ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-পাকিস্তান মহারণ আজ ইডেনে

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১৬ মার্চ ২০১৬

বাংলাদেশ-পাকিস্তান মহারণ আজ ইডেনে

মিথুন আশরাফ, কলকাতা থেকে ॥ কলকাতার সঙ্গে বাংলাদেশের কোন পার্থক্য নেই। এখানকার মানুষ, ভাষা, ট্রাফিক জ্যাম- সবই এক রকম। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী হচ্ছে কলকাতা। সেই শহরের আবহাওয়াও বাংলাদেশের মতোই। পার্থক্য শুধু একটি জায়গাতেই। বাংলাদেশে শুধু বিশ্বকাপ নয়, কোন টুর্নামেন্ট হলেই ক্রিকেটপ্রেমীদের সে কী উত্তেজনা দেখা যায়। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে শুরু করে কোথাও কোন আলোড়ন নেই। বিশ্বকাপ নিয়ে নেই কোন উত্তেজনা, উত্তাপ। যেন এখানে বিশ্বকাপের ম্যাচই হচ্ছে না। অথচ এখানেই আজ বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচ হবে। ইডেন গার্ডেনে বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ৩টায় ম্যাচটি শুরু হবে। যে ম্যাচটি আসলে বাংলাদেশেই খেলবে মাশরাফিরা, তা বললেও ভুল হবে না। আর সমর্থন সেটা তো সব বাংলাদেশের পক্ষেই থাকবে। তাও নিশ্চিত করে বলে দেয়া যায়। ‘সুপার টেনে’র ম্যাচ এটি। পাকিস্তান সরাসরি এ পর্বে খেলছে। টি২০ র‌্যাঙ্কিংয়ে আট দলের একটি হওয়ায় পাকিস্তান সরাসরি খেলছে। আর বাংলাদেশকে বাছাইপর্ব খেলতে হয়েছে। হল্যান্ডকে হারানোর পর আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে বৃষ্টির জন্য টাই হয়েছে। ধর্মশালায় শেষ ম্যাচটিতে ওমানকে হারিয়ে দিয়ে ‘সুপার টেনে’ খেলা নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। এবার ‘সুপার টেনে’ শুরুতেই পাকিস্তানকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাচ্ছে বাংলাদেশ। যে ম্যাচটিকে ঘিরে উত্তেজনা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। তা বোঝাই যাচ্ছে। কিন্তু কলকাতায় ম্যাচকে ঘিরে নেই কোন উত্তাপ! শুধু ইডেন গার্ডেনে ঢুকলে খানিকটা বোঝা যায়, কলকাতায় বিশ্বকাপের ম্যাচ হবে। এছাড়া কোথাও কিছু বোঝার উপায় নেই। ইডেন গার্ডেনে যাওয়ার পথেও বিশ্বকাপের কোন কিছুই নেই। নেই ব্যানার। নেই কোন ক্রিকেটারেরও ছবিযুক্ত ব্যানার। তবে একজনের ছবি ঠিকই আছে। তিনি জগমোহন ডালমিয়া। যিনি এখন আর বেঁচে নেই। তবে টি২০ বিশ্বকাপের খেলা হবে ইডেন গার্ডেনে, সেই আশা যে তিনি দেখেছেন, তার সম্মানে শুধু ডালমিয়ারই ছবি সংবলিত ব্যানার দেখা গেছে। আর তাই আজ ৬৬ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার স্টেডিয়ামে দর্শকে ভরপুর থাকবে, সেই প্রত্যাশাও করা যাচ্ছে না। তবে যত দর্শকই হোক, ভারতের চিরশত্রু পাকিস্তানের বিপক্ষে যে সেøাগান সবার মুখে শোনা যাবে তা নিশ্চিত। এটিই কী বাংলাদেশের জন্য বাড়তি পাওয়া নয়? ইডেন গার্ডেনে কখনই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে বর্তমান দলের কেউই খেলেননি। প্রথমবার যখন ক্রিকেটাররা খেলতে নামবেন, তখন তাদের পক্ষেই থাকবে সব সমর্থন। এটি অনেক বড় পাওয়া ম্যাচের আগেই হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাই তো বলেছিলেন, ‘দর্শকরাই আমাদের শক্তি। তারা যেভাবে আমাদের সমর্থন দিয়ে যান, তা থেকে প্রেরণা মিলে। ভাল খেলার প্রেরণা পাই আমরা।’ সেই প্রেরণায় প্রতিপক্ষকে তো দুমড়ে মুছড়েও দেন মাশরাফিরা। আজও তেমন প্রেরণাই মাশরাফিরা পাবেন। ইডেন গার্ডেন যেন এক টুকরো বাংলাদেশই হয়ে যাবে। সেই প্রেরণায় কী তাহলে আজও পাকিস্তানকে হারানো সম্ভব? মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছেন, ‘আমাদের সেরা প্রস্তুতি নেয়ার চেষ্টা করছি। অবশ্যই আমরা জিততে চাই। ভাল খেলতে চাই। কিন্তু ফেবারিট কথাটা আমরা অবশ্যই আনতে চাই না। টি২০ খেলায় কোন ফেবারিট নেই। যদি ইতিহাস দেখেন টি২০তে পাকিস্তান অনেক ভাল দল আমাদের থেকে। কিন্তু শেষ দুটি ম্যাচ (বাংলাদেশ জিতেছে) দেখেন। তাহলে দেখবেন আমরা ওদের থেকে ভাল ক্রিকেট খেলতে পারব।’ এ ভাল ক্রিকেট খেলতে এবার একাদশে যোগ হতে পারেন পেসার মুস্তাফিজুর রহমানও। ইনজুরির জন্য বাছাইপর্ব খেলেননি। বাংলাদেশ দল যেন মুস্তাফিজকে এ ম্যাচের জন্যই আগলে রেখেছেন। এবার খোলস থেকে বের হবেন মুস্তাফিজ। আর স্বাভাবিকভাবেই পাকিস্তানকে যেমন ক্যারিয়ারের প্রথম ম্যাচেই ধসিয়ে দিয়েছিলেন, সেই রকম কিছুই মিলবে। মিলে গেলেই বাংলাদেশের জয়ধ্বনি ইডেনে বাজবে। বাংলাদেশের বিপক্ষে কখনই ভারতের মাটিতে খেলেনি পাকিস্তান। এবার প্রথম যখন খেলবে, তখন খেলাটি হচ্ছে ইডেন গার্ডেনেই। যে মাঠে খেলার জন্য রোমাঞ্চিত বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা। তবে ইডেন গার্ডেনে পাকিস্তান এত বেশি ম্যাচ খেলেছে যে তাদের কাছে সেই রোমাঞ্চ নেই। এখন শুধু ম্যাচ জেতার কথাই ভাবছে তারা। এশিয়া কাপে ব্যর্থ হয়েছে। যদি টি২০ বিশ্বকাপেও কিছু করে দেখাতে না পারে, তাহলে পাকিস্তান ক্রিকেটের বিপদের সময় ঘনিয়ে আসবে। তাই পাকিস্তান কোচ ওয়াকার ইউনুস মনে করেন, ‘এশিয়া কাপে বাংলাদেশের কাছে হেরেছি। সেখানে ভিন্ন উইকেট ছিল। আমরা এবার বাংলাদেশকে শক্তিশালীভাবেই হারাব বলে বিশ্বাস করি।’ ওয়াকারের সেই বিশ্বাস আসছে, ইডেন গার্ডেনের উইকেট ব্যাটিং নির্ভর বলেই। সেই সঙ্গে স্পিন নির্ভর বলে। যেখানে পেসারদের ভুগতে হবে। ওয়াকার মনে করছেন, ব্যাটিং দিয়েই বাংলাদেশকে হারাবেন। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরাও যে এখন ফর্মে আছে, তা বোধ হয় ভুলেই গেছেন ওয়াকার। আর পেসাররা যদি উইকেট থেকে সহায়তা না পায় তাহলে তো মোহাম্মদ আমির কিছুই করতে পারার কথা না। উল্টো ব্যাটিংয়ে তামিম, সৌম্য, সাব্বির, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহরাই ঝলক দেখানোর কথা। আর স্পিনে সাকিব তো একাই যথেষ্ট! ব্যাটিংয়ে তখন যতই শারজিল খান, শেহজাদ, হাফিজ, সরফরাজ, উমর আকমল, শহীদ আফ্রিদিদের নিয়ে ভরসায় থাকুক ওয়াকার, কাজ কী হবে? আফ্রিদি তো আবার জ্বরের জন্য মঙ্গলবার অনুশীলনই করতে পারেননি। ম্যাচ শুরুর আগেই তো তাহলে পাকিস্তান শিবিরে বিপদের পূর্বাভাস! বাংলাদেশ-পাকিস্তান মহারণে তো তাহলে বাংলাদেশেরই জেতার সুযোগ!
×