ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;সাক্ষী রশিদুলের জবানবন্দী

আসামি আশরাফ আমার বাগদত্তা স্ত্রীকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৬ মার্চ ২০১৬

আসামি আশরাফ আমার বাগদত্তা স্ত্রীকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যশোরের সাবেক সংসদ সদস্য মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের দশম সাক্ষী মোঃ রশিদুল হক জবানবন্দী প্রদান করেছেন। পরবর্তী সাক্ষীর জন্য বুধবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন,আসামি আশরাফ হোসেন আমার বাগদত্তা স্ত্রীকে ধর্ষণ ও নির্যাতন করে। পরবর্তীতে তাকে ছাড়িয়ে আনা হয়। সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী তাকে জেরা করেন। চেয়ারম্যান বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিনসদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। এ সময় প্রসিকিউটশন পক্ষে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর জিয়াদ আল মালুম, প্রসিকিউটর রিজিয়া সুলতানা চমন। আর আসামি পক্ষে ছিলেন সাত্তার পালোয়ান ও আব্দুস শুকুর। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম মোঃ রাশিদুল হক। আমার বর্তমান বয়স আনুমানিক ৬৮ বছর। আমার ঠিকানা : গ্রাম- রেজাকাটি, থানা- কেশবপুর, জেলা- যশোর। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি কেশবপুর থানার তেঘরি পল্লী মঙ্গল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলাম। আমি কেশবপুর থানার মহাদেবপুর আরবি এস মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে অবসর গ্রহণ করি। ১৯৭১ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে পার্শ্ববর্তী বগা গ্রামের আশুরা খাতুনের সঙ্গে আমার বাগদান সম্পন্ন হয় এবং ১৯৭১ সালে মার্চ মাসের শেষের দিকে তার সঙ্গে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। ঐ সময় আশুরা খাতুন সাগরদাঁড়ি এম এম ইন্সটিউিশনের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। রাজাকারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সোর্সের মাধ্যমে জানতে পারি যে, চিংড়া রাজাকার ক্যাম্পের রাজাকার কমান্ডার আসামি মোঃ সাখাওয়াত হোসেন, আসামি বিল্লাল হোসেন, আসামি ইব্রাহিম হোসেন ওরফে ঘংঘুর ইব্রাহিম, আসামি আব্দুল আজিজ সরদারসহ আরও ১০/১২ জন রাজাকার ১৯৭১ সালের আশ্বীন মাসের ২৭ তারিখ সকাল আনুমানিক ৯টা সাড়ে ৯টার দিকে আশুরা খাতুনকে তার বাড়ি থেকে জোরপূর্বক অপহরণ করে চিংড়া রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে সোর্সের মাধ্যমে জানতে পারি যে, আসামি সাখাওয়াত হোসেন আমার বাগদত্তা স্ত্রী আশুরা খাতুনকে তিনদিন চিংড়া রাজাকার ক্যাম্পে আটক রেখে নির্যাতন ও ধর্ষণ করে। এর পর আশুরা খাতুনের সম্পর্কিত নানা সফি শেখ প্রতিবেশী রফি শেখ ও আলী সরদার ও গ্রামের মুরুব্বিরা ওই রাজাকার ক্যাম্পে গিয়ে আসামি সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে দেনদরবার করে আমার বাগদত্তা স্ত্রীকে ছাড়িয়ে আনে। আশুরা খাতুনকে ছাড়িয়ে নিয়ে দুই দিন পর রাতে গোপনে আমি তার সঙ্গে দেখা করি। আমি যখন আশুরা খাতুনের সঙ্গে দেখা করি তখন তার হাতে একটি শিশিতে বিষ ছিল। সে আমাকে জানায় যে, তা সতীত্ব বলতে কিছু নেই। তখন আমি তাকে প্রতিশ্রুতি দেই যে, আমি অবশ্যই দেশ স্বাধীন হবার পর বিয়ে করব। তুমি বিষ পান করো না। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে আরও বলেন, তারপর আমি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার জন্য সেখান থেকে চলে আসি। দেশ স্বাধীন হবার পর আমি আমার বাড়িতে ফিরে যাই। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি আমি আমার বাগদত্তা স্ত্রীকে ধর্মীয় বিধান মতে বিয়ে করি। বিয়ে করার পর আমার স্ত্রী আশুরা খাতুন জানায় যে, তাকে যখন রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয় তখন আসামি সাখাওয়াতসহ অন্যান্য রাজাকাররা পথিমধ্যে নানাভাবে সম্ভ্রম হানি করে। চিংড়া রাজাকার ক্যাম্পে আটকে রেখে তাকে নির্যাতন ও ধর্ষণ করা হয়।
×