ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

১৫ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার ঋণের ছাড় চলতি মাসেই

তথ্যপ্রযুক্তিতে ৫ বছরে পাঁচ শ’ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে চীন

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ১৬ মার্চ ২০১৬

তথ্যপ্রযুক্তিতে ৫ বছরে পাঁচ শ’ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে চীন

ফিরোজ মান্না ॥ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে চীনের এক্সিম ব্যাংকের দেয়া ১৫৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহযোগিতা আগামী মাসেই ছাড় হচ্ছে। এই অর্থ ছাড় হলেই ‘টিয়ার-৪ ডেটা সেন্টার’ স্থাপনের জন্য হাতে নেয়া প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের ‘ইনফো সরকার-৩’, ‘এস্টাবলিশিং ডিজিটাল কানেকটিভিটি’ নামের প্রকল্পের জন্য ‘লোন এগ্রিমেন্টও’ অনুমোদন দিয়েছে চীন কর্তৃপক্ষ। ডিজিটাল ল্যাব স্থাপনেও চীন আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগে চায়না এক্সিম ব্যাংক এ বছরেই আরও কয়েকটি প্রকল্পে ঋণ সহযোগিতা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। ঋণ সহযোগিতার বাইরে চীন আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতে ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এ তথ্য জানিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, এ বছরের জানুয়ারি মাসে চীন সফরকালে চীনের টেলিকম কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। চায়না কর্তৃপক্ষের কাছে দেশে তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের কথা তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত উন্নয়নে চীন কর্তৃপক্ষ এই সেক্টরে বিনিয়োগের আগ্রহের কথা জানিয়েছে। তারা ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এছাড়া তাদের দেয়া প্রতিশ্রুত ঋণও দ্রুত ছাড় করার আশ্বাস দিয়েছে। আগামী মার্চে চীনের দেয়া ঋণের অর্থ ছাড় হবে। বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বেশ কিছু উন্নয়ন চিত্রের মধ্যে ছিল, ফাইবার অপটিক্যাল কেবলের মাধ্যমে ১৮ হাজার ১৩২টি সরকারী সংস্থা অবিভক্ত নেটওয়ার্কে মধ্যে নিয়ে আসা। প্রযুক্তি খাতে দক্ষ পেশাজীবী তৈরির জন্য ৩৪ হাজার তরুণ তরুণীকে প্রশিক্ষণ দেয়ার কাজ চলছে। এই প্রশিক্ষণের আওতায় এ পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজারের বেশি তথ্য প্রযুক্তিবিদ তৈরি করা হয়েছে। তারা বিশ্ব মানের সনদ পেয়েছেন। এই সনদ বিশ্বের সব দেশেই সমান গুরুত্ব বহন করবে। ২০১৬ সালের মধ্যে সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়ন পরিষদ ফাইবার অপটিক্যাল কেবলের আওতায় চলে আসবে। ২০১৭ সালের মধ্যে দেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট মহাকাশে স্থাপন করা হবে। তথ্য প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে চীন সরকার ঋণ সহযোগিতা দেয়ার জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। বাংলা গভঃ নেট ও ইনফো সরকার’ প্রকল্পের আওতায় দেশের প্রায় সব উপজেলা বর্তমানে ফাইবার অপটিক্যাল কেবলে সংযুক্ত হয়েছে। ফলে দেশের ১৮ হাজার ১৩২টি সরকারী সংস্থ অচিরেই অবিভক্ত নেটওয়ার্কের আওতায় চলে আসবে। এছাড়া কম্পিউটার কাউন্সিলের সঙ্গে সচিবালয়ের অপটিক্যাল ফাইবার কেবল সংযোগ স্থাপন হয়েছে। সচিবালয়ের সঙ্গে কম্পিউটার কাউন্সিল দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন করতে পারছে। এরমধ্য দিয়ে সচিবালয়ে উচ্চ গতির নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা পাচ্ছে। দেয়া হয়েছে ওয়াইফাই সুবিধাও। তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবী হিসেবে গড়ে তোলার কার্যক্রম চলছে। এরমধ্যে কয়েকটি ব্যাচ প্রশিক্ষণ শেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে অবদান রাখছে। এর মধ্যে ২০ হাজার জনকে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ, ১০ হাজার জনকে টপ আইটি প্রশিক্ষণ এবং সাড়ে চার হাজার জনকে ফাস্ট ট্র্যাক ফিউচার লিডার হিসেবে গড়ে তোলা হবে। হাইটেক পার্কের অন্তর্ভুক্ত স্টিল এনহান্সমেন্ট কর্মসূচীর আওতায় ২ হাজার ৪৫০ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এক হাজার জনের প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে, বাকিদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া লার্নিং আর্নিং প্রকল্পের আওতায় আরও ২৬ হাজার জনকে ফ্রি ল্যান্সিং প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। চীনের ঋণ সহযোগিতার টাকা পেলে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আরও বড় ধরনের পরিবর্তন আনা সম্ভব হবে। তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, ‘ন্যাশনাল কল সেন্টারের মাধ্যমে মানুষকে সেবা দেয়া শুরু হয়েছে। দেশের এই কলসেন্টারে একটি নাম্বারে কল করে সেবা নিতে পারছেন। এদিকে, সরকার আইটি শিল্পের উন্নয়ন এবং রফতানি বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। এ জন্য সরকারী ও বেসরকারী সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি শক্তিশালী যৌথ টাক্সফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রি এ্যান্ড সার্ভিসেস (বেসিস), বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি, শীর্ষ পাঁচটি আইটি প্রতিনিধির সমন্বয়ে এ যৌথ টাক্সফোর্স গঠনের কাজ চলছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে আইসিটি রফতানি ৫ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যাওয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন। এ লক্ষ্য পূরণে সংশ্লিষ্ট সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের নিয়ে যৌথ টাক্সফোর্স গঠনসহ আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে। যৌথ টাক্সফোর্স স্থানীয় আইটি শিল্পকে বিদেশে তুলে ধরা, আইটি পণ্য বাজারজাত করাসহ রফতানি বৃদ্ধিতে করণীয় ও উদ্যোগ বাস্তবায়নে সহযোগিতা করবে। সভায় দেশের আইটি সক্ষম সেবা (আইটিইএস) শিল্প প্রসারে ও দেশীয় সফটওয়্যার কেনার বিষয়ে প্রকিউরমেন্ট রুলস সংশোধণীসহ রুলস এ্যান্ড রেগুলেশন নিয়ে আরেকটি আলাদা কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত হয়।
×