ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নেপথ্যে রাজনৈতিক কোন কারণ আছে বলে মনে করে না বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ১৬ মার্চ ২০১৬

নেপথ্যে রাজনৈতিক কোন কারণ আছে বলে মনে করে না বাংলাদেশ

তৌহিদুর রহমান ॥ বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাজ্যের কোন ‘রাজনৈতিক চাপ’ নেই বলেই মনে করছে সরকার। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ইস্যুকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে এখন টানাপোড়েন চললেও নেপথ্যে রাজনৈতিক কোন কারণ রয়েছে বলে মনে করে না বাংলাদেশ। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে যুক্তরাজ্যের এই অবস্থানকে পেশাগতভাবেই বিবেচনায় নিয়েছে সরকার। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাজ্যের উদ্বেগ দূর করতে একাধিক পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে। কূটনৈতিক সূত্র এসব তথ্য জানায়। ঢাকা-লন্ডনের একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছে বাংলাদেশ। ভিসা সেন্টার দিল্লীতে সরিয়ে নেয়া, কার্গোবিমান বন্ধ, যাত্রীবাহী বিমান বন্ধের হুঁশিয়ারি ইত্যাদির পেছনে রাজনৈতিক কোন কারণ নেই বলেই মনে করছে সরকার। যুক্তরাজ্য সরকার পেশাগত মনোভাব থেকেই এই অবস্থান নিয়েছে। আর বাংলাদেশও বিষয়টির পেশাগত সমাধান চাইছে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বিমান পরিচালনা নিয়ে যুক্তরাজ্যের অবস্থানের বিষয়টিকে আমরা রাজনৈতিকভাবে দেখছি না। বিশেষ করে নিরাপত্তা ইস্যুতে তাদের কোন অবস্থান থাকতেই পারে। কারণ বিশ্বে যেভাবে জঙ্গীবাদের উত্থান ঘটেছে, বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশও সেক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন নয়। আমরাও বিষয়টি সেভাবেই দেখছি। যুক্তরাজ্য সরকার হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর নিয়ে যেসব নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলছে, সেসব সমস্যা আমলে নিয়েছে বাংলাদেশ। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাজ্যের উদ্বেগ দূর করার জন্য অতিদ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেও এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার এ্যালিসন ব্লেককেও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ইস্যুতে আশ্বস্ত করা হয়েছে। বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সিভিল এ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ বিমানের প্রতিনিধি, ঢাকায় নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে জানানো হয়, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন পদক্ষেপ ইতোমধ্যেই বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এদিকে, বিমানবন্দর নিয়ে যুক্তরাজ্যের উদ্বেগ দূর করতে লন্ডনে বাংলাদেশের হাইকমিশনকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা করতে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ। ফলে লন্ডনের দূতাবাস থেকে এ বিষয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চালানো হচ্ছে। এছাড়া যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের চিঠির জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিঠিও ইতোমধ্যেই লন্ডনের ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে পৌঁছে দেয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্যের সাবেক হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেয়ার পর নতুন হাইকমিশনার হিসেবে এ্যালিসন ব্লেক যোগ দেন। বাংলাদেশে আসার পরই সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের সম্পর্ক শক্তিশালী করতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এছাড়া ভিসা সমস্যা সমাধানের বিষয়েও আশ্বাস দেন এ্যালিসন ব্লেক। এদিকে ঢাকা থেকে বিদায় নেয়ার আগে রবার্ট গিবসন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে শেষ সাক্ষাতে জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে এখন সবচেয়ে শক্তিশালী সম্পর্ক বিরাজ করছে। দিন দিন এই সম্পর্ক আরও গভীর ও শক্তিশালী হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। মধ্যপ্রাচ্যে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গীদের উত্থানের পর জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ দমনে অঙ্গীকার করেছে বাংলাদেশ। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠকে দুই দেশ একযোগে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ দমনে কাজ করবে বলে জানিয়েছে। বিশেষ করে ব্রিটিশ বাংলাদেশীদের আইএসে যোগদান ঠেকাতে সহযোগিতা চেয়েছে যুক্তরাজ্য। এছাড়া সন্ত্রাসবাদ দমনে তথ্য আদান-প্রদানেও একযোগে কাজ করছে দুই দেশ। এছাড়া দুই দেশের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন যে চিঠি দিয়েছেন, সেখানে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও শেখ হাসিনা সরকারের সন্ত্রাসবাদবিরোধী পদক্ষেপকে স্বাগতও জানিয়েছেন ডেভিড ক্যামেরন। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ঘিরে পশ্চিমা দেশগুলো নির্বাচন নিয়ে প্রথমদিকে প্রশ্ন তুললেও পরবর্তীতে তারা বলেছে, নির্বাচন যেভাবেই হোক না কেন, বাংলাদেশের নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করবে দেশগুলো। এসব দেশের মধ্যে যুক্তরাজ্য অন্যতম। ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে বৈঠককালেও বাংলাদেশের পাশে থাকবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্য। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের বর্তমান কূটনৈতিক সম্পর্কের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাজ্যের উদ্বেগকে বাংলাদেশকে পেশাগতভাবেই মোকাবেলা করতে হবে। বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যকে আশ্বস্ত করতে হবে যে, বিমানবন্দরে কোন নিরাপত্তা ঘাটতি নেই। এটা সম্ভব হলেই দুই দেশের সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে ঐতিহাসিক, বিস্তৃত ও বহুমুখী সম্পর্ক রয়েছে। রাজনৈতিকভাবে এই সম্পর্ক অনেক গভীর। বাংলাদেশকে ঘিরে যুক্তরাজ্য যে অবস্থান নিয়েছে সেটা রাজনৈতিক কারণে নিয়েছে বলে মনে করছে না সরকার। বিশেষ করে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে যুক্তরাজ্যের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে এখন বিশেষ মনোযোগী সরকার। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তবে বিমানবন্দর নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকারের নিরাপত্তাবিষয়ক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পরই দেশটির মনোভাব বোঝা সম্ভব হবে বলে মনে করছে সরকার।
×