ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পে স্কেল নিয়ে নতুন কর্মসূচী সরকারী কলেজ শিক্ষকদের

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৬ মার্চ ২০১৬

পে স্কেল নিয়ে নতুন কর্মসূচী সরকারী কলেজ শিক্ষকদের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেতন স্কেলে বৈষম্য সৃষ্টি এবং টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাতিলের প্রতিবাদে নতুন আন্দোলন কর্মসূচীর ডাক দিয়েছেন সরকারী কলেজের শিক্ষকরা। সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বিষয়ে সম্মানজনক সমাধানের আশ্বাস বাস্তবায়নের দাবিতে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির ব্যানারে শিক্ষকরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত প্রার্থনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন। কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বেতন বৈষম্য নিরসন সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি, কোর কমিটি, শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাসচিবকে স্মারকলিপি প্রদান, সমাবেশ ও মানববন্ধন করবেন তারা। মঙ্গলবার বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির বৈঠকে নতুন কর্মসূচী চূড়ান্ত করা হয়েছে। সমিতির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন যুগ্ম-আহ্বায়ক এসএইচএম ফজলে রাব্বী। সমিতির সদস্য সচিব আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার, সদস্য ড. মাসুদ রানা খান, নওসের আলী উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষক নেতৃবৃন্দ সরকারী কলেজের অধ্যাপকদের বেতন স্কেল ১০০ ভাগ পদ তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত না করে ৫০ ভাগ পদ উন্নীত করা এবং সহযোগী অধ্যাপকদের বেতন স্কেল চতুর্থ গ্রেডে উন্নীত না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, শিক্ষা ক্যাডারের দীর্ঘদিনের দাবি ১৯৮৩ সালের এনাম কমিটির সুপারিশ এবং ১৯৮৬ সালের সচিব কমিটি কর্তৃক অনার্স কলেজ ও টিটি কলেজের অধ্যক্ষদের পদ দ্বিতীয় গ্রেডে, শিক্ষা ক্যাডারের জন্য প্রথম গ্রেডের পদ সৃষ্টি, অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকদের পদ যথাক্রমে তৃতীয় ও চতুর্থ গ্রেডে উন্নীতকরণে সুস্পষ্ট অনুমোদন বাস্তবায়ন এখনও হয়নি। অন্যদিকে, অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে ঘোষিত ক্যাডারের প্রবেশ পদে অষ্টম গ্রেডের প্রজ্ঞাপন জারি করা সত্ত্বেও সম্প্রতি নতুন করে নবম গ্রেডে নির্ধারণের যে সিদ্ধান্ত হয় তা অসম্মানজনক। এ ধরনের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ এবং সঙ্কটের সম্মানজনক সমাধানের আশ্বাস বাস্তবায়নের জন্য আগামী ২১ মার্চ সকাল ১১টা-১২টা পর্যন্ত সমিতির প্রতিটি সাংগঠনিক ইউনিটে সমাবেশ করা হবে। ২৮ মার্চ সকাল ১১টা-১২টা পর্যন্ত সমিতির সাংগঠনিক জেলায় সমাবেশ এবং ৩১ মার্চ সকাল ১১টা-১২টা পর্যন্ত সাংগঠনিক ইউনিটে মানববন্ধন ও কেন্দ্র থেকে পরবর্তী কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। নেতৃবৃন্দ বলেছেন, এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে লাগাতার কর্মবিরতিসহ কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। এ সময় ক্লাস ছাড়াও সকল পরীক্ষা বর্জনের চিন্তাও করা হচ্ছে। এর আগে একই দাবিতে গত দুই মাসে কয়েক দফা কর্মবিরতিসহ নানা কর্মসূচী পালন করেছেন সরকারী কলেজের শিক্ষকরা। এরপর তারা শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে সাক্ষাত করে বেতন স্কেলে বৈষম্যের অভিযোগ এনে সঙ্কট নিরসনের দাবি জানান। মঙ্গলবারের বৈঠক থেকেও শিক্ষক নেতৃবৃন্দ বলেছেন, আলাদা বেতন স্কেল নয়, বর্তমান বেতন কাঠামোতেই সকল স্তরে বেতন বৈষম্য নিরসন করতে হবে। এটা শিক্ষকদের মর্যাদার প্রশ্ন। বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগ ছাড়া আন্দোলন থেকে সড়ে আসার কোন পথ নেই। অবিলম্বে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহাল করে বৈষম্য নিরসন ছাড়া শিক্ষকদের অসন্তোষ কমবে না। শিক্ষক নেতারা দাবি পূরণে শিক্ষা মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করে বলেছেন, বর্তমান সরকার সম্প্রতি ৮ম জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষণা করেছে। এ জন্য সরকারকে ধন্যবাদ। পে-স্কেলের অনেক ইতিবাচক দিক আছে। কিন্তু র্শিক্ষা ক্যাডারের অধ্যাপক পদে বেতন বৈষম্য নিরসনের দাবিকে বিবেচনায় না এনে অধ্যাপক পদের বেতন স্কেল ও গ্রেড অবনমন করা হয়েছে। সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাতিল করে প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক এবং অধ্যাপকসহ র্শিক্ষা ক্যাডারের সকল স্তরের বেতন বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে শিক্ষা ক্যাডারের ১৫ হাজার সদস্য এটি উপভোগ করতে পারছে না। শিক্ষকরা তথ্য প্রমাণ তুলে ধরে বলেছেন, এখনও বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তারা পঞ্চম গ্রেড হতে পদোন্নতি পেয়ে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত হন। কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারের সহযোগী অধ্যাপকরা পঞ্চম গ্রেড হতে চতুর্থ গ্রেডে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান, যা বৈষম্যমূলক। ৫০ শতাংশ অধ্যাপক সিলেকশন গ্রেড পেয়ে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত হন। এ বৈষম্য নিরসনের দীর্ঘদিনের চেষ্টা, ১৯৮৪ সনের এনাম কমিশন, ১৯৮৭ সনের সচিব কমিটির সুপারিশ এবং সর্বশেষ ২০১৪ সনের চাকরি ও বেতন কমিশনের নিকট আবেদন সত্ত্বেও অধ্যাপকদের বেতন গ্রেড চতুর্থ গ্রেড হতে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত হয়নি। উল্টো সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বন্ধ করে দেয়ায় শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ সর্বোচ্চ চতুর্থ গ্রেড হতে অবসরে যাবেন। অন্যদিকে পদোন্নতির সুযোগ না থাকায় শিক্ষা ক্যাডারের অনেকেই সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে অবসরে যান। সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল না থাকায় এখন সহযোগী অধ্যাপকদের পঞ্চম গ্রেড হতে অবসরে যেতে হবে। প্রাপ্য মর্যাদায় উন্নীত না করে স্কেল ও পদ অবনমনে শিক্ষকরা মর্মাহত। শিক্ষকরা আশঙ্কা করছেন, পদ ও স্কেল অবনমনের মাধ্যমে শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ চতুর্থ গ্রেডে নির্দিষ্ট করে, শিক্ষা ক্যাডারের বিভিন্ন অধিদপ্তর ও শিক্ষা প্রকল্পের তৃতীয়, দ্বিতীয় ও প্রথম গ্রেডে অন্য ক্যাডার হতে পদায়ন করার সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে। শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্টের ক্ষোভ ॥ বেসরকারী শিক্ষক কর্মচারীদের জন্য অষ্টম জাতীয় স্কেল কার্যকর করা নিয়ে অনিশ্চয়তায় আন্দোলনের হুমকি দিয়েছে শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্ট। মঙ্গলবার এক সভায় সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, বেতন না পাওয়া এবং কবে পাওয়া যাবে সে সম্পর্কে এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোন ঘোষণা না আশায় শিক্ষক সমাজ বিক্ষুদ্ধ। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত অষ্টম বেতন স্কেল প্রসঙ্গে খবরাখবর শিক্ষকদের মধ্যে প্রবল উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্টের চলমান কর্মসূচীর মধ্যে এ বিষয়ে সরকারী পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট ঘোষণা না এলে ৫ লক্ষাধিক শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন ভাতার দাবি আদায়ের জন্য কঠোর কর্মসূচী নিতে বাধ্য হবে। সভায় উপস্থিত ছিলেন ফ্রন্টের অন্যতম নেতা বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি সভাপতি মাহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মোঃ মহসীন রেজা প্রমুখ। সভায় শিক্ষক সমিতির মহাসচিব এসএম আব্দুল জলিল স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করায় সর্বসম্মতিক্রমে তার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়। যুগ্ম মহাসচিব-১ মহসীন রেজাকে মহাসচিবের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বাতিল দাবি ॥ প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বাতিল, শিক্ষাক্ষেত্রের অনিয়ম বন্ধ ও কোচিং বাণিজ্য নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে অভিভাবকদের সংগঠন অভিভাবক ঐক্য ফোরাম। জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, শিক্ষাক্ষেত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি, অবৈধ ভর্তি কোচিং ও শিক্ষা বাণিজ্য মহামারী রূপ নিয়েছে। নামকরা অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি নীতিমালা উপেক্ষা করে টাকার বিনিময়ে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি করানোর অভিযোগ উঠছে। বিভিন্ন যুক্তি তুলে তিনি আইনের মাধ্যমে কোচিং এবং শিক্ষা বাণিজ্য নিষিদ্ধের দাবি জানান। কর্মসূচী ঘোষণা করে অভিভাবকরা বলেন, ১৬ মার্চ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান, ১৭ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ স্কুলে স্কুলে গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ, ২৫ মার্চ সকাল ১০টায় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন, ২ এপ্রিল মতো বিনিময় সভা। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান, সহ-সভাপতি সেলিম উদ্দিন, ফাহিম উদ্দিন, সদস্য শওকতউল আলম, আব্দুস সোবাহান, সোহেলী আক্তার তানি প্রমুখ।
×