ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ভাষার মাধ্যমে দেশের গৌরব ছড়িয়েছেন রফিক আজাদ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৬ মার্চ ২০১৬

ভাষার মাধ্যমে দেশের গৌরব ছড়িয়েছেন রফিক আজাদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পার্থক্য শুধু একটাই- তিনি ছিলেন, এখন নেই। মর্ত্যলোকে ছিলেন, চলে গেছেন দিব্যলোকে। মাটির সন্তান মাটিতে মিশে যায়, পদচিহ্ন রেখে যায়। রফিকের মধ্যে সম্পদ, ক্ষমতা, রাজনীতির বিন্দুমাত্র লোভ ছিল না। ভাষার মাধ্যমে দেশের গৌরব ছড়িয়েছেন ষাটের দশকের উজ্জ্বলতম কবি রফিক আজাদ। সদ্য প্রয়াত কবি রফিক আজাদ সম্পর্কে এভাবেই আপন মূল্যায়নটি মেলে ধরেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। মঙ্গলবার বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে রফিক আজাদ স্মরণে নাগরিক শোকসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কথা শেষে সৈয়দ শামসুল হক পাঠ করেন রফিক আজাদকে নিবেদিত কবিতা। রফিক আজাদের কবিতা থেকে পাঠ ও কর্মময় জীবনের ওপর আলোকপাতের মধ্য দিয়ে কবি রফিক আজাদকে নিবেদিত এ নাগরিক শোকসভার আয়োজন করে বাংলা একাডেমি ও জাতীয় কবিতা পরিষদ। স্মরণসভায় রফিক আজাদের সহধর্মিণী দিলারা হাফিজ বলেন, তিনি কথা রেখেছেন। আমাকে ফাঁকি দেননি, আমার সামনেই তিনি চলে গেছেন। সারাটা জীবন তাঁর কাছে থেকে আঁচল দিয়ে ভালবাসা কুড়িয়েছি। যা শেষ দিন পর্যন্ত ছিল। বক্তব্যের শেষে নিজের লেখা ‘বয়স্ক বালক’ কবিতা আবৃত্তি করতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রফিক আজাদের সাড়ে তিন দশকের এই জীবনসঙ্গী। পিতার নাগরিক শোকসভায় বলতে গিয়ে কণ্ঠে আবেগ ভর করে ছেলে অভিন্ন আজাদের। অশ্রু চেপে রাখা বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলে যান, তিনি শুধু আমার জন্মদাতা পিতা নন, আদর্শেরও পিতা। শিখিয়েছেন কেমন করে ভালবাসতে হয় দেশ ও মানুষকে। প্রথমত তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা, তারপর পিতা। প্রবল দেশপ্রেম থেকেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে দ্রোহ করতে শিখিয়েছেন। প্রয়াত কবির স্মরণে নীরবতা পালনের মাধ্যমে শুরু হয় স্মরণসভার কার্যক্রম। পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কবি তারিক সুজাতের প্রারম্ভিক বক্তব্যের পর পরিষদের সভাপতি কবি ড. মুহাম্মদ সামাদের সঞ্চালনায় শোকসভায় রফিক আজাদের কবিতাপাঠে অংশ নেন কবি হারিসুল হক, রণজিৎ কুমার বিশ্বাস, কবি হালিম আজাদ, কবির ভাতিজি নীরু শামসুন্নাহার, শাহাদাৎ হোসেন নিপু, কবি নাহার ফরিদ খান, কবি পিয়াস মজিদ, কবি হানিফ খান প্রমুখ। প্রয়াত কবি সম্পর্কে স্মৃতিচারণা ও মূল্যায়নে অংশ নেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার, রফিক আজাদের বড় ভাই নুরুল ইসলাম খান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল আলম লেনিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আহমদ কবির, কবি আসাদ চৌধুরী, কবি রবিউল হুসাইন, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী, কবি রবীন্দ্র গোপ, কবি মোহাম্মদ সাদিক, অধ্যাপক আসাদুজ্জামান, কবি ও অনুবাদক নাজমুননেসা পিয়ারি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শ্যামসুন্দর সিকদার, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ওসমান গণি, অনন্যা প্রকাশনের প্রকাশক মনিরুল হক, সময় প্রকাশনের প্রকাশক ফরিদ আহমেদ, ছড়াকার আলম তালুকদার প্রমুখ। কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, রফিক আজাদের কবিতা মূল বিষয় ছিল মানুষ। বৈচিত্র্যপূর্ণ মানুষের জীবন তার কবিতায় স্থান পেয়েছে। মানুষকে ভালবাসতেন বলেই তিনি মানুষের মুক্তির জন্য একাত্তরে অস্ত্র হাতে যুদ্ধে নেমেছিলেন। আরেক পরিচয় হলো- তিনি আমৃত্যু সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি বাস্তবায়িত করার স্বপ্ন দেখেছেন। বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, রফিক আজাদ একদা বাংলা একাডেমির যে উত্তরাধিকার সাহিত্যপত্রের সম্পাদক ছিলেন সেই উত্তরাধিকার পত্রিকা তাঁর স্মরণে একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করবে। এছাড়া আগামী বইমেলার আগেই রফিক আজাদ রচনাবলী প্রকাশ করা হবে। কবি ও স্থপতি রবিউল হুসাইন বলেন, সৃষ্টিশীল, সৃজনশীল মানুষ ছিলেন। শব্দ নিয়ে খেলা করতেন। তার কবিতা ছিল মেদহীন। বাংলা কবিতাকে