে বাংলাদেশ। সেই দলের কোন ক্রিকেটারই এখন বর্তমান দলে নেই। সাকিব ছাড়া তো বর্তমান দলের অন্য কোন ক্রিকেটারের ইডেনে খেলার অভিজ্ঞতাই নেই। বর্তমান দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে আবার সাকিব ও মাশরাফি ছাড়া জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়িয়ে ভারতের মাটিতে খেলার অভিজ্ঞতাই নেই! আবার মঙ্গলবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত অনুশীলন করে, একদিনের অনুশীলন সেরেই পাকিস্তানের বিপক্ষে আজ খেলতে নামতে হবে। পাকিস্তান তো ইডেন গার্ডেনে সেই ১৩ মার্চ থেকেই অনুশীলন করছে। ১৪ মার্চ আবার শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ইডেন গার্ডেনে একটি প্রস্তুতি ম্যাচও খেলেছে। ১৫ রানে জিতেছেও। বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়েই থাকছে বাংলাদেশ। তবে একটি বিষয়ে কিন্তু এখানেও এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ। সেটি ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই। খেলাটি হচ্ছে কলকাতায়। বাঙালীদের বসবাস যে প্রদেশে। ভারতের একটি প্রদেশ আবার কলকাতা। স্বাভাবিকভাবেই ভারতের চিরশত্রু পাকিস্তানকে কোনভাবেই কলকাতাবাসী সমর্থন করবে না। বাঙালী, বাংলা ভাষায় কথা বলার সূত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সেতুবন্ধন আছে বাংলাদেশের। সেই হিসেবে বাংলাদেশকেই সমর্থন করবে কলকাতাবাসী। যে কাজটি বাংলাদেশের মাটিতে হয়। সেই এক রকম সমর্থন বাংলাদেশের মিলবে। যা বাংলাদেশকে অনুপ্রাণিত করে তুলতে পারে। মনে হবে, বাংলাদেশেরই খেলছে মাশরাফিরা। আর সেই সমর্থনে প্রেরণা নিয়ে বাংলাদেশ জিতেও যেতে পারে। তা যতই পাকিস্তান টেস্ট, ওয়ানডে ও টি২০ মিলিয়ে ইডেন গার্ডেনে ১৩ ম্যাচ খেলুক। যেহেতু বর্তমান সময়ে ২০১৩ সালের পর আর ইডেনে খেলেনি পাকিস্তান, তাই বাংলাদেশের সমান অবস্থানেই থাকবে। এশিয়া কাপে যে হেরেছে পাকিস্তান, সেটিও তাদের ভেতর ভীতি ধরিয়ে দেবে। দর্শক, সমর্থন, ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ’ রব, সঙ্গে বাংলাদেশের কাছে এর আগে সর্বশেষ দুটি টি২০ ম্যাচে যে হেরেছে পাকিস্তান সেই ভীতি মিলিয়ে পাকিস্তান হেরেও যেতে পারে। আর তা হলেই ‘সুপার টেনে’র শুরুটা বাংলাদেশের হবে আকাশচুম্বি সাফল্য দিয়ে। ২০০৭ সালে প্রথমবার টি২০ বিশ্বকাপ হয়। সেই বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম ম্যাচেই হারিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার পাকিস্তানকেও সেই একই রমক তীক্ত স্বাদ দিতে পারবে বাংলাদেশ?
×