তিনি পেশিবহুল করে দাঁড় করিয়েছেন। সরল ও দৃঢ় ভাষাকে অবলম্বন করেই বাংলা কবিতা এগিয়ে যাবে। সে দিক নিদের্শনা কবি আমাদের দিয়ে গেছেন। হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, রফিক আজাদ বাংলা সাহিত্যের অবিস্মরণীয় পুরুষ। তাকে পাঠ করার ভেতর দিয়ে আমরা বাংলা সাহিত্যকে জানব এবং তার দর্শন ও জীবনবোধকে জানব। আমরা তার কবিতা পাঠের মধ্য দিয়ে কবি হয়ে উঠেছিলাম। তিনি শুধু কবিতা লেখেননি কবিদেরও রচনা করেছেন। তার সংস্পর্শে এসে অসংখ্য কবি উপকৃত হয়েছেন। রামেন্দু মজুমদার বলেন, রফিক আজাদ বাংলা কবিতার ভুবনে স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন। যতদিন বাংলাদেশে আমরা কবিতা পড়ব ততদিন তিনি স্মরণীয় হয়ে রইবেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ উল আলম লেনিন, কবি রফিক আজাদ দুটি অস্ত্র ব্যবহার করেছেন জীবনে। প্রথমটি মুক্তিযুদ্ধে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। দ্বিতীয় অস্ত্রটি হচ্ছে ‘শব্দাস্ত্র’। যেটিকে আমরা কবিতা বলছি। সেটাও ছিল শাণিত, অস্ত্রের মতোই। কবিতার মধ্যেও ছিল রাজনীতিও দ্রোহ। ওয়াহিদুল হকের জন্মদিনে নালন্দা বিদ্যালয়ের অনুষ্ঠান ॥ আজ বুধবার সঙ্গীতজ্ঞ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংগঠক ওয়াহিদুল হকের ৮৪তম জন্মদিন। এ উপলক্ষে ছায়ানটের সাধারণ শিক্ষা কার্যক্রম ‘নালন্দা’ বিদ্যালয়ের বার্ষিক উৎসব (প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান) আয়োজন করা হয়েছে। ছায়ানট ভবনের তৃতীয় ও পঞ্চম তলায় প্রদর্শনী শুরু হবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। সন্ধ্যা ৭টায় ছায়ানট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। ভুটানের রাজমাতার প্রদর্শনী পরিদর্শন ॥ ভুটানের রাজমাতা শেরিং পেম ওয়াংচুক মঙ্গলভার জাতীয় জাুদঘরের মূল লবিতে একটি বিশেষ প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন। তাঁকে সংবর্ধনা জানান জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। তাঁকে বিশেষ প্রদর্শনী ও গ্যালারিতে প্রদর্শিত নিদর্শন পরিদর্শনে সহায়তা করেন। জাদুঘরের বিশেষ প্রদর্শনীতে জাদুঘরের মোট ৩১টি সংগ্রহভুক্ত নিদর্শন উপস্থাপন করা হয়। জাদুঘরে যুদ্ধশিশু বিষয়ক আলোচনা ॥ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে জাতীয় জাদুঘর মঙ্গলবার বিকেলে কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে একাত্তরের যুদ্ধশিশু : অবিদিত ইতিহাস শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুক্তিযুদ্ধের গবেষক মুস্তফা চৌধুরী। ‘যুদ্ধশিশু’ সম্পর্কিত গল্পগ্রন্থ নিয়ে বিশেষ আলোচনা করেন কম্পোট্রলার এ্যান্ড অডিটর জেনারেল এবং কথাসাহিত্যিক মাসুদ আহমেদ। মূল প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান ও অধ্যাপক মেজবাহ কামাল। স্বাগত বক্তব্য দেন জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সভাপতি এম. আজিজুর রহমান। গবেষক মুস্তফা চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার পর ২২টি সেবা সংস্থায় যুদ্ধশিশুরা জন্মগ্রহণ করে। বিদেশীরা তাদের দত্তক হিসেবে গ্রহণ করেন। দত্তক গ্রহীতারা তাদের সন্তান থাকা সত্ত্বেও তারা বাঙালী শিশুদের দত্তক নেয়। যুদ্ধে অনাথ শিশুদের কানাডীয়ানরা প্রথমে দত্তক নেয়। যুদ্ধ শিশুরা ডেনমার্ক, সুইডেনসহ বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। দেশে যুদ্ধ শিশুদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা উচিত। যুদ্ধশিশুরা বহু প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছে। তাদের অনেকের সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে ‘যুদ্ধশিশু : অবিদিত ইতিহাস’ প্রবন্ধ রচনা করা হয়েছে। যুদ্ধশিশুদের অধিকার ও মর্যাদার বিষয়টি আজ গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে। ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধরা জীবনবাজি রেখে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেন। এদেশের পাশাপাশি বীরাঙ্গনাদের আত্মত্যাগ স্মরণীয় হয়ে আছে। স্বাধীনতার পর যুদ্ধশিশুরা বিদেশী দত্তকদের মাধ্যমে বিদেশে চলে যায়। আজ পঠিত প্রবন্ধে এসব যুদ্ধশিশুদের জীবনগাঁথা নিয়ে আলোচিত হয়েছে। আজকের তরুণ প্রজন্ম ও গবেষকেরা যুদ্ধ শিশুদের সম্পর্কে এ আলোচনা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জানতে পারবে।
